বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রা চট্টগ্রামে। বৃহস্পতিবার। ছবি: বাচ্চু বড়ুয়া
বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় রমনার বটমূলে শুরু হল নতুন বছরের আবাহন, সমবেত রবীন্দ্রসঙ্গীত— মন জাগো মঙ্গললোকে।
পদ্মশ্রী সন্জীদা খাতুনের নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের এই সূচনা সঙ্গীত যেন বাংলাদেশ জুড়ে নববর্ষের অসাম্প্রদায়িক উৎসব পালনেরও উদ্বোধনী। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে চৈত্র সংক্রান্তি হলেও বাংলাদেশে বৈশাখের পয়লা দিন— সৌজন্যে বাংলা ক্যালেন্ডার সংস্কার। হুসেইন মহম্মদ এরশাদের আমলে বাংলা ক্যালেন্ডারকে ইংরেজির সঙ্গে সমন্বিত করায় ফি বছর এপ্রিলের ১৪ তারিখেই বৈশাখ কড়া নাড়ে সে দেশে।
অতিমারির কারণে পর পর দু’বছর বাংলাদেশ বর্ষবরণের সুযোগ পায়নি। এই বারে বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। ছায়ানট-এর সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা বলেন, “দু’বছর কারাবন্দির মত অবস্থা ছিল। সেই অবস্থা থেকে একটা স্বস্তির অবস্থায় এসেছি। নতুন করে আবার বটমূলে ফিরতে পেরেছি। সবাইকে নিয়ে আজকে যে প্রাণের মেলা হয়েছে, আমি মনে করি, মানুষের মনের ভেতরের আনন্দের কথা সঞ্চারিত হয়েছে। তাই এই বৈশাখের আহ্বান— নব আনন্দে জাগো!”
সাতক্ষীরা থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী থেকে সিলেট, বরিশাল এ দিন মেতে উঠেছিল বাংলা নববর্ষের আবাহনে। প্রভাতী ঢাকায় লাল-সাদা শাড়ি পরা মেয়েদের ঢল, মাথায় ফুলের মুকুট। ছেলেদের পরনে উজ্জ্বল রঙের পাঞ্জাবি-পাজামা। শিশুরা উড়ে বেড়াচ্ছে রমনার খোলা ময়দানে। শাহবাগের মোড়ে রাত থাকতেই ফুলের সব দোকান খোলা। কোথাও কোথাও পান্তা আর ইলিশ ভাজা বিকোচ্ছে মাটির সরায়। বর্ষবরণের প্রস্তুতি শুরু হয় বহু আগে থেকে। পাড়ায় পাড়ায় সন্ধ্যা হলেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া। শিল্পীরা লেগে পড়েন শোভাযাত্রাকে ঝলমলে করে তোলার লক্ষ্যে মুখোশ ও অন্য শিল্পকর্ম নির্মাণে। মৌলবাদীরা নববর্ষ পালনকে বিধর্মী সংস্কৃতির অঙ্গ বলে ফতোয়া দেওয়ার পরে এই উৎসব পালন তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। বেলা গড়ালে ঢাকার রাস্তায় মঙ্গল শোভাযাত্রা। ইতিমধ্যেই ইউনেস্কোর ‘ওয়র্ল্ড হেরিটেজ’-র তালিকায় উঠেছে চারুকলা অনুষদের শিল্পীদের নেতৃত্বে এই অনন্য অনুষ্ঠান। মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে তার জন্মস্থান যশোরেও। সঙ্গে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল সর্বত্র। চট্টগ্রামের ডিসি হিলসেও সকাল থেকে বর্ষবরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। চট্টগ্রাম চারুকলা অনুষদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে সেখানেও নজরকাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রা।
নববর্ষে সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এমন এক বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব, যেখানে বৈষম্য থাকবে না, মানুষে মানুষে থাকবে না ভেদাভেদ, থাকবে না ধর্মে-ধর্মে বিভেদ। সৌহার্দ্য আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আসুন বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করি।”