বাঁ দিকে, শেখ হাসিনা। ডান দিকে, বাংলাদেশের সেনা প্রধান ওয়াকার উজ জামান। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বাংলাদেশের আন্দোলনকারী ছাত্রদের উদ্দেশে সেনাপ্রধানের বার্তা, ‘‘আন্দোলনরত ছাত্ররা দয়া করে ঘরে ফিরে যান। এখন ছাত্রদের কাজ হচ্ছে শান্ত হওয়া এবং আমাদের সাহায্য করা।’’
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে গোলাগুলি না চালানোর আদেশ দিয়েছেন বলে জানালেন সেনাপ্রধান। একইসঙ্গে বললেন, ‘‘দেশে শান্তি ফিরে এলে কার্ফু এবং জরুরি অবস্থাও থাকবে না। ’’ সেনাপ্রধানের কথায়, ‘‘আমি নিশ্চিত, দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সব বিশৃঙ্খলা এখনও চলছে, তা আমার এই বক্তব্যের পর শান্ত হয়ে যাবে।’’
বাংলাদেশের জনতাকে সেনাপ্রধান বললেন, ‘‘আপনাদের সবার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা। তা হলে আমরা এই পরিস্থিতি সহজে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।’’
সেনাপ্রধান জানালেন, সোমবারই সরকার গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাচ্ছেন তাঁরা। কারণ তাঁদের হাতে নষ্ট করার মতো সময় নেই। সেনাপ্রধান বলেন, ‘‘সোমবারই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করব আমরা।’’
বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের ডাকা বৈঠকে কারা ছিলেন, সেখানে কী কী হল, তার বিশদ জানালেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান। তিনি বললেন, জামাত, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ছিলেন। তাঁরা এক যোগে একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করার। এ ছাড়া ওই বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধান আসিফ নজরুল ছিলেন। তিনি আমার সামনেই ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে একটি সুন্দর বার্তা দিয়েছেন। ওঁর কথা সবাই শোনে, শ্রদ্ধা করে। ছাত্রছাত্রীরা ওঁর কথা শুনেছেন। তাঁরা এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চলে আসবে। তবে সেনা প্রধান একই সঙ্গে জানিয়েছেন ওই বৈঠকে আওয়ামি লিগের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না।
বাংলাদেশের জনতাকে সেনা প্রধান বললেন, ‘‘আমি সমস্ত দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনারা আমাকে সাহায্য করুন।’’
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। আপনারা শান্তি-শৃঙ্খলার পথে ফিরে আসুন। কারণ তা না হলে আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। মানুষ মারা যাচ্ছেন।’’
বাংলাদেশের জনতাকে সংঘাত থেকে বিরত হতে বলে সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান বললেন, ‘‘সংঘাতের মাধ্যমে আর নতুন কিছু আমরা পাব না। প্রতিটা হত্যার বিচার করা হবে। প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে।’’
বাংলাদেশের জনতার কাছে সেনাপ্রধানের আর্জি, ‘‘ভাঙচুর, মারামারি, সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকুন। ধৈর্য হারাবেন না। আমি নিশ্চিত, আপনারা যদি আমাদের কথামতো চলেন, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তা হলে আমরা একটা সুন্দর পরিণতির দিকে এগোতে পারব।’’
সেনা প্রধান বললেন, ‘‘আপনাদের আমি কথা দিচ্ছি। আপনারা এখনই আশাহত হবেন না। আপনাদের যত দাবি আছে, তা আমরা পূরণ করব এবং দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব।’’
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বললেন, ‘‘আমরা এর আগে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিশিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করব। আপনারা সেনাবাহিনীর উপর আস্থা রাখুন। সশস্ত্র বাহিনীর উপর আস্থা রাখুন আমরা সমস্ত দায় দায়িত্ব নিচ্ছি।’’
বাংলাদেশের জনতার উদ্দেশে সেনাপ্রধানের আর্জি আপনারা শান্তি বজায় রাখুন। ভাঙচুর করবেন না। আমি নির্দেশ দিয়েছি পুলিশ বা সেনাবাহিনী গুলি চালাবে না।
প্রতিটি হত্যার বিচার হবে জানালেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান। তবে একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের জনতাকে বলেছেন হিংসা পরিহার করে সংযত হওয়ার এবং শান্তি বজায় রাখার।
বাংলাদেশের সেনা প্রধান বললেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ চালাব’’। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে।
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার আগে বাংলাদেশের বিশিষ্টজন এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনা প্রধান ওয়াকার উজ জামান। ওই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
হাসিনা ঢাকা ছাড়ার আগেই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।