জাকির নাইকের চ্যানেল বন্ধ করল ঢাকা

জঙ্গিদের অনুপ্রাণিত করার কারণ দেখিয়ে দুবাই থেকে সম্প্রচার করা ‘পিস টিভি’ চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হল বাংলাদেশে। আজ সোমবার চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ জারি করল বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রক। বিতর্কিত ধর্ম প্রচারক জাকির নাইকের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন এই চ্যানেলটির মালিক।

Advertisement

কুদ্দুস আফ্রাদ

ঢাকা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৯
Share:

জঙ্গিদের অনুপ্রাণিত করার কারণ দেখিয়ে দুবাই থেকে সম্প্রচার করা ‘পিস টিভি’ চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হল বাংলাদেশে। আজ সোমবার চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ জারি করল বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রক। বিতর্কিত ধর্ম প্রচারক জাকির নাইকের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন এই চ্যানেলটির মালিক।

Advertisement

ইদের ন’দিন ছুটির পরে রবিবার কাজে ফিরেছে বাংলাদেশ। গুলশন ও কিশোরগঞ্জে পর পর দু’টি জঙ্গি হানার পরিপ্রেক্ষিতে রবিবারই বৈঠকে বসেছিল বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মন্ত্রিসভার কমিটি। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, দেশের সর্বত্র জাকির নাইকের টিভি চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করা হবে। আজ তথ্য মন্ত্রকের জারি করা নির্দেশে বলা হয়েছে, “ক্যাবিনেট কমিটির সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে, ডাউনলিঙ্ক শর্ত ভাঙার জন্য পিস টিভি চ্যানেলের ডাউনলিঙ্কের অনুমতি বাতিল করা হল”।

রবিবার মন্ত্রিসভার বিশেষ কমিটির বৈঠকের পরে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন— জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় অভিযান তো চলবেই, একই সঙ্গে বিশেষ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার একটি হল, জাকির নাইকের চ্যানেলটি বন্ধ করা। তিনি জানান, গত বছরই বেশ কিছু আলেম সরকারকে জানিয়েছিলেন যে এই চ্যানেলে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করে জঙ্গিবাদে ইন্ধন জোগানো হচ্ছে। গুলশনে হামলার পরে নিহত জঙ্গিদের অভিভাকরাও জানিয়েছেন, এই চ্যানেলে বিতর্কিত ধর্ম প্রচারকের বক্তৃতা শুনেই তরুণেরা বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই চ্যানেলটিকে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। এ ছাড়া প্রতিটি মসজিদে সন্ত্রাসের নিন্দা ও শান্তির পক্ষে প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ইমামদের। আমু বলেন, ‘‘ধর্মের নামে সন্ত্রাস চালিয়ে, মানুষ খুন করে আসলে যে ধর্মকেই আঘাত করা হচ্ছে— আলেমদের সেটাই বলতে বলছি আমরা।’’ মসজিদগুলিতে জুম্মার নমাজের পরে ইমামরা যে খুতবা বা বাণী দেন, তার ওপরও নজর রাখা হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে খুতবার সময়ে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করার অভিযোগ পৌঁছেছে সরকারের কাছে।

Advertisement

এক সপ্তাহের ব্যবধানে গুলশনের রেস্তোরাঁ ও কিশোরগঞ্জে ইদের জমায়েতের বাইরে দু’টি জঙ্গি হামলার পরে পুলিশ ও র‌্যাবকে আরও আধুনিক ও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্তও গতকাল নিয়েছে মন্ত্রিসভার কমিটি। আরও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও কেনা হবে।

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঘুরে এসে বাংলাদেশ পুলিশের আইজি একেএম শহিদুল হক জানিয়েছেন, ইমাম ফরিদুদ্দিন মাসুদকে হত্যার পাশাপাশি ইদের জমায়েতে বোমা হামলার পরিকল্পনাও ছিল জঙ্গিদের। পুলিশ সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করে ইমামকে হত্যার ছক বানচাল করে দেওয়ায় পরের হামলাটি না-করেই গা-ঢাকা দেয় জঙ্গিরা। আইজি জানান, লাখ চারেক মানুষের জমায়েতে বোমা ছুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারলে পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ২০ হাজার মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।

আইজি জানান— গুলশন ও কিশোরগঞ্জে দু’টি হামলাই যে জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) জঙ্গিরা চালিয়েছে, এ বিষয়টি তদন্তে পরিষ্কার হয়েছে। দু’টি ঘটনায় যে পিস্তল ব্যবহৃত হয়েছে, তা একই দেশে তৈরি ও একই ব্র্যান্ডের। হামলার পিছনে আইএস রয়েছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে আইজি বলেন, ‘‘কোথাও কিছু হলেই তো আইএস-এর নামে দায় স্বীকার করা হয়। ঘটনা হল, এরা সবাই জঙ্গি।’’ ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিঞা জানিয়েছেন, জঙ্গি হানার তদন্তে আমেরিকা, ভারত ও সিঙ্গাপুরের প্রযুক্তি সহায়তা নিচ্ছেন তাঁরা। প্রধানত উদ্ধার হওয়া অস্ত্র-বিস্ফোরকের পরীক্ষা ও জঙ্গিদের মৃতদেহের ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য এই সহযোগিতা নিচ্ছে পুলিশের জঙ্গি-বিরোধী বিশেষ শাখা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement