International News

২১ বছর আগে কেন নিখোঁজ হয়েছিল মেয়ে? সব শুনে শিউরে উঠলেন মা

বাদামি চুলের হাসিখুশি কিশোরী মেয়ের ঘরে ফেরার আশায় সময় কাটে সিন্থিয়া হাগ-এর। ভাবেন, কখনও না কখনও ঠিক ফিরে আসবে তাঁর মেয়ে ক্রিস্টাল। প্রায় দু’দশক আগে নিখোঁজ হয়েছিল সে। তার পর এক দিন হঠাৎই ফিরল ক্রিস্টাল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বাল্টিমোর শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৯ ১৪:০২
Share:

২১ বছর পর মায়ের কাছে কেন ফিরে এলেন ক্রিস্টাল সন্ডার্স? উত্তর শুনে হতবাক তাঁর মা! ছবি: সংগৃহীত।

ঠিক কুড়ি বছর দশ মাস দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। ‘এখনও ফিরে এল না সে।’ নিজের ঘরে বসে দিনরাত একই কথা ভাবেন মা।

Advertisement

বাদামি চুলের হাসিখুশি কিশোরী মেয়ের ঘরে ফেরার আশায় সময় কাটে সিন্থিয়া হাগ-এর। ভাবেন, কখনও না কখনও ঠিক ফিরে আসবে তাঁর মেয়ে ক্রিস্টাল। প্রায় দু’দশক আগে নিখোঁজ হয়েছিল সে। তার পর এক দিন হঠাৎই ফিরল ক্রিস্টাল। ‘কেন ফিরে এল? নিখোঁজই বা হয়েছিল কেন? এত দিন কোথায় ছিল?’ একরাশ প্রশ্ন ঘোরাফেরা করতে থাকে সিন্থিয়ার মনে।

আমেরিকার বাল্টিমোরের সারিবাঁধা ঘুপচি ঘরের বাইরে প্রায় একুশ বছর পা রাখেননি সিন্থিয়া। যদি তাঁর ক্রিস্টাল ফিরে আসে! সেই অপেক্ষায় বসে থাকেন তিনি।

Advertisement

সারা দুনিয়ার খবরাখবর সম্পর্কিত এই তথ্যগুলি জানেন কি?

গত বছরের মার্চে হঠাৎই সিন্থিয়ার ফোন বেজে উঠল। ফোনের অন্য প্রান্তে তাঁর আর এক মেয়ে বিয়াঙ্কা ডেভিস। মাকে জানাল, ফেসবুকে একটা মেসেজ পেয়েছে সে। আর সেটা পাঠিয়েছে ক্রিস্টাল।

ক্রিস্টালের খোঁজ মিলতেই তড়িঘড়ি গাড়ি নিয়ে তাঁর বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিলেন বিয়াঙ্কা। উত্তর হার্লেমে থাকেন ক্রিস্টাল। সেখান থেকে তাঁকে বাল্টিমোরের বাড়িতে নিয়ে আসেন বিয়াঙ্কা।

আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে বান্ধবীকে বিয়ের প্রস্তাব, গ্রেফতার যুবক-যুবতী

বহু বছর পর ফের মেয়ের সামনাসামনি সিন্থিয়া। তাঁর সেই ছোট্ট মেয়েটির চুল এখন ছোট করে ছাঁটা। কী ভাবে যেন স্প্যানিশ ভাষাটা রপ্ত করেছে। তবে সে আর ক্রিস্টাল হাগ নন। ক্রিস্টাল সন্ডার্স! বয়স হওয়ার কথা ছিল পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি। তবে নিজের বয়স জানাচ্ছেন ৪৪। তা সে যা-ই হোক না কেন, মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে মেতে উঠলেন সিন্থিয়া। ক্রিস্টালের ফিরে আসার খবর জানতে পেরে আনন্দে মেতে উঠেছিলেন পশ্চিম বাল্টিমোরে সিন্থিয়ার পড়শিরাও।

সিন্থিয়ার মনে পড়ে যায় সেই দিনটার কথা, যে দিন তাঁর মেয়েকে শেষ বারের মতো দেখেছিলেন। সে দিনটা ছিল শনিবার। ২৬ এপ্রিল, ১৯৯৭। স্থানীয় একটি গ্রসারি স্টোরে ক্যাশিয়ারের কাজ করতেন সিন্থিয়া। সে দিন কাজে যাওয়ার আগে মেয়েকে বলেছিলেন, “বাড়ির আশপাশেই থেকো।” এর পর কাজ থেকে ফিরে আর মেয়েকে খুঁজে পাননি তিনি। ‘ক্রিস্টালকে কি কেউ কিডন্যাপ করল? সে কি পালিয়ে গেল?’ আশঙ্কাগুলো মনে এলেও তা মানতে চাননি প্রথমটায়। পরে ভেবেছেন, হয়তো তাঁর মেয়েকে মেরে ফেলেছে কেউ বা সে মরেই গিয়েছে। তা-ও কোনও ভাবে ক্রিস্টালের ফেরার আশা ছাড়েননি সিন্থিয়া। বহু বার রাস্তাঘাটে মেয়েকে খুঁজেছেন। কিন্তু তার খোঁজ মেলেনি। পুলিশের খাতাতেও ক্রিস্টালের তদন্ত রিপোর্টে ধুলো জমতে থাকে।

আরও পড়ুন: বিমানবন্দরে পড়ে রইল শিশু, মাঝ আকাশে মা, হূলস্থূল কাণ্ড সৌদিতে

এর পর হঠাৎই ক্রিস্টাল ফিরে এল। কিন্তু কেন ফিরে এলেন ক্রিস্টাল? কেনই বা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন? সিন্থিয়ার মনে ঘোরাফেরা করে প্রশ্নগুলো। বাকি তিন ভাইবোন বা পড়শি— সকলের সঙ্গেই তো বেশ সহজ সম্পর্ক ছিল ক্রিস্টালের। এর উত্তরটা পেতে গেলে ফিরে তাকাতে হবে বহু বছর আগে। সিন্থিয়া যেমনটা ভাবতেন, তেমনটা একেবারেই ছিল না ক্রিস্টাল। ভাইবোন-স্কুলের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে তার মেলামেশাটা মোটেও সহজ ছিল না। আসলে মানসিক ভাবে তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে ছিল সে। হাসিখুশি মিশুকে ক্রিস্টালের জীবনের ভয়ঙ্কর বাস্তবটা আর কেউ জানতেন না। তাঁর মা-ও নন!

আরও পড়ুন: ২ মিনিট লেট, তাতেই বেঁচে গেলেন ইথিয়োপিয়ার বিমানের টিকিট কাটা যাত্রী

সিন্থিয়া ফিরে যান তার ন’বছর বয়সে। প্রথম বার যখন তাকে এক পড়শি ধর্ষণ করে। এর পর ফের এক বার। এর পর বার বার। পরের বছরগুলোতে সেটাই যেন এক প্রকারের নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। এক সময় নাবালিকা ক্রিস্টাল কিশোরী হয়। তবে সেই নিয়মে ছেদ পড়ে না। ক্রিস্টাল কাউকে কিছু বলতে পারে না। এক সময় ভাবতে শুরু করে, এ সব কথা তাঁর মা জানে। এত বছর পর মায়ের মুখোমুখি হয়ে সে কথা জানায় ক্রিস্টাল। “কোনও মা এমনটা জেনে চুপ করে থাকতে পারে?” শিউরে উঠে বলেন সিন্থিয়া।

এপ্রিলে সেই শনিবার মায়ের কথা না শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল ক্রিস্টাল। বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব করতে করতে রাত ১২টা বেজে গিয়েছিল। “ব্যস! আর বাড়ি ফিরব না আমি।” হঠাৎই মনস্থির করে ফেলে সে।

আরও পড়ুন: নয়াদিল্লিতে বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন গম্ভীর? গৌতমের নয়া ইনিংস নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে

বাল্টিমোর থেকে সে রাতেই নিউ ইয়র্কের বাসে উঠে পড়ে সে। ভোরবেলা নিউ ইয়র্কের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে। সঙ্গে টাকাপয়সা নেই, আশ্রয়হীন। তবে ক্রিস্টালের ভয়ডরও ছিল না। নিউ ইয়র্কেই রাস্তায় ঘুমোত সে। এর বেশ কিছু বছর পর এক দিন আপার ম্যানহাটনের মতো অভিজাত জায়গায় পৌঁছে যান। নতুন পরিচয় নেন। ২৩ বছরের তরুণী আর ক্রিস্টাল হাগ নন, ক্রিস্টাল সন্ডার্স! নিজের জন্য কেন এই নাম বাছাই করেছিলেন, তা আর মনে নেই ক্রিস্টালের। তবে মনে আছে, বেঁচে থাকার জন্য লোকজনের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু করেছেন। ডমিনিকান পাড়ায় থাকার সময় এক বার অন্তঃসত্ত্বাও হয়ে পড়েন। নিউ ইয়র্কে আইনের ফাঁক গলে মেডিক্যাল কার্ডও বার করে নেন। সেই সঙ্গে ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স। এর পর বহু বছর গড়িয়েছে। চার সন্তানের মা হয়েছেন ক্রিস্টাল। পড়শিদের অনেককেই নিজের দাদু-দিদা, ভাই-বোন হিসাবে ফেসবুকে পরিচয় দিতে শুরু করেছেন।

২০১৪-র ২৯ জানুয়ারি, যখন তাঁর বয়স আসলে ৩১, সে সময় ইনস্টাগ্রামে কেক নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন, “হ্যাপি ফর্টিয়েথ টু মি!!!” সে সময় অবশ্য ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ জুটিয়ে নিয়েছেন। তবে নিজের বড়সড় চেহারার জন্য বয়সটা বাড়িয়ে বলতেন সকলকে।

এত কিছুর মধ্যে ফেসবুকে নিজের মা-ভাইবোনেদের ছবি দেখতে ভুলতেন না ক্রিস্টাল। তাঁর ২০ বছরের ছেলে বার বার ক্রিস্টালের আসল পরিবারের কথা জানতে চাইতেন। অবশেষে এক দিন নিজের আসল পরিবারের কাছেই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ক্রিস্টাল।

মেয়ের সব কথা শুনে একেবারে স্তম্ভিত সিন্থিয়া। তবে এত বছর কেটে গেলেও মায়ের প্রতি টান কমেনি ক্রিস্টালের। তাই ফিরে এসেছেন তিনি।

ক্রিস্টালের ফিরে আসার পর এক বছর গড়িয়ে গিয়েছে। বাল্টিমোরে এক আত্মীয়ের সঙ্গেই থাকেন ক্রিস্টাল। আর সিন্থিয়া এখন তাঁর ঘর ছেড়ে বাইরে বার হন। মেয়ে ঘরে ফিরে এসেছে যে! আর অপেক্ষা করতে হবে না তাঁকে। তবে একটাই আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে ৬১ বছরের সিন্থিয়ার মনে, “যদি মেয়ের আরও কাছের হতে পারতাম!”

(সারাবিশ্বের সেরা সব খবরবাংলায় পড়তে চোখ রাখতে পড়ুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement