চাঁদের মাটিতে জাপানের চন্দ্রযান ‘স্লিম’। ছবি: পিটিআই।
মাথা নীচে, পা উপরে! চাঁদের মাটিতে উল্টো হয়ে পড়ে জাপানের চন্দ্রযান ‘লুনার এক্সকারশন ভেহিকল’ (এলইভি-১)!
গত ১৯ জানুয়ারি ‘জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি’ ঘোষণা করে, তাদের ‘স্লিম’ (স্মার্ট ল্যান্ডার ফর ইনভেস্টিগেটিং মুন) স্পেসক্রাফ্ট চাঁদের মাটিতে সফল ভাবে অবতরণ করেছে। ভারত, চিন, আমেরিকা ও রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন)-র পরে জাপান পঞ্চম দেশ, যারা চাঁদ ছুঁল। স্বাভাবিক ভাবেই জাপানের আনন্দের সীমা ছিল না। চন্দ্রযানের অবতরণের পরে মিশন কন্ট্রোল রুমে খবর আসে, সব ঠিক আছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখেন, কোনও এক অজানা কারণে চন্দ্রযানের গায়ে থাকা সৌর প্যানেলগুলি কাজ করছে না। চিন্তায় পড়েন তাঁরা। বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, সৌর প্যানেল কাজ না করার অর্থ, কিছু ক্ষণের মধ্যে স্লিম-এর চার্জ ফুরিয়ে যাবে। অকেজো হয়ে পড়বে যান।
পরিস্থিতি সামলাতে অভিযানের সঙ্গে যুক্ত থাকা ইঞ্জিনিয়াররা ল্যান্ডারটিকে ঘুম পাড়িয়ে দেন। অর্থাৎ স্লিপ মোডে পাঠিয়ে দেন। ততক্ষণে তাঁরা এই বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে থাকেন। যে রহস্যের সমাধান হয়েছে সম্প্রতি।
ভারতীয় মহাকাশযানের চন্দ্রাভিযানে দেখা গিয়েছিল, ল্যান্ডার বিক্রমের পেট থেকে বেরিয়ে এসেছিল রোভার প্রজ্ঞান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সৌভাগ্যক্রমে আগে থেকেই স্লিম-এর যুক্ত দু’টি ছোট ছোট রোভার কাজ করা শুরু করে দিয়েছিল। এরা হল— লুনার এক্সকারশন ভেহিকল ১ (এলইভি-১) এবং সোরা-কিউ (এলইভই-২)। একটি বেসবলের মাপের রোভার সোরা-কিউ। এর গায়ে ক্যামেরা লাগানো আছে। ক্যামেরার সাহায্যে সে স্লিম ও অবতরণস্থলের ছবি তুলে এলইভি-১ মারফত মিশন কন্ট্রোল রুমে পাঠায়। সেই ছবি পরীক্ষা করে দেখা যায়, স্লিম স্পেসক্রাফ্ট মাটিতে উল্টো হয়ে পড়ে। সৌর প্যানেলগুলি পশ্চিম দিকে এমন ভাবে হেলে রয়েছে যে চার্জ হওয়ার উপায় নেই।
স্লিমকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার আগে চন্দ্রপৃষ্ঠের বেশ কিছু ছবি তুলিয়ে নিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাতে বোঝা গিয়েছে, একটি ঢালের উপর দাঁড়িয়ে স্লিম। আশপাশে অনেক পাথর। চাঁদের নিরক্ষীয় অঞ্চল শিওলি গহ্বরে অবতরণ করেছে স্লিম। বিজ্ঞানীদের আশা আকাশে সূর্যের অবস্থান পরিবর্তন হলে, চাঁদে দিন শুরু হলে (পৃথিবীর হিসেবে ১৪ দিন) যথেষ্ট সূর্যালোক পেয়ে যাবে ওই প্যানেলগুলি। তখন স্লিম-এর চার্জ হবে। অভিযান হয়তো ব্যর্থ হবে না।