গাজ়া কার্যত ধুঁকছে, তবু অব্যাহত ইজ়রায়েলি হামলা। —ফাইল চিত্র।
দক্ষিণ গাজ়ার আল মাওয়াসির মাটিতে এখনও টাটকা ইজ়রায়েলি ট্যাঙ্কের চাকার দাগ। বাতাসে বারুদের গন্ধ। উপড়ে যাওয়া মৃত একটি ট্যোমাটো গাছ তুলে ধরলেন প্যালেস্টাইনি কৃষক নেদাল আবু জাহের। ক্লান্ত গলায় বললেন, এই হল ধ্বংসের নমুনা। আমরা সাধারণ কৃষক, হঠাৎ এক দিন ট্যাঙ্ক এসে গোলাবর্ষণ শুরু করল, শুরু হল ক্ষেপণাস্ত্র হানাও।” আবু জাহেরের পিছনে পড়ে রয়েছে তাঁর গাছঘরের(গ্রিনহাউস) ধ্বংসাবশেষ। জাহের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইজ়রায়েল কিন্তু এই এলাকাটিকে মানবিক ক্ষেত্র ( হিউম্যানিটারিয়ান জ়োন) হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
আবু জাহের একা নন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েল-হামাস সংঘর্ষ শুরু হওয়া ইস্তক সমগ্র গাজ়া জুড়ে প্রায় ৫৭ শতাংশ কৃষিজমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য ও কৃষি সংগঠন (ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজ়েশন) ও কৃত্রিম উপগ্রহ সংগঠন ইউএনওস্যাট-এর যৌথ ভাবে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে সম্প্রতি তা জানা গিয়েছে। এফএও-এর ম্যাটিউ হেনরি স্পষ্ট জানিয়েছেন, প্যালেস্টাইনের ৩০ শতাংশ অন্নসংস্থান হয় কৃষিক্ষেত্র থেকে। সেগুলি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
২০২২ সালেও গাজ়া প্রায় ৪ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকার কৃষিপণ্য রফতানি করেছে ইজ়রায়েল, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক-সহ বিশ্বের বিভিন্ন অংশে। তার মধ্যে স্ট্রবেরি ও ট্যোমাটো অন্যতম। সংঘর্ষ শুরু হতেই সেই রফতানির পরিমাণ কমে হয়েছে শূন্য। কৃষিজমিতে চলছে তখন গোলাবর্ষণ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, গাজ়ায় চলতে থাকা খাদ্যের হাহাকারের পিছনে এই ধ্বংসলীলা প্রবল ভাবে দায়ী।
ইজ়রায়েলি সেনার অবশ্য দাবি, ইচ্ছে করে কৃষিজমি, ফলের বাগানে আক্রমণ করা হয়নি। হামাস সশস্ত্র সেনা বেশির ভাগ এই সব এলাকাগুলি থেকেই হামলা চালায়। মানবাধিকার কর্মীদের একাংশের দাবি, হামাসের ভয় দেখিয়ে ইজ়রায়েল আসলে গাজ়াকে খাদ্যশূন্য করে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে। গাজ়া কার্যত ধুঁকছে, তবু অব্যাহত ইজ়রায়েলি হামলা।