Climate Change

দূষণের ফলে কি সূচনা হল নতুন যুগের!

ভূতাত্ত্বিকদের মতে, মানুষ তাদের কাজ, তাদের ব্যবহার এবং সিদ্ধান্ত দ্বারা পৃথিবীর ভূতত্ত্বের  ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সৃষ্টি  করতে চলেছে।

Advertisement

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

বস্টন শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩ ০৭:৩৯
Share:

কানাডার ক্রফোর্ড হ্রদ। ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্ব জুড়ে তাপপ্রবাহ, দাবানল আর অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় জেরবার মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যেমন আবহাওয়ায় পড়ছে, তেমনই তার ছাপ পড়ছে ভূস্তরেও। এবং সেই ছাপ ‘চিরস্থায়ী’ বলেই মনে করছেন ভূতাত্ত্বিকেরা। কানাডার একটি হ্রদের পলিস্তর বিশ্লেষণ করে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

Advertisement

এই ভূতাত্ত্বিকদের মতে, মানুষ তাদের কাজ, তাদের ব্যবহার এবং সিদ্ধান্ত দ্বারা পৃথিবীর ভূতত্ত্বের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সৃষ্টি করতে চলেছে। তাঁরা সেই যুগের নাম দিয়েছেন ‘অ্যান্থ্রোপোসিন’ বা ‘মনুষ্য’ যুগ। তবে পৃথিবীর জন্য এই যুগের প্রভাব একেবারেই ভাল নয়। এই সময়কালে জীবাশ্মজনিত জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রজাতির পর পর প্রজাতির বিলুপ্তি— এই সব কিছু মিলিয়ে মানুষ পৃথিবীর মাটিতে নিজেদের স্থায়ী নেতিবাচক চিহ্ন রাখতে সমর্থ হয়েছে।

ভূতাত্ত্বিক সময় হিসাবে পৃথিবীর বয়স আনুমানিক সাড়ে চারশো কোটি বছর। তার মধ্যে মনুষ্য প্রজাতির অস্তিত্ব মাত্র তিনশো হাজার বছরের, যা পৃথিবীর ইতিহাসের মোটে ০০০৭%। এখনও পর্যন্ত আমরা যে ভূতাত্ত্বিক যুগে বাস করি তার নাম ‘হলোসিন যুগ’। এই যুগ শুরু হয়েছিল প্রায় ১১,৭০০ বছর আগে। এত দিন পর্যন্ত ভূপৃষ্টে এবং সমুদ্রতলে এই যুগের প্রভাব সব থেকে বেশি ছিল। কিন্তু ‘অ্যান্থ্রোপোসিন’ যুগের প্রভাব তার থেকেও বেশি বলে আশঙ্কা করছেন ভূতাত্ত্বিকেরা।

Advertisement

কী ভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন তাঁরা? কানাডার অন্টারিয়ো প্রদেশের ক্রফোর্ড লেক। ৮০ ফুট গভীর, ২৬ হাজার স্কোয়ারে ফুটের এই হ্রদটির জল প্রায় স্বচ্ছ। এই হ্রদে জলের নীচে স্তরে স্তরে, বছরের পর বছর ধরে যে পলিস্তর জমা হয়েছে তা থেকে সহজেই পৃথিবীর ‘বয়স’ বুঝতে পারেন ভূতাত্ত্বিকেরা। তাঁদের ব্যাখ্যা, এই হ্রদে প্রতি বছর পলির একটি করে স্পষ্ট স্তর জমা হয়। সেই স্তরগুলি বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেছেন যে, গত সাত দশক ধরে মানুষের কার্যকলাপ ভূপৃষ্ঠে এতটাই প্রভাব ফেলছে যে পৃথিবীতে একটা নতুন যুগের সৃষ্টি হয়েছে।

রসায়নে নোবেলজয়ী পল ক্রাটজ়েন ২০০২ সালে সাম্প্রতিক ভূতাত্ত্বিক সময়কালকে ‘মনুষ্য যুগ’ বলে অভিহিত করেন। ২০০৯ সালে বিজ্ঞানীদের একটি দল এ নিয়ে গভীর গবেষণা শুরু করে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ভূস্তর বিশ্লেষণ করতে শুরু করে। সেই গবেষণাতেই দেখা যায়, কানাডার ক্রফোর্ড হ্রদের পলিস্তরে কী ভাবে এবং কবে থেকে মানুষের কার্যকলাপের কুপ্রভাব পড়েছে। গবেষণায় বেরিয়ে আসে, নিউক্লিয়ার-সহ নানা বর্জ্য এবং গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন পৃথিবীর বায়ু ও ভূস্তরকে আমূল পাল্টে দিচ্ছে। এই ভূতাত্ত্বিকদের মতে, ১৯৫১ থেকে এই পরিবর্তনের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে ভূস্তরে। তাই ১৯৫১কেই ‘অ্যান্থ্রোপোসিন’ যুগের সূচনা-সময় বলে ধরে নিয়েছেন তাঁরা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এই যুগের নামকরণ এখনও কোনও সরকারি মান্যতা পায়নি।

গত ১১ জুলাই বার্লিনে একটি সম্মেলনে ভূতাত্ত্বিকেরা এই ‘অ্যান্থ্রোপোসিন’ যুগ নিয়ে আলাপ-আলোচনায় বসেছিলেন। তাঁরা একটি বিষয়ে সহমত হয়েছেন— মানুষের কার্যকলাপের নেতিবাচক প্রভাব যে জলবায়ু ও ভূস্তরের উপরে পড়েছে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই নেতিবাচক প্রভাব ভবিষ্যতে কী ভাবে কমানো যায়, এ বার সে দিকেই বেশি করে নজর দিতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement