চর্চায়: ধৃত রাজকুমারদের অন্যতম আলওয়ালিদ বিন তালাল।
এক ধাক্কায় ১১ জন!
সৌদি আরবের সদ্যগঠিত দুর্নীতি দমন কমিটি ১১ জন রাজকুমারকে গ্রেফতার করেছে। কোপ পড়েছে চার প্রাক্তন মন্ত্রীর উপরেও। পাশাপাশি, দুর্নীতি দমন অভিযানের জেরে পদ হারিয়েছেন বর্তমান তিন মন্ত্রী। সৌদি রাজনীতির ইতিহাসে একে নজিরবিহীন ঘটনা বলেই উল্লেখ করছেন কেউ কেউ।
সৌদি সংবাদ সংস্থা আল আরাবিয়ার খবর অনুযায়ী, রাজা সলমন বিন আবদুলাজিজ আল-সৌদের উদ্যোগে এই কমিটি গড়ার কথা ভাবা হয়। গত কয়েক দশকে সৌদি রাজত্বে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কী বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রাজা সলমন দুর্নীতি দমন নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন। তাঁর মনে হয়েছিল, এ ভাবেই শাসনব্যবস্থায় সংস্কার আনা সম্ভব। সৌদি তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রেস বিবৃতিতে তেমনটাই জানানো হয়েছে। তার পরে শনিবার রাতে দ্রুত কমিটি তৈরি করে মাথায় বসানো হয় যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনকে। কোনও কোনও সূত্রে দাবি, অন্তত ১৭ জন রাজকুমারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া রাজকুমারদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি চর্চা চলছে আলওয়ালিদ বিন তালালকে নিয়ে। পশ্চিম এশিয়ায় কয়েকশো কোটি ডলারের মালিক হিসেবে তালাল গোটা বিশ্বে ধনীদের তালিকা অনেকটাই উপরে। টুইটার, অ্যাপল, রুপার্ট মার্ডকের নিউজ কর্প-এর মতো আরও বেশ কয়েকটি নামী সংস্থায় শেয়ার রয়েছে তাঁর। মাঝেমধ্যেই ছবিতে দেখা যায়, ২৮১ ফুট উঁচু প্রমোদতরীতে করে ভূমধ্যসাগরে ভেসে বেড়াচ্ছেন তালাল। সৌদি রাজকুমারদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি স্পষ্টভাষী এবং নারী অধিকার নিয়ে সরব বলেও তালালের পরিচিতি। তবে তাঁকে সত্যিই গ্রেফতার করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে। তালাল সাম্রাজ্যের শীর্ষ স্তরের এক কর্মী সংবাদ সংস্থাকে এই খবর দিয়েছেন। সরকারি সংবাদমাধ্যমে কিছু বলা হয়নি।
দুর্নীতির দায়ে পদ হারিয়েছেন অর্থনীতি ও পরিকল্পনা সংক্রান্ত মন্ত্রী আদেল বিন মহম্মদ ফকি, জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ও রাজকুমার মিতেব বিন আবদুল্লা বিন আবদুলাজিজ এবং নৌবাহিনীর কম্যান্ডার অ্যাডমিরাল আবদুল্লা বিন সুলতান বিন মহম্মদ আল-সুলতান। এক সময় সৌদি সিংহাসনের দৌড়ে রাজকুমার মিতেবের নামও শোনা গিয়েছিল। সৌদি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ধৃত ব্যক্তিরা জনস্বার্থের কাজ করতে গিয়ে মুনাফা লুটেছেন, কেউ কেউ সরকারি অর্থ নয়ছয় করেছেন। তাই প্রশাসনের সব স্তর থেকে দুর্নীতি মুছতে এই পদক্ষেপ। পদচ্যুত মন্ত্রীদের জায়গায় নতুন মুখও এনেছেন রাজা। ধরপাকড় ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিটির প্রধান যুবরাজ মহম্মদ কারও কারও সম্পত্তি ফ্রিজ, কারও ক্ষেত্রে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
গত সেপ্টেম্বরে কয়েক জন প্রভাবশালী ধর্মগুরু এবং আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যুবরাজ ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে নিজের কর্তৃত্ব বাড়ানোর কাজটি এ ভাবেই করে চলেছেন বলে দাবি কূটনীতিকদের। এর সঙ্গে মহম্মদ নজর দিয়েছেন নারী অধিকার রক্ষায়। গত মাসেই দেশ থেকে কট্টরপন্থা উৎখাতের ডাক দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আধুনিক ইসলাম প্রতিষ্ঠার।