Afghanistan

Afghanistan: আফগান মানেই কিন্তু জঙ্গি নয়, বলছেন ‘কাইট রানার’-এর অভিনেতা

ওই ছবিতে অভিনয়ের পরে মহমুদজ়াদার সঙ্গে যা যা ঘটেছিল, তা-ও হলিউডি ছবির গল্পের মতোই।

Advertisement

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২১ ০৫:২২
Share:

আহমেদ খান মহমুদজ়াদা

আকাশ চিরে বেরিয়ে যাচ্ছে দৈত্যাকার বিমান। আর তার ডানা থেকে খসে পড়ছে একটা, দু’টো... তার পর আবার, তিনটে কালো বিন্দু। বাঁচার জন্য নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ছুটে যাওয়া তিন-তিনটে প্রাণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া কাবুল বিমানবন্দরের এই দৃশ্য দেখেছে বছর ২৩-এর তরুণ। মুহূর্তে যেন ‘ফ্ল্যাশ ব্যাক’। মৃত্যু জেনেও বিমানের ডানায় চেপে বসা, তালিবানের হাত থেকে বাঁচতে এমন লড়াই তো করতে হয়েছিল তাঁকেও। ৯ বছর আগের ঘটনা, কিন্তু এখনও দুঃস্বপ্নের মতো ফিরে-ফিরে আসে।

Advertisement

তিনি আহমেদ খান মহমুদজ়াদা। প্রখ্যাত আফগান-আমেরিকান লেখক খালেদ হোসেনির প্রথম উপন্যাস ‘কাইট রানার’ অবলম্বনে তৈরি হলিউডের ছবির প্রধান চরিত্র, হাজ়ারা সম্প্রদায়ের ছোট্ট ছেলে হাসানের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মহমুদজ়াদা। ২০০৩ সালে প্রকাশিত ‘কাইট রানার’ বইটি যতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, ততটাই সম্মান পেয়েছিল ২০০৭ সালে একই নামে তৈরি ছবিটি। অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস এবং গোল্ডেন গ্লোব— দু’টিতেই মনোনয়ন পেয়েছিল এই ছবি। ‘ব্রডকাস্ট ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড’-এ সেরা কিশোর অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন মহমুদজ়াদা। কিন্তু তাতে কী! খ্যাতি, আন্তর্জাতিক সম্মানের পাশাপাশি দেশে তালিবানের আক্রোশের মুখে পড়তে হয়েছিল ১২ বছরের একটি ছেলে ও তার পরিবারকে। পরিণতি— দেশছাড়া ও শরণার্থী!

ওই ছবিতে অভিনয়ের পরে মহমুদজ়াদার সঙ্গে যা যা ঘটেছিল, তা-ও হলিউডি ছবির গল্পের মতোই। মার্ক ফস্টার পরিচালিত ছবির প্রেক্ষাপট ছিল, আফগান শাসনের পতন, সোভিয়েত সেনার আগ্রাসন এবং তালিবান জমানার শুরু। বিতর্কিত এই ছবিতে একটি অংশে দেখানো হয় দলিত শ্রেণির হাসানকে ধর্ষণ করছে একদল দুষ্কৃতী। এই দৃশ্যের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে জানত মহমুদজ়াদার পরিবার। তারা এই দৃশ্য বাদ দেওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করেছিল পরিচালককে। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে কথা দেওয়া হলেও ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়নি ওই অংশ। আফগানিস্তানে ছবিটি প্রদর্শন নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এবং মহমুদজ়াদার পরিবারের উপরে নেমে আসে তালিবান-আতঙ্ক। তাড়া করতে থাকে মৃত্যুভয়। ছেলেকে নিয়ে বাবা দু’বছরের জন্য পালিয়ে যান দুবাই। সেই খরচ বহন করেছিল চিত্রনির্মাতা সংস্থাই। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি। ভিসার মেয়াদ ফুরনোর পরে তারা দেশে ফিরলে ফের আসতে থাকে তালিবান হুমকি। শেষে ছেলেকে অন্য কিছু লোকের হাতে তুলে দেন বাবা। ইউরোপ পাড়ি দেয় ১৪ বছরের মহমুদজ়াদা। সেই সময়ের রিপোর্ট ঘেঁটে জানা যায়, বহু পথ খালি পেটে হাঁটতে হয়েছিল ছেলেটিকে। ডাঙার সন্ধানে বেলারুশ সীমান্ত বরাবর সমুদ্রে সাঁতরে এগোতে হয়েছিল। কখনও-কখনও টানা দু’দিন খেতে পায়নি। শেষে সুইডেনে আশ্রয়।

Advertisement

এখন অবশ্য সেই পুরনো অধ্যায় নিয়ে কথা বলতে চান না মহমুদজ়াদা। কিন্তু কেন মানুষগুলো ওই ভাবে পালাতে চাইছে, নিজের ভিটে-মাটি, ছেড়ে, তা অনুভব করতে পারেন সুইডেন থেকে ফোনে বলেন, ‘‘মানুষ মরতেও তৈরি, কিন্তু তালিবানের হাতে নয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘২০০১ সালে তালিবানের যখন পতন ঘটল, সবাই কত উৎসব করেছিল। আর এখন দেখুন। সাধারণ মানুষ যে তালিবানকে চায় না, তা স্পষ্ট!’’

কিন্তু সত্যিই কি তালিবান-মুক্ত হয়েছিল আফগানিস্তান? তা হলে কেন ২০০৭ সালের একটি ফিল্মের জেরে ওই পরিণতি হয়েছিল তাঁর? কেন একটি ১৪ বছরের কিশোরকে পালাতে হয়েছিল দেশ ছেড়ে?

মহমুদজ়াদার কথায়, ‘‘ওরা (তালিবান) ছিল। তবু ২০ বছরে দেশটা অনেক উন্নতি করেছিল। সবার উপরে গণতন্ত্র এসেছিল। মেয়েরা অধিকার পেয়েছিল। আরও উন্নতি হত, যদি ওই দলটা না-থাকত। তালিবানের অস্তিত্ব না-থাকত।’’ অভিনেতা জানিয়েছেন, তালিবান ছিল ঠিকই, কিন্তু ওরা যখন শান্তি-চুক্তি করেছিল, মানুষ বিশ্বাস করেছিল।

বেশ জোর দিয়েই মহমুদজ়াদা বলেন, ‘‘আমেরিকানরা দেশে আসার পরে সত্যিই তালিবানের দাপট এ ভাবে প্রকাশ্যে দেখা যেত না। কিন্তু ওদের অস্তিত্ব জিইয়ে রেখেছে প্রতিবেশি দুই দেশ। হ্যাঁ, নাম করেই বলছি। পাকিস্তান ও ইরান।’’ তাঁর ক্ষোভ, এই দুই দেশ আফগানিস্তানে সব সময় যুদ্ধ বাধিয়ে রাখতে চায়। আফগানদের রক্ত ঝরাতে চায়।

‘কাইট রানার’-এর লেখক হোসেনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে জানান, হেরাটে থাকা তাঁর তুতো বোনকে নিয়ে তাঁর চিন্তা হচ্ছে। হোসেনিরই গল্পের ‘নায়ক’ মহমুদজ়াদা জানালেন, তাঁর পরিবার তাঁর সঙ্গেই রয়েছে। সুইডেনে পালিয়ে আসার পরে প্রথম কয়েকটা বছর একটি সুইডিশ পরিবারে আশ্রয় পান মহমুদজ়াদা। জানান, এখানে কেউ বিশ্বাস করতে পারত না, হলিউডের অস্কার মনোনীত ছবিতে অভিনয় করা, পুরস্কার পাওয়া একটি ছেলে শরণার্থী শিবিরে রয়েছে! মহমুদজ়াদা জানান, যে পরিবারটি তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিল, তারা খুবই দয়ালু ছিল। কয়েক বছর পরে মহমুদজ়াদার পরিবারও সুইডেনে চলে আসে। আশ্রয় দেয় এই দেশ। নিরাপদে আছেন তাঁরা। ভাল আছেন।

কিন্তু তাঁর মতো অসংখ্য মানুষ, বিশেষ করে ছোটদের কথা ভেবে আতঙ্কিত তরুণ। বিশ্বের কাছে তাঁর প্রার্থনা, ‘‘দয়া করে এই মানুষগুলোকে আশ্রয় দিন। আফগান মানেই সন্ত্রাসবাদী নয়।’’ তাঁর আবেদন, কোনও দেশ যেন আফগানিস্তানের তালিবান সরকারকে মান্যতা না-দেয়। তাঁর কথায়, ‘‘তালিবান কখনও আফগানিস্তানের মুখ হতে পারে না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement