ফৌজিয়া কুফি। ছবি: রয়টার্স
প্রথম দফায় আফগান শরণার্থীদের জন্য ভারত সরকার দরজা খুলে রাখলেও বর্তমানে তা বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু সে দেশের প্রাক্তন এমপি ফৌজ়িয়া কুফির আশা, ভারত সরকার আফগান শরণার্থীদের সমস্যা বুঝবে এবং তাঁদের আশ্রয় দেবে। শনিবার দোহা থেকে ‘সাউথ এশিয়ান উইমেন ইন মিডিয়া’ নামে একটি সংগঠনের ওয়েবিনারে যোগ দেন ফৌজ়িয়া। আফগানিস্তানের পরিস্থিতির বিবরণ দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর কথায়, ‘‘তালিবান এক দিনে শক্তিশালী হয়নি।’’ এর পিছনে আশরফ গনি সরকার, পুলিশ এবং সেনার ব্যর্থতাকেও দায়ী করেন তিনি।
আশরফ গনি সরকারের আমলের এই এমপি বলেন, ‘‘ভারত এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক শুধু রাজনৈতিক নয়। বরং সেই সম্পর্কের ইতিহাস অনেক গভীরে প্রোথিত। আশা করব, ভারত আফগান শরণার্থীদের দিকে তাকাবে।’’
উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশের বাসিন্দা ফৌজ়িয়া। ওই প্রদেশ থেকেই তিনি এমপি নির্বাচিত হন। হয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকার। কয়েক মাস ধরে আফগান সরকারের যে প্রতিনিধি দল তালিবানের সঙ্গে শান্তি রক্ষার আলোচনা চালাচ্ছিল, তারও সদস্য ছিলেন ফৌজ়িয়া। ১৫ অগস্ট তালিবান কাবুল দখল করার সময়েই দেশ ছেড়ে পালান তিনি। বর্তমানে রয়েছেন কাতারের দোহা শহরে। এ দিন ফৌজ়িয়া জানান, কোনও পরিস্থিতিতেই তিনি দেশ ছাড়তে চাননি। কিন্তু পরিস্থিতির জেরেই তিনি বাধ্য হন। উল্লেখ্য, অতীতে তাঁকে বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। তাঁর পরিজনেরা এখনও আফগানিস্তানেই রয়েছেন। তিনি খবর পেয়েছেন, তালিবরা তাঁর অফিসে ঘুরে গিয়েছেন।
ফৌজ়িয়ার বক্তব্যে এ দিন বার বারই নারীদের প্রতি তালিবানের বিরূপ মনোভাবের কথা উঠে এসেছে। তিনি জানান, তালিবান মেয়েদের ভয় পায়। তাই মেয়েদের সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। স্কুল থেকে জাতীয় সংসদ, কোথাও মেয়েদের চিহ্ন রাখতে চাইছে না। কিন্তু মহিলা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নিলে চলবে না। প্রাক্তন এমপি-র আশা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ নিয়ে প্রতিবাদ আরও তীব্র হবে। মহিলারা যে ভাবে অধিকারের দাবিতে আফগানিস্তানের রাস্তায় নেমেছেন তা যথেষ্ট সাহসী পদক্ষেপ বলেও মনে করছেন তিনি।
এই ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন ‘সেন্টার ফর দ্য প্রোটেকশন অব আফগান উইমেন জার্নালিস্টস’-এর ডিরেক্টর ফরিদা নেকজাদ। তালিবানের কাবুল দখলের পর তিনিও মেয়েকে নিয়ে কানাডায় আশ্রয় নেন। তবে তাঁর স্বামী রয়েছেন কাবুলেই। ফরিদা এ দিন বলেন, ‘‘সাংবাদিক হওয়ার সূত্রে বহু দেশ ঘুরেছি। কিন্তু শরণার্থী হয়ে কোনও দেশে যেতে হবে, এ কথা ভাবিনি। যাকে নিজের শিকড় উপড়ে অন্য দেশে চলে যেতে হয়, সে-ই এই ব্যথা বুঝতে পারে।’’