ছেলে সেজে দশ বছর পার আফগান কন্যার

বয়ঃসন্ধির পরে অবশ্য ছেলে সাজা অনেক মেয়েই ফিরে আসে নিজের জীবনে। কিন্তু ব্যতিক্রম সিতারা। তিনি এখনও ছেলে সেজেই আছেন। নয়তো কারখানায় তাঁকে বিষম ঝামেলায় পড়তে হবে বলে দাবি তাঁর।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

সুলতানপুর (আফগানিস্তান) শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৮ ১২:০১
Share:

ইটভাটায় ব্যস্ত সিতারা। ছবি: এএফপি।

এক দশকেরও বেশি সময়! আফগান মেয়েটি আর মেয়ে নেই। বাবা-মায়ের ইচ্ছেয় ছেলে সেজে রয়েছে সিতারা ওয়াফাদার। মণিপুরের রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদার গল্প সিতারা শুনেছেন কি না, জানা নেই। কিন্তু এই কিশোরীর বাবা-মা পুত্রসন্তান না থাকার আক্ষেপে সিতারাকেই জোর করে ‘ছেলে’ সাজিয়ে রেখেছেন।

Advertisement

পাঁচ বোন। কোনও ভাই নেই। কাদামাটির চার দেওয়ালের মধ্যে বাস। আফগানিস্তানের পশ্চিমের প্রদেশ নানগরহরে থাকে সিতারারা। এখানে একটি প্রথা রয়েছে, ‘বাচা পোশি’। স্থানীয় দারি ভাষায় যার অর্থ মেয়েকে ছেলে সাজিয়ে রাখা। আর ছেলে-রূপী মেয়ে পরিবারের যে কোনও ছেলের মতোই সব কাজ করতে পারে। আফগানিস্তানের কট্টরপন্থী ছোট এই প্রদেশে মেয়েরা তুলনায় অনেক বেশি কোণঠাসা। যে সব পরিবারে উত্তরাধিকারী হিসেবে কোনও পুত্রসন্তান নেই, তাদের মধ্যেই এই প্রথার চল রয়েছে। তারা মেয়েকে ছেলে সাজিয়ে ভাবেন, ‘ছেলের মতো’ দায়িত্ব পালন করবে সে। তার চেয়েও বড় কথা, পরিবার ভাবে ছেলে সাজলে আর সন্তানকে হেনস্থার মুখে পড়তে হবে না। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক বারইয়ালাই ফেতরাত জানান, বাচা পোশি একেবারেই আফগানিস্তানের রক্ষণশীল এলাকার প্রথা।

সিতারা এখন ১৮-য় পা দিয়েছেন। সকাল সকাল ব্যাগি শার্ট এবং প্যান্ট গলিয়ে বেরিয়ে পড়েন। খয়েরি ছোট চুল কখনও কখনও ঢেকে নেন স্কার্ফ দিয়ে। গলাটা যথাসম্ভব ভারী করে কথা বলার চেষ্টা করেন যাতে কেউ বুঝে না ফেলে! দরিদ্র পরিবার তাঁর। তাই ইট তৈরির কারখানায় সপ্তাহে ছ’দিন উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন। আট বছর বয়স থেকে এই রুটিন সিতারার। চামড়া পুড়ে এখন বাদামি। বৃদ্ধ বাবাও যান তাঁর সঙ্গে। সিতারা বলছিলেন, ‘‘আমি কখনও ভাবিই না যে আমি মেয়ে! বাবাও বলেন, সিতারা আমার বড় ছেলের মতো। কারও কারও অন্ত্যেষ্টিতেও যাই বাবার সঙ্গে।’’ মেয়ে হলে এই সুযোগ কখনওই হত না তাঁর। সিতারার বোনেরাও ছোটবেলায় যেত কারখানায়। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে তারা আর যায় না। স্কুলের মুখ দেখেনি কেউই।

Advertisement

তবে বয়ঃসন্ধির পরে অবশ্য ছেলে সাজা অনেক মেয়েই ফিরে আসে নিজের জীবনে। কিন্তু ব্যতিক্রম সিতারা। তিনি এখনও ছেলে সেজেই আছেন। নয়তো কারখানায় তাঁকে বিষম ঝামেলায় পড়তে হবে বলে দাবি তাঁর। সিতারা বলেন, ‘‘ওখানে কেউ বোঝে না, আমি মেয়ে। যদি বোঝে ওদের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কোনও মেয়ে কাজ করছে, তা হলে আমার কী হবে কেউ জানে না। অপহরণও করতে পারে ওরা!’’

তাঁর আর কোনও উপায়ও নেই। ৫০০টি ইট তৈরি করে ১৬০ আফগানি (দু’ডলারের সামান্য বেশি) মেলে। কারখানা মালিক আর আত্মীয়স্বজনদের কাছে ২৫ হাজার আফগানি ঋণ রয়েছে। মায়ের চিকিৎসায় অর্থ শেষ। তাই কারখানার কাজ ছাড়লে চলবে না সিতারার। কিন্তু দীর্ঘ সময় ছেলে সেজে থাকতে থাকতে লিঙ্গ-পরিচয় নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয় না? অধ্যাপক ফেতরাত বলেন, ‘‘পুরুষ-প্রধান সমাজে এমন সঙ্কট হতে বাধ্য। এর পরে এই সব মেয়েরা বাধ্য বৌয়ের ভূমিকায় মানিয়ে নিতে পারে না। অবসাদের শিকার হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement