ট্রাম্প প্রশাসনের তরফ থেকে যে ধরনের বার্তা সম্প্রতি ইসলামাবাদকে পাঠানো হচ্ছে, ততটা কড়া সতর্কবার্তা কিন্তু আমেরিকা আগে পাকিস্তানকে দেয়নি। ছবি: এএফপি।
জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করুক পাকিস্তান। না হলে আমেরিকা নিজেই পদক্ষেপ করবে। ঠিক এই রকম হুঁশিয়ারিই দেওয়া হয়েছে ইসলামাবাদকে। জানালেন মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র হেদার ন্যুআর্ট। সদ্য আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারত সফর সেরে দেশে ফিরেছেন মার্কিন বিদেশ সচিব রেক্স টিলারসন। সেই সফরেই পাকিস্তানকে এ যাবৎ কঠোরতম বার্তাটা শুনিয়ে দিয়ে এসেছেন তিনি। ইঙ্গিত মার্কিন বিদেশ দফতরের।
‘‘আমরা অসংখ্য বার পাকিস্তানকে জানিয়েছি যে, আমরা চাই পাকিস্তানের সীমানার মধ্যে যে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি সক্রিয়, সেগুলির বিরুদ্ধে পাকিস্তান নির্ণায়ক পদক্ষেপ করুক।’’ মন্তব্য ন্যুআর্টের। যদি পাকিস্তান তা না করে, তা হলে লক্ষ্য পূরণের জন্য আমেরিকা অন্য পথ খুঁজবে। জানিয়েছেন মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র।
আরও পড়ুন: ভোটের গুজরাতে বড় হামলার ছকে আইএসআই?
উপমহাদেশ সফর সেরে আমেরিকা ফেরার পথে টিলারসন শেষ বার থেমেছিলেন সুইৎজারল্যান্ডের জেনেভায়। সেখানে টিলারসন জানান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। বৈঠক হয়েছে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গেও। খুব খোলাখুলি এবং আন্তরিক পরিবেশেই পাক নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর কথা হয় বলে টিলারসন জানান। কিন্তু আমেরিকা পাকিস্তানের কাছ থেকে ঠিক কী চায়, সে কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়ে আসতে তিনি একেবারেই দ্বিধা করেননি। বলেছেন মার্কিন বিদেশ সচিব।
পাক নেতৃত্বকে ঠিক কী বলেছেন টিলারসন? তাঁর নিজের কথায়, ‘‘আমরা পাকিস্তানের কাছ থেকে কী চাই আমি জানিয়ে দিলাম। আমরা আপনাদের অনুরোধ করছি এই পদক্ষেপগুলো করতে, আমরা কোনও দাবি জানাচ্ছি না। আপনারা একটা সার্বভৌম দেশ। আপনারাই স্থির করবেন, আপনারা কী করতে চান। কিন্তু জেনে রাখুন, আমরা মনে করি এই পদক্ষেপগুলো করা জরুরি। এবং যদি আপনারা সেগুলো করতে না চান, তা হলে ভাববেন না যে তেমনটা সম্ভব হবে। অন্য উপায়ে লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য নিজেদের কৌশল এবং নীতি আমরা বদলে ফেলব।’’
আরও পড়ুন: আপত্তি সরিয়ে রেখে বেল্ট অ্যান্ড রোডে সামিল হোক ভারত: ফের আহ্বান চিনের
মার্কিন বিদেশ সচিবের এই বার্তা কিন্তু সত্যিই দ্বর্থ্যহীন। বহু বার পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি। চূড়ান্ত সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে। এর পরেও যদি পাকিস্তান পদক্ষেপ না করে, তা হলে পাক ভূখণ্ডে গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসের পরিকাঠামো কী ভাবে নির্মূল করতে হয়, তাও আমেরিকার জানা আছে। ঠিক এই সুরই কিন্তু স্পষ্ট ধরা পড়েছে টিলারসনের বার্তায়।
দুঁদে কূটনীতিকের ঢঙেই অবশ্য টিলারসন জানিয়েছেন, পাক নেতৃত্বকে নিজের ভাষণ শোনাতে তিনি পাকিস্তানে যাননি। শুধু ভাষণ শুনিয়ে কোনও কাজও হয় না বলে তাঁর মত। টিলারসন জানিয়েছেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বা অন্য কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক চলাকালীন ৮০ শতাংশ সময়ই তিনি ব্যয় করেছেন পাকিস্তানের কথা শোনার জন্য। ২০ শতাংশ সময় তিনি কাজে লাগিয়েছেন আমেরিকার বক্তব্য পাকিস্তানকে জানানোর জন্য। কিন্তু সেই অল্প সময়েই পাকিস্তানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, পাক ভূখণ্ডে সন্ত্রাসের বাড়বাড়ন্ত আর সহ্য করবে না আমেরিকা। ইঙ্গিত মার্কিন বিদেশ দফতরের।