রেশমিয়া আওয়াদ
আইএস জঙ্গি গোষ্ঠীর নিহত নেতা আবু বকর আল বাগদাদির দিদিকে সিরিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানাল তুরস্ক। সোমবার উত্তর সিরিয়ার আজ়াজ় শহরের কাছে গ্রেফতার করা হয়েছে রেশমিয়া আওয়াদকে। ৬৫ বছরের আওয়াদ আইএসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। তুরস্কের দাবি, তাঁকে জেরা করে আইএস অন্দরের বহু গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন খবর আদায় করা যাবে।
গত মাসেই মার্কিন অভিযানে সিরিয়ায় ইদলিব প্রদেশের বারিশা এলাকায় নিহত হন বাগদাদি। যা তাঁর প্রশাসনের বড়সড় সাফল্য বলে দাবি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার তুরস্কও দাবি করছে, আওয়াদকে গ্রেফতার করে ‘সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানের ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য’ পেয়েছে তারা। এক সরকারি কর্তার কথায়, ‘‘ধৃতকে জেরা করে আইএসের অভ্যন্তরীণ কাজকর্মের খুঁটিনাটি তথ্য পাওয়ার আশা করছি আমরা।’’
বাগদাদির পাঁচ ভাই ও একাধিক বোন থাকলেও তাঁরা জীবিত না মৃত সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। রেশমিয়া সম্পর্কেও বিশেষ কোনও তথ্য জানায়নি আঙ্কারা। তাঁর একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে শুধু। তাতে দেখা যাচ্ছে, তাঁর পরনে নীল ঢিলেঢালা পোশাক ও মাথা ঢাকা কালো কাপড়ে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, তুরস্ক অধিকৃত সিরিয়ার আলেপ্পো প্রদেশ থেকে গ্রেফতার হন আওয়াদ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী, পাঁচ ছেলেমেয়ে ও পুত্রবধূ। একটি ট্রেলারের ভিতরে গা ঢাকা দিয়ে ছিল পরিবারটি। গ্রেফতারির পরে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে খিলাফত ঘোষণার পর থেকে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক হয়ে যান বাগদাদি। শুধুমাত্র পরিবার ও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কয়েক জন সঙ্গী ছাড়া আরও কারওকে বিশ্বাস করতেন না তিনি। যৌনদাসী হিসেবে বাগদাদির হাতে আটক মহিলারা ধরা পড়ার পরে জানিয়েছিলেন এই তথ্য। ইরাকের গোয়েন্দা বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল আবু আলি আল-বসরি গত বছর এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ভাই ও ভগ্নিপতিদের উপরে খুব বেশি নির্ভর করা শুরু করেছিলেন বাগদাদি।
ফলে ধৃত আওয়াদকে আইএস সম্পর্কে তথ্যের ‘সোনার খনি’ বলে মনে করেছেন গোয়েন্দাদের একাংশ। এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, ‘‘উনি আইএস সম্পর্কে যা জানেন তা আদায় করতে পারলে আমরা জঙ্গি সংগঠনটির গতিবিধি সম্পর্কে আরও ভাল ভাবে বুঝতে পারব এবং আরও কয়েক জনকে গ্রেফতার করতে পারব।’’ যদিও গোয়েন্দাদের একাংশ আবার মনে করছেন, বাগদাদির দিদি আইএসের কাজকর্মের বিষয়ে কতটা ওয়াকিবহাল বা কত দিন তিনি বাগদাদির সঙ্গে কাটিয়েছেন, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। হাডসন ইনস্টিটিউটের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বিশেষজ্ঞ মাইক প্রেজেন্ট বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় না আসন্ন কোনও হামলার ছক নিয়ে উনি বিশেষ কিছু জানেন। তবে বাগদাদি কাদের কাদের বিশ্বাস করতেন, ইরাকে কাদের সাহায্যে উনি নিরাপদে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতেন বা ওঁর পরিবার যাতায়াত করত, সে বিষয়ে তথ্য দিতে পারেন ধৃত।’’ বিশেষজ্ঞেরা এ-ও জানিয়েছেন, যে শহর থেকে আওয়াদকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেটি আইএসের কুখ্যাত পাচারপথ।