London Doctor speaking Bengali Fluently

ঝরঝরে বাংলা বলেন অ্যানা, লন্ডনকে কলকাতা বানানো চিকিৎসকের অধ্যবসায় শুনে প্রস্তাব উঠেছে পুরস্কারের

চিকিৎসক অ্যানা লন্ডন স্কুল অফ মেডিসিন থেকে পাশ করেছেন। সত্তরের দশকের শেষে এবং আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে এসে যখন আক্রান্ত হচ্ছেন বাংলাদেশীরা, তাঁদের চিকিৎসা করেন অ্যানা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লন্ডন শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ১৬:৪৯
Share:

পূর্ব লন্ডনের লাইমহাউস ডিসট্রিক্টের বাসিন্দা ডা. অ্যানা লিভিংস্টোন। ছবি : টুইটার থেকে।

মাতৃভাষা বাংলা নয়। তাঁর পরিবারের কেউ ভারতে এসেছেন বলেও শোনা যায়নি। ব্রিটেনে জন্ম, টেমসের পারে বেড়ে ওঠা খাঁটি মেমসাহেব এক লন্ডনবাসী চিকিৎসকের গলায় তবু গঙ্গাপারের টান। কিংবা পদ্মাপারেরও। ঝরঝরে বাংলা বলতে পারেন অ্যানা লিভিংস্টোন। তাঁর সেই বঙ্গবুলির একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। সেই ভিডিয়োয় অ্যানার বাংলা শেখার কাহিনি শুনে তাঁকে খুঁজে বের করে পুরস্কৃত করার দাবিও তুলেছেন টুইটারে। এই ভিডিয়োর সত্যতা অবশ্য যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

অ্যানা পূর্ব লন্ডনের লাইমহাউস ডিসট্রিক্টের বাসিন্দা। টেমসের উত্তর তীর লাগোয়া প্রাক্তন বন্দর এলাকা এই লাইমহাউস। সেখানকারই একটি হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক অ্যানা। ১৯৭৫ সালে লন্ডন স্কুল অফ মেডিসিন থেকে পাশ করেছেন। সত্তরের দশকের শেষে এবং আশির দশকের শুরুতে তখন বাংলাদেশ থেকে কাতারে কাতারে মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে আসছেন ব্রিটেনে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অশান্তি এবং একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়-ক্ষতিতে তখন ধুঁকছে বাংলাদেশের বেশ কিছু এলাকা। বাঁচতে লন্ডনে চলে আসছেন বাংলাদেশীরা। আবার বিদেশে এসেও জাতিগত বৈষম্যের জন্য আক্রান্ত হতে হচ্ছে তাঁদের। সেই সব হিংসার ঘটনায় আক্রান্ত আহত, জখম বাংলাদেশীরা তখন লন্ডনের প্রতি হাসপাতালে। সদ্য ডাক্তারি পাশ করা অ্যানাকে সেই সময় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল লাইমহাউসের হাসপাতালের রোগীদের দেখভালের। অ্যানা জানিয়েছেন, রোগীদের চিকিৎসার জন্যই তাঁর বাংলা শেখা।

টুইটারে অ্যানার একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন লন্ডনবাসী এক বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত সঙ্গীতশিল্পী হালিমা খান। ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে লন্ডন ‘বাংলা ভয়েস’ নামে একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিকে তাঁর বাংলা শেখার গল্প বলছেন অ্যানা। কথা বলছেন পরিষ্কার ঝরঝরে বাংলাতেই। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, কী ভাবে বাংলা শিখলেন? অ্যানা জবাবে বলেন, ‘‘১৯৮০ সালে আমি জিপি ছিলাম লাইমহাউসের। আমার রোগীরা অধিকাংশই ছিলেন বাংলাদেশী। বাংলা ছাড়া কোনও ভাষাই জানতেন না। আর আমার মাতৃভাষা ইংরেজি। সেই সময় হাসপাতালে কোনও দোভাষী ছিলেন না। বাধ্য হয়েই চিকিৎসার প্রয়োজনে আমি ওই রোগীদের কাছ থেকেই বাংলা শিখতে শুরু করি।’’ অর্থাৎ, রোগীর সমস্যা বোঝার জন্যই তাঁদের ভাষা শেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অ্যানা। অ্যানা বলেছেন, ‘‘আমরা পরস্পরকে পরস্পরের ভাষা শেখাতাম। আমি বাংলা শিখতাম। ওরাও আমার কাছে ইংরেজি শিখত। এ ভাবেই আমরা একে অপরের ভাষা বুঝতে শুরু করি।’’

Advertisement

হালিমা ওই ভিডিয়োর বিবরণ এবং আরও একটি টুইটে লিখেছেন, ‘‘এই মহিলা একজন সুপারহিরো। আমি চাই ওর নাম গোটা লন্ডন জানুক। এমন দয়ালু মানুষ সচরাচর খুঁজে পাওয়া যায় না। এই খারাপ খবর আর নেতিবাচক দুনিয়ায় এঁরা জীবনের জীবন্ত উদাহরণ। ওঁর বাংলা শেখার চেষ্টার জন্য সেই সময় অসংখ্য বাঙালি চিকিৎসা পেয়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন। ওঁর কথা শুনে আমার চোখে জল আসছে।’’ এর পাশাপাশি লন্ডনের লাইমহাউসের এমপি আপসানা বেগমকে ট্যাগ করে হালিমার অনুরোধ, ‘‘দয়া করে এঁকে খুঁজে বের করে পুরস্কার দিন।’’

অ্যানার গল্প শুনে তাঁকে সম্মানিত করার দাবি জানিয়েছেন নেটাগরিকেরাও। ভিডিয়োটি ইতিমধ্যেই ছ’লক্ষাধিক বার দেখা হয়ে গিয়েছে। ভিডিয়োর নীচে মন্তব্য করেছেন আশির দশকে লন্ডনের ওই এলাকায় চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা অন্য চিকিৎসকেরাও। হেলেন সালিসবারি নামে এক চিকিৎসক লিখেছেন, ‘‘১৯৮০ সালের লন্ডনে আমিও চিকিৎসক হিসাবে কাজ করেছি। সত্যি বলতে আমরা সিলেটি বাংলা শেখার ক্লাসে ভর্তিও হয়েছিলাম। কিন্তু পরে ওই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাই। অ্যানাকে আমার শ্রদ্ধাবনত ভালবাসা। যে ওখানে থেকে অসুস্থ এবং জখম রোগীদের সেবা করে গিয়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement