গাজ়ার খান ইউনিসের গণকবরে দু’শোটিরও বেশি দেহ মিলেছে। ছবি: রয়টার্স।
কোনও দেহের হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। কোনও দেহের মাথা, চামড়া, অঙ্গপ্রত্যঙ্গই নেই। গাজ়ার খান ইউনিসে যে গণকবরে দু’শোটিরও বেশি দেহ মিলেছে, সেগুলির বেশিরভাগের অবস্থা কিছুটা এই রকম। প্যালেস্টাইনের প্রতিরক্ষা সংস্থার আশঙ্কা, আগামী দিনে আরও অনেক এমন গণকবরের সন্ধান মিলতে পারে। ফলে বাড়তে পারে এমন ক্ষতবিক্ষত দেহের সংখ্যা।
৭ এপ্রিল ইজ়রায়েলি বাহিনী (আইডিএফ) তাদের অভিযান শেষে সেনা সরিয়ে নেয় খান ইউনিস থেকে। তবে বিগত কিছু মাস ধরে ক্রমাগত বোমা-ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সে শহর। শুক্রবার প্যালেস্টাইনের প্রতিরক্ষা সংস্থা খান ইউনিসের সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে নাসের হাসপাতাল চত্বরে একটি অস্থায়ী গণকবরের খোঁজ পায়। রবিবার পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চালিয়ে হাসপাতাল চত্বরের গণকবর থেকে ২১০টি দেহের খোঁজ মিললেও আশঙ্কা, বাড়তে পারে নিহতের সংখ্যা। গণকবর থেকে উদ্ধার হওয়া বেশির ভাগ দেহ-ই মহিলা, শিশু এবং অল্প বয়সি যুবকদের। দেহগুলি দেখে এ-ও মনে হচ্ছে যে, হত্যার আগে রীতিমতো অত্যাচার চালানো হয়েছিল তাদের উপরে। এই প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেছেন, ‘এখনও দেহ উদ্ধারের কাজ শেষ হয়নি। কোনও কোনও কবর থেকে ৫০টিরও বেশি দেহ উদ্ধার হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকের গায়ে পোশাক ছিল না।’ অন্য কিছু সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে যে, বেশ কয়েকটি দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিল না। কিছু দেহের চামড়া, মাথাও ছিল না। নানা মহলের আশঙ্কা, শুধু হামলা নয়, মানব দেহের অঙ্গ পাচার চক্রও চলে থাকতে পারে।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও বহু হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল বাহিনী। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হয় আল-শিফা হাসপাতালে। বিধ্বংসী হামলার জেরে কার্যত একটি ‘খালি খোলসে’ পরিণত হয় সে হাসপাতাল। ভিতরে রয়ে যায় শুধু বহু ক্ষতবিক্ষত দেহ।
এরই মাঝে ইজ়রায়েলি হানায় নিহত এক মহিলার গর্ভ থেকে জন্ম নিল এক কন্যাসন্তান। সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি রাফায় একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে নিহত হয় অন্তত ১৯ জন। তাদের মধ্যে ছিল একই পরিবারের ১৩ সন্তান। ছিলেন ৩০ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা সাবরিন আল-সাকানিও। সাবরিনকে দ্রুত রাফার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে অস্ত্রোপচারের সাহায্যে জন্ম নেয় শিশুটি। ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক, মহম্মদ সালামা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সদ্যোজাত এখনও সুস্থ। আপাতত তাকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে কিছু সময়ের জন্য। বুকে একটি টেপও লাগানো রয়েছে। তাতে লেখা, ‘শহিদ সাবরিন আল-সাকানির সন্তান’। তবে পরে কোন আত্মীয়ের কাছে শিশুটি থাকবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।