ভারতীয়দের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন দিল্লি

কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল সাত দেশ

কূটনীতিকদের মতে, সম্প্রতি রিয়াধে গিয়ে সুন্নি আরব দেশগুলির জোট গ়ড়ার প্রক্রিয়ায় গতি আনতে চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পরেই সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব দেশগুলি কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে কড়া বার্তা দিতে চেয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৭ ০২:৪০
Share:

সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইয়েমেন, মিশর, লিবিয়া ও মলদ্বীপ। বিমান, জল ও স্থলপথে কাতারের সঙ্গে সব যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরব, বাহরাইন, মিশর ও আমিরশাহি। ওই দেশগুলির দাবি, আল কায়দা ও আইএসের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীদের মদত দেয় কাতার। ইয়েমেনে হুথি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে কাতারকে। অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছে কাতার। সাম্প্রতিক কালে আরব জগতে এমন রাজনৈতিক সঙ্কট বিশেষ আসেনি বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা।

Advertisement

বেশ কিছু দিন ধরেই টানাপড়েন চলছিল কাতার এবং সৌদি আরব-সহ অন্য আরব দেশগুলির। কূটনীতিকদের মতে সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেনে ইরানের প্রভাব বাড়ায় উদ্বিগ্ন সৌদি আরব। ইয়েমেনে শিয়া হুথি জঙ্গিদেরও সমর্থন করছে ইরান। সম্প্রতি সৌদি আরব-সহ সুন্নি আরব দেশগুলিকে নিয়ে ইরান ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে জোট গড়তে উদ্যোগী হয়েছে আমেরিকা। কিন্তু সুন্নি দেশগুলির মধ্যে একমাত্র কাতারের সরকার ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করার পথ খুঁজছিল।

সম্প্রতি কাতারের সরকারি সংবাদ সংস্থায় সে দেশের আমির শেখ তামিম আল হামাদ আল ঠানির বিবৃতি প্রকাশিত হয়। তাতে ইরানকে ‘ইসলামি শক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন শেখ তামিম। তেহরানের প্রতি মার্কিন নীতির সমালোচনাও করেছেন। পরে অবশ্য কাতার দাবি করে, আমির ওই বিবৃতি দেননি। তাদের সরকারি সংবাদ সংস্থার ওয়েবসাইট হ্যাক করা হয়েছে। কিন্তু সে কথা মানতে বিশেষ রাজি হয়নি অন্য আরব দেশগুলি। ফলে কাতারের সঙ্গে ওই দেশগুলির দূরত্ব বাড়ছিল। আল-জাজিরা-সহ কাতার থেকে সম্প্রচার হওয়া অনেকগুলি চ্যানেল নিষিদ্ধ করে দেয় অন্য আরব দেশগুলির সরকার।

Advertisement

আরও পড়ুন: কেন্দ্রের ই-মার্কেটপ্লেস প্রকল্প ভুলে ভরা! অভিযোগ করল মাইক্রোসফট্‌

কূটনীতিকদের মতে, সম্প্রতি রিয়াধে গিয়ে সুন্নি আরব দেশগুলির জোট গ়ড়ার প্রক্রিয়ায় গতি আনতে চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পরেই সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব দেশগুলি কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে কড়া বার্তা দিতে চেয়েছে।

সব কাতারি কূটনীতিক ও নাগরিককে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। ওই দেশগুলির মধ্যে একমাত্র সৌদি আরবের সঙ্গে কাতারের সীমান্ত রয়েছে। সেই সীমান্ত বন্ধ করে দেবে রিয়াধ। কাতারগামী উড়ান বন্ধ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিমান সংস্থা এমিরেটস ও এতিহাদ। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও বাহরাইন জলপথেও কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আরব দেশগুলির মতভেদ দূর করার জন্য ওয়াশিংটন সাহায্য করতে চায় বলে জানিয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসন। কূটনীতিকদের মতে, সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব-সহ বিভিন্ন সুন্নি আরব দেশের কাতারকে কড়া বার্তা দেওয়ার পিছনে আমেরিকার পরোক্ষ মদত থাকতে পারে। কারণ, পশ্চিম এশিয়ায় ইরানপন্থী কোনও সুরকে বরদাস্ত করতে রাজি নয় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু কাতারও আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশ। সেখানে বড় মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। ওই ঘাঁটি থেকে আইএসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে আমেরিকা। তাই সে দেশটি আরব জগতে একেবারে এক ঘরে হয়ে পড়ুক, তাও চায় না ওয়াশিংটন। সে ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সুন্নি আরব জোট গড়ার স্বপ্নও ধাক্কা খাবে।

তেল আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ উৎস আরব দেশগুলি। সঙ্কটের পরে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। সেইসঙ্গে সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইনে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কেরলের অনেক বাসিন্দা। ফলে আরব সঙ্কটে উদ্বিগ্ন দিল্লিও। ইতিমধ্যেই কেরলের বাসিন্দা-সহ কাতারবাসী সাড়ে ৬ লক্ষ ভারতীয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডি। জেট, ইন্ডিগোর মতো ভারতীয় বিমান সংস্থার কাতারগামী উড়ান ঠিক সময়েই চলছে।

ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ‘‘এই সঙ্কট একেবারেই আরব জগতের নিজস্ব। তবে এই সঙ্কটের ফলে কাতারে কোনও ভারতীয় বিপাকে প়ড়েছেন কি না জানতে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement