গা হাত পা ছড়িয়ে শুয়েছিলেন তিনি। মাথাটা এক পাশে কাত করা। মাথার উপরে একটা হাত। আস্ত একটা কঙ্কাল, তবে এতেই রহস্য শেষ নয়।
৫০০ বছর ‘বয়সী’ এই ব্যক্তিকে হয় কেউ ধাক্কা মেরেছিল, না হয় কোনও ভাবে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। কঙ্কাল দেখে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন এমনটাই।
এই কঙ্কালের বিশেষত্ব হল, এর হাঁটু পর্যন্ত পরা লেদার বুট। সম্প্রতি এটির খোঁজ মিলেছে লন্ডনের টেমস নদীর পাশে। পুরাতত্ত্ববিদরা, মধ্যযুগের এই সুপ্রাচীন কঙ্কালটির অক্ষত বুট দেখে চমকে গিয়েছেন।
লন্ডনের বারমন্ডসে টেমস টাইডওয়ে সুড়ঙ্গে, বড়দিনের আগেই লন্ডনের ভিক্টোরিয়ান আমলের নিকাশি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের সময় আবিষ্কার হয় এই কঙ্কালটি।
চামড়ার ‘কোয়ার্টার্স’ সুতো দিয়ে সেলাই করা ছিল বুটটি। মোমের আস্তরণের সুতোও রয়েছে তাতে, জানিয়েছেন পুরাতত্ত্ববিদরা। মোলা হেডল্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচারের বিশেষজ্ঞ দলের তরফে বেথ রিচার্ডসন বলেন, এটি অক্ষত ছিল কারণ লন্ডনে চামড়ার জিনিস বেশ ভাল থাকে।
ধাতব কোনও পদার্থ ছিল না বুটে। স্টাইলেট হিলও ছিল না। পাতলা সোলের মধ্যে সামনে ও পিছনে রয়েছে ক্ল্যাম্প। কঙ্কালটি ১৪০০ থেকে ১৫০০ শতকের বলে মনে করা হচ্ছে।
এরকম হাই বুট পরা কঙ্কাল আগে কখনও দেখা যায়নি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। মধ্যযুগে এই ধরনের বুটের অস্তিত্বই বিরল। বরং ১৭০০ শতকে এই বুটের ব্যববার লক্ষ্য করা গিয়েছে। প্রাচীন চিত্রকলা বা ছবিতেও এর তেমন অস্তিত্ব নেই।
এই ব্যক্তি খুব সম্ভবত ডক কর্মী ছিলেন। কিংবা মাডলার্ক বা মৎস্যজীবী। নাবিকরা সেই সময় লম্বা বুট পরতেন। আবিষ্কৃত বুটটি বেশ সাধারণ, একেবারেই কেতাদুরস্ত নয়। বুটের ভিতরে জলজ উদ্ভিদের অস্তিত্ব পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। কারণ জুতোর ভিতরে প্রাপ্ত ওই উদ্ভিদগুলি শীতকালে উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির সম্ভবত গাঁটে ব্যথা ছিল। শিরদাঁড়া ও বাঁ দিকের হিপ জয়েন্টে সমস্যা ছিল। বয়স সম্ভবত ৩৫ এর কাছাকাছি।
বহু ক্ষণ ধরে দাঁত দিয়ে কিছু চিবোনোর অভ্যাসও ছিল ওই ব্যক্তির। দাঁতের মাঝে আটকে ছিল এমনই কোনও একটা পদার্থ। হতে পারে মৃত্যুর আগেও দাঁত দিয়ে দড়ি কাটছিলেন ওই ব্যক্তি। সেখান থেকেই এই ব্যক্তি পেশায় মৎস্যজীবী ছিলেন বলে মনে করছেন পুরাতাত্ত্বিক বিশারদরা।
তবে মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে। নদীর স্রোতে ভেসে গিয়েছিলেন বা মদ্যপ অবস্থায় ক্লান্ত হয়ে সেতু থেকে পড়ে মারা গিয়েছিলেন এমনটাও হতে পারে, জানিয়েছেন অপর এক বিশেষজ্ঞ।