আয়া বোবোকুলোভা।
মস্কোর মেট্রো স্টেশনে ঢোকার মুখে তখন ভিড়ের ঠেলাঠেলি। ফেব্রুয়ারির হাড়কাঁপানো শীতে নিত্যযাত্রীরা ছুটছেন ট্রেন ধরার জন্য। এরই মধ্যে কয়েক জন যাত্রীর নজর পড়ল রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো কালো পোশাক পরা এক মহিলার দিকে। আর দেখামাত্রই স্তব্ধ হয়ে গেলেন সকলে। মহিলার হাতে ঝুলছে একটি ছোট্ট কাটা মুন্ডু! ব্যস্তসমস্ত হয়ে মেট্রো স্টেশনের বাইরের রাস্তার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে অস্থির ভাবে হেঁটে বেড়াচ্ছে সে। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ওই মহিলাকে। পুলিশ জানায়, চার বছরের এক শিশুকে খুন করে তার মাথা কেটে রাস্তায় নিয়ে ঘোরাফেরা করছিল তারই আয়া গায়ুলচেখরা বোবোকুলোভা। গত সোমবার নিজের দোষ স্বীকার করেছে সে।
পুলিশ জানিয়েছে, ২৯ বছরের বোবোকুলোভা মানসিক ভাবে একেবারেই সুস্থ নয়। গ্রেফতার হওয়ার পর নিয়মমাফিক মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়ে, বোবোকুলোভা প্যারানয়া স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, মামলা চলাকালীন তাকে কড়া পাহারায় জেলের মধ্যেই মানসিক হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
চার বছরের আনাস্তাসিয়া।
পুলিশ সূত্রের খবর, সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত চার বছরের আনাস্তাসিয়ার ন্যানি হিসেবে কাজ করছিল উজবেক নাগরিক বোবোকুলোভা। গত ফেব্রুয়ারিতে ওই শিশুকে তারই ফ্ল্যাটে প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করে সে। এর পর শিশুটির মাথা কেটে রাস্তায় বেরিয়ে যায় বোবোকুলোভা। ফ্ল্যাটেই পড়েছিল ওই ছোট্ট মেয়েটির মুণ্ডহীন দেহ। অবশ্য যাওয়ার আগে ওই ফ্ল্যাটে আগুন ধরিয়ে দেয় সে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে কাটা মাথাটা দোলাতে দোলাতে তা নিয়ে ঘোরাফেরা করছিল সে। মাঝে মাঝে নিজেকে ‘উড়িয়ে দেবে’ বলে চিৎকারও করছিল বোবোকুলোভা।
এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পর চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা শহরে। ঘটনার নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে তা জাতীয় টেলিভিশনে দেখাতে অস্বীকার করে রাশিয়া সরকার। যদিও স্থানীয় টেলিভিশনে তা ফলাও করে প্রচার করা হয়।
খোরোসেভস্কির জেলা আদালতে মামলার চলাকালীন আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত ছিল চার বছরের মেয়ে আনাস্তাসিয়া। তার দেখাশোনার জন্য বোবোকুলোভাকে নিয়োগ করা হলেও অসহায় শিশুটিকে নৃশংস ভাবে খুন করে সে। তার বিরুদ্ধে নাবালিকাকে খুন-সহ অগ্নিসংযোগ করা এবং বিস্ফোরণ ঘটানোর ভুয়ো দাবির অভিযোগে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে ২৫ বছর জেল হতে পারে বোবোকুলোভার।
ছবি: সংগৃহীত।
আরও পড়ুন