ব্রিটেনের একটি সমুদ্রতট। আর সেখানে থেকেই পাওয়া গেল প্রাচীন আমলের হ্যান্ড গ্রেনেড। কর্নওয়েলের লিজার্ড পেনিনসুলায় লেখক-ইতিহাসবিদ রবার্ট ফেল্স মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে এই হ্যান্ড গ্রেনেডের সন্ধান পান। আর এর সূত্র ধরে সম্প্রতি উদ্ধার হল প্রাচীন এক রণতরীর ধ্বংসাবশেষ।
২০১৭ সালে এই একই উপকূলে একই ধরনের হ্যান্ড গ্রেনেড মিলেছিল। সমুদ্র তটে ভেসে এসেছিল এটি। প্রথমে পাথর ভাবলেও পরে বোঝা যায় এগুলি আসলে গ্রেনেড। এর পর থেকেই এর উত্সের খোঁজ শুরু হয়। খোঁজ মেলে প্রাচীন এক রণতরীর।
তবে এই হ্যান্ড গ্রেনেডগুলি মরক্কোর জলদস্যুদের তৈরি নাকি ব্রিটেনের সামরিক বাহিনীর তা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। রয়্যাল নেভির পণ্যবাহী জাহাজ শিড্যামের ধ্বংসাবশেষ থেকে মিলেছে এগুলি।
শিড্যাম আসলে ১৭ শতকের ওলন্দাজদের বাণিজ্যতরী। ১৬৮৩ সালে জলদস্যুরা এটি দখল করেছিল। পরবর্তীতে রয়্যাল নেভি এটি বাজেয়াপ্ত করে পণ্যবাহী রণতরী হিসাবে ব্যবহার করত। ১৯৭১ সালে এক বার এই জাহাজের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান মিললেও তা ডুবে যায় সমুদ্রের অতলে।
মরক্কোর তাঞ্জিয়ের্স থেকে সামরিক অস্ত্র নিয়ে আসত এই জাহাজ। সেটাও প্রায় ১৬৮৪ সাল নাগাদ।
জলদস্যুদের আক্রমণের পরেও কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন এই জাহাজের সব আরোহী। শুধুমাত্র জাহাজের কয়েকটি ঘোড়ার মৃত্যু হয়েছিল। তবে ওই আক্রমণে জাহাজটি ডুবে যায়।
শতকের পর শতক কেটে গেলেও সেই ডুবে যাওয়া জাহাজের আর খোঁজ মেলেনি। ১৯৭১ সাল নাগাদ ব্রিটেনের কর্নওয়েলের চার্চ কোভে এক ডুবুরী এর সন্ধান পান।
বিশাল বড় একটি কামানেরও সন্ধান মিলেছে এই জাহাজে। ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কামান ও হ্যান্ড গ্রেনেডগুলি ছিল জাহাজের তলদেশে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূর থেকে শত্রু নিধন করতে এই গ্রেনেডের জুড়ি মেলা ভার। এই গ্রেনেডগুলি সেই আমলের রসায়নবিদ ও প্রযুক্তিবিদদের চরম মেধার নিদর্শন, এমনটাই বলেন ফেল্স।
১১টি কামান, বন্দুকবাহী যান, বেশ কিছু গুলির বাক্স, বাক্সভর্তি হ্যান্ড গ্রেনেড মিলেছে এই জাহাজ থেকে। এক সামুদ্রিক ঝড়ের পর সমুদ্রের তলদেশে বালি সরে গিয়ে এই জিনিসগুলি বেরিয়ে পড়ে।
মরচে ধরা হ্যান্ড গ্রেনেডটি অবশ্য উদ্ধারের পরই দু’ভাগে ভাগ হয়ে ভেঙে যায়। ভিতর থেকে গান পাউডার বেরিয়ে আসে। এই গান পাউডারগুলি নাকি এখনও বিস্ফোরক হিসাবে ব্যবহার করা যায়। গবেষণা চলছে এই গান পাউডার নিয়ে।
যদিও লোহার জিনিসগুলির বেশির ভাগই এত বছর জলে থেকে মরচে ধরে গিয়েছে। ফেল্সের দাবি, আরও অনেক কিছু উদ্ধার হতে পারে কর্নওয়েলের লিজার্ড পেনিনসুলা থেকে।
মার্ক মিলবার্ন নামে এক ডুবুরী সংবাদ সংস্থাকে বলেন, জাহাজটির কাঠের বেশ কিছু অংশ এখনও অক্ষত। ৩ডি ফটোগ্রামেট্রি মডেলও তৈরি করেছেন ডেভিড গিবিনস নামে অপর এক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরী ও ইতিহাসবিদ।