দু’দিনের রক্তাক্ত সংঘর্ষের পরে ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে গাজা ও তার সীমান্তবর্তী এলাকা। তবে প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ইজরায়েলি সরকার আজ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, প্যালেস্তিনীয় হত্যার কোনও তদন্ত তারা করবে না।
প্যালেস্তিনীয়দের বিক্ষোভে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত ছিল গাজা। ইজরায়েল জোর করে তাঁদের জমি অধিগ্রহণ করে রেখেছে—প্যালেস্তাইনের এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত শুক্রবার থেকে ইজরায়েলের অধিকৃত এলাকায় ঢোকার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন প্রায় তিরিশ হাজার প্যালেস্তিনীয়। তাঁদের ঠেকাতে গুলি ছোড়ে ইজরায়েলের সেনা। ২০১৪ সালের পরে এত ভয়াবহ হিংসা দেখেনি গাজা সীমান্ত। শেষ দু’দিনেই সেখানে মৃত্যু হয়েছে প্রায় তিরিশ জন প্যালেস্তাইনীর। আহতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রপুঞ্জ। মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক প্রধান ফেডেরিকা মঘেরিনি-সহ আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন একযোগে ইজরায়েলি সেনার বিরুদ্ধে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে রকম কোনও তদন্তই তাঁরা করবেন না বলে আজ জানিয়ে দিয়েছে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাভিগডর লিবারম্যান।
উল্টে তাঁর দাবি, ‘‘এই দু’দিনে আমাদের সেনা যা করেছে, তার জন্য আমরা গর্বিত। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের নামে ইজরায়েল সীমান্তে কার্যত সন্ত্রাস চালাচ্ছিল প্যালেস্তাইন। তাদের যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছে হামাস গোষ্ঠীও। ইজরায়েল সীমান্তের নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছিল প্যালেস্তিনীয়রা। গুলিও ছোড়ে ওরা। তারই জবাব দিয়েছে আমাদের সেনা। তাই সেনার বিরুদ্ধে তদন্তের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’’
আরও পড়ুন: ফেসবুকের ছবিতে স্বপ্নপূরণ
এ কথা শুনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফে মঘেরিনির বক্তব্য, ‘‘নিজেদের সীমান্ত রক্ষার অধিকার যেমন ইজরায়েলের রয়েছে, তেমনই পাল্টা গুলির পরিমাণটাও এখানে সমান হওয়া উচিত ছিল।’’ ইজরায়েলের আবার বক্তব্য, গত শুক্রবার যে ১৭ জন প্যালেস্তিনীয়র মৃত্যু হয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্তত পাঁচ জন জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য।
ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের জমি বিবাদকে অন্য মাত্রা দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি তিনি জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়েছেন। আগামী ১৪ মে সেখানে মার্কিন দূতাবাস খোলার কথাও রয়েছে। আর তারই প্রতিবাদে ছ’সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছেন প্যালেস্তিনীয়রা। তবে এই ক’দিনে এত জন প্যালেস্তিনীয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। ইজরায়েলি সেনার এই হত্যাকাণ্ডে বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ আরবও।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আজ সারাদিন মোটের উপর শান্তই ছিল গাজা। নিহতদের শেষকৃত্যেই ব্যস্ত ছিলেন পরিজনেরা। ভবিষ্যতে ়বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য তৈরি হচ্ছে বলে জানালেন এক প্যালেস্তিনীয়।