শৃঙ্গজয়ের পথে। নির্মল পুরজা ও চাং দাওয়া-র (ইনি সামিট টিমে ছিলেন না) ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে।
‘মিশন ইমপসিবল’। শীতকালীন এই অভিযান শুরুর সময়ে যা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করেছিলেন অনেকে। কিন্তু শনিবার বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম কে-টু (৮৬১১ মিটার) শৃঙ্গ ছুঁয়ে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখালেন ১০ জন নেপালি শেরপার একটি দল। সেই সঙ্গে তাঁরা পর্বতারোহণে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন।
বিশ্বের ১৪টি আট হাজারি শৃঙ্গের মধ্যে শীতকালে কে-টু শৃঙ্গই এত দিন অধরা ছিল। এই শৃঙ্গে অভিযান চালাতে গিয়ে পর্বতারোহীদের মৃত্যুহার অনেক বেশি। সেই সঙ্গে শীতকালীন আবহাওয়া একে আরও দুর্গম এবং এত দিন অভেদ্য করে রেখেছিল। তবে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে শনিবার পাকিস্তানের স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা নাগাদ সেই শৃঙ্গ ছুঁয়ে ফেললেন ১০ নেপালি শেরপা— নির্মল পুরজা, গেলজে শেরপা, মিংমা ডেভিড শেরপা, মিংমা তেনজি শেরপা, দাওয়া তেম্বা শেরপা, পেম ছিরি শেরপা, মিংমা জি, কিলি পেম্বা শেরপা, দাওয়া তেনজিং শেরপা ও সোনা শেরপা। নির্মল পুরজা মাত্র ছ’মাসে ১৪টি আট হাজারি শৃঙ্গ জয় করে রেকর্ড করেছেন। সব ক’টি আট হাজারি শৃঙ্গজয়ী মিংমা জে এবং সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ১৪টি আট হাজারি শৃঙ্গজয়ী মিংমা ডেভিডও রয়েছেন এই দলে।
এ বছর শীতকালে অভিযান চালাতে ৬০ জন অভিযাত্রী ও শেরপা-সহ চারটি দল পাকিস্তানের দিক দিয়ে কে-টু বেসক্যাম্পে পৌঁছেছিল। তার পরে খারাপ আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁদের। হাওয়ার দাপটে ক্যাম্প টু থেকে জিনিস উড়ে গিয়েছে, এমনও ঘটেছে। এর পরে চারটি দলের মধ্যে থেকে বাছাই ১০ জনের শেরপা দল শনিবার রাত ১টা নাগাদ সামিটের উদ্দেশে রওনা হয়। ধরা হয়েছিল, ১২ ঘণ্টায় তাঁরা সামিটে পৌঁছবেন। তবে আরও কিছুটা সময় নিয়ে, পাকিস্তানি সময় বিকেল ৫টায় সামিট করেন তাঁরা। ১০ জনই যাতে একসঙ্গে শৃঙ্গে পৌঁছন, সে জন্য দলের কয়েক জন সদস্য সামিটের ১০ মিটার আগে অন্যদের জন্য অপেক্ষা করেন। নেপালি জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে তাঁরা শৃঙ্গ স্পর্শ করেন বলে জানা গিয়েছে। তবে এ দিনই ক্যাম্প ১ থেকে কে-টু বেসক্যাম্পে ফেরার পথে সেরগেই মিনগোতে নামে এক স্পেনীয় অভিযাত্রী মারা গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: নতুন করে করোনা আতঙ্কে ঘুম উড়েছে চিনের, নয়া ক্লাস্টার মিলল বেজিংয়েও
নেপালের পর্বতারোহণ আয়োজনকারী সংস্থা ‘সেভেন সামিট’-এর একটি বড় দল এ বারের শীতকালীন কে-টু অভিযানে অংশ নিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে এক জন শেরপা রয়েছেন ১০ জনের এই বিজয়ী দলে। এ দিন নেপাল থেকে ওই সংস্থার পক্ষে থানেশ্বর গুরাগাই বলেন, ‘‘পর্বতারোহণ এবং নেপালের জন্য এটা সবচেয়ে বড় খবর। ১০ জনই যাতে একসঙ্গে চূড়ায় আরোহণ করতে পারে, তাই দলের কয়েক জন প্রায় ২০-২৫ মিনিট সামিটের আগে অপেক্ষা করেছেন বলে জানতে পেরেছি। তবে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া কেউ সামিট করলেন কি না, তা এখনও জানা যায়নি।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, সামিট ছুঁয়ে এ দিন রাতে তাঁদের ক্যাম্প থ্রি-তে ফিরে আসার কথা রয়েছে। নেপালি শেরপাদের এই সাফল্যে খুশি, তেনজিং নোরগের ছেলে জামলিং নোরগে এ দিন দার্জিলিং থেকে ফোনে বললেন, ‘‘দারুণ খবর। তবে এই অভিযান থেকে যেটা শেখার তা হল টিম স্পিরিট। আজকাল নিজের জন্য সামিট করতে চান পর্বতারোহীরা। অন্যের জন্য ভাবার সময় নেই। অথচ এই শেরপারা একে অপরের অপেক্ষা করেছেন, একটা দল হিসেবে সামনে এগিয়েছেন, কেউ একা কৃতিত্ব নিতে চাননি। আগামী প্রজন্মের এঁদের দেখে শেখা উচিত।’’
আরও পড়ুন: ‘আনন্দ’ দিতে আয়োজন, এই রেস্তোরাঁয় মিলছে গাঁজা পাতা মেশানো খাবার