দুর্গম পথ আর অবাধ্য আবহাওয়া উপেক্ষা করে পাড়ি দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে সব সময়ই প্রস্তুত রোমাঞ্চ প্রিয় মানুষ। সারা বিশ্বেই ম্যারাথন দৌড় ভীষণ জনপ্রিয়। শারীরিক ও মানসিক ভাবে যে সব মানুষ খুব শক্ত, তাঁরাই মূলত ম্যারাথনে অংশ নিয়ে থাকেন। বিশ্বে এমন অনেক ম্যারাথন দৌড় আছে, যেগুলো বেশ কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এই রকম দশটি ম্যারাথন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ম্যারাথন দে সাব্ল: ২৫১ কিলোমিটার রাস্তা ছয় দিন ধরে দৌড়ে পার করতে হয় এই ম্যারাথনে। প্রতি বছর দক্ষিণ মরক্কোয় এই ম্যারাথন হয়। সাহারা মরুভূমির উপর দিয়ে লক্ষ্যের দিকে ছুটে যেতে হয় প্রতিযোগীদের। ১৯৮৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এই ম্যারাথনকে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ম্যারাথন মনে করা হয়। ১৯৮৪ সালে ফরাসি কনসার্ট প্রোমোটার প্যাট্রিক বওয়ার পায়ে হেঁটে একা সাহারা মরুভূমি পার করেছিলেন। ১২ দিনে ৩৫০ কিলোমিটার পথ হেঁটেছিলেন তিনি। এর দু’বছর পর থেকেই তাঁর অনুপ্রেরণায় সাহারার বুকে ম্যারাথন শুরু হয়।
৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গরম বালির উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হয় প্রতিযোগীদের। সম্মুখীন হতে হয় মরুঝড়ের। খুব কম লোকই এই দীর্ঘ এবং দুরূহ পথ অতিক্রম করতে সক্ষম হন। ১৯৯৪ সালে মউরো প্রোসপারি নামে ইটালির এক প্রতিযোগী মরুঝড়ের মধ্যে পড়ে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। ন’দিন পর তাঁকে উদ্ধার করা গিয়েছিল। এই ন’দিন তিনি বাদুড়ের রক্ত এবং নিজের মূত্র পান করে বেঁচেছিলেন।
দ্য গ্রেট ওয়াল ম্যারাথন: প্রতি বছর মে মাসের তৃতীয় শনিবার চিনের প্রাচীরের উপর এই ম্যারাথন দৌড় হয়ে থাকে। তবে পুরো প্রাচীর জুড়ে হয় না। তিয়ানজিন প্রদেশের হুয়াংজিয়াহুয়াং (চিনের প্রাচীর একটি অংশ)-এ এই দৌড় হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু হয় এই ম্যারাথন। পাথুরে পথ বেয়ে প্রায় পাঁচ হাজার ১৬৪ ধাপ ওঠানামা করতে হয় প্রতিযোগীদের, যা একেবারেই সহজ নয়।
স্পার্টাথলন: ১৯৮৩ সাল থেকে চলে আসা গ্রিসের আলট্রাম্যারাথন এটি। ২৪৬ কিলোমিটার পথ পার করতে হয় এই ম্যারাথনে। ইয়ানিস কিউরোস প্রথম ব্যক্তি, যিনি এই ম্যারাথন জয়ী হয়েছিলেন। মাত্র ২০ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে এই দূরত্ব অতিক্রম করেছিলেন তিনি। তাঁর রেকর্ড এখনও কেউ ভাঙতে পারেননি।
দ্য বার্কলে ম্যারাথন: দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকার টেনেসিতে বরফাবৃত পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ১৬০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করা। প্রতি বছর মার্চের শেষে কিংবা এপ্রিলের শুরুতে এই ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়। ৬০ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার খাড়াই রাস্তা পেরোতে হয় প্রতিযোগীদের। খুব কম প্রতিযোগীই সফল হন।
এভারেস্ট ম্যারাথন: তেনজিং-হিলারি এভারেস্ট ম্যারাথন বিশ্বের সর্বোচ্চ ম্যারাথন। তেনজিং নোরগে এবং এডমন্ড হিলারির অনুপ্রেরণাতেই প্রতি বছর ২৯ মে এই ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়। মাউন্ট এভারেস্ট-এর বেস ক্যাম্প থেকে শুরু হয়। ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারেন প্রতিযোগীরা। তিন ভাবে বিভক্ত এই ম্যারাথন। ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত ‘এক্সট্রিম আলট্রা’, ৪২ কিলোমিটার পর্যন্ত ‘ফুল ম্যারাথন’ এবং ২১ কিলোমিটার পর্যন্ত হাফ ম্যারাথন। রাস্তা কতটা দুর্গম, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ড্রাগন’স ব্যাক রেস: ড্রাগনের পিঠের উপর দিয়ে দৌড়নো যতটা কঠিন, এ ক্ষেত্রেও প্রায় তেমন অভিজ্ঞতা হয় প্রতিযোগীদের। সে কারণেই ম্যারাথনের নাম রাখা হয়েছে ‘ড্রাগন’স ব্যাক রেস’। উত্তর ওয়েলস থেকে দক্ষিণ ওয়েলস পর্যন্ত দীর্ঘ পাহাড়ি পথ অতিক্রম করতে হয় এই ম্যারাথনে। অত্যন্ত খাড়া পাথুরে পথে পা পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। ছ’দিনে এই পথ অতিক্রম করতে পারলেই জয়। ১৯৯২ সালে সেপ্টেম্বর থেকে এর সূত্রপাত। এখনও পর্যন্ত মাত্র পাঁচবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পোলার সার্কল ম্যারাথন: গ্রিনল্যান্ড-এ প্রতি বছর এটি অনুষ্ঠিত হয়। ৪২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয় প্রতিযোগীদের। অত্যন্ত ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য খুব কম সংখ্যকই এতে অংশ নেন। ২০০১ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এটি। বরফে ঢাকা পথ অতিক্রম করতে হয় প্রতিযোগীদের। যা অত্যন্ত দুরূহ।
৬৬৩৩ আর্কটিক আলট্রা: কানাডায় অনুষ্ঠিত হয় এই ম্যারাথন। ৫৩৬ কিলোমিটার বরফ পথ অতিক্রম করতে হয় এতে। প্রাকৃতিক দৃশ্য যতটা সুন্দর, চলার পথ ততটাই দুর্গম।
দ্য পোলার নাইট হাফ ম্যারাথন: ৬৬৩৩ আলট্রা ম্যারাথনের মতোই দুর্গম এর রাস্তাও। নরওয়েতে অনুষ্ঠিত হয় এটি।
দ্য জঙ্গল আলট্রা: পেরুর জঙ্গলে অনুষ্ঠিত হয় এই ম্যারাথন। বন্যপ্রাণীতে ভরপুর এই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে, দৌড়ে যেতে হয় প্রতিযোগীদের। পেরোতে হয় ২২৫ কিলোমিটার পথ।