রাজ্যসভার মেয়াদ ফুরনোর আগেই কোনও সাংসদ লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়ে জনমত যাচাই করতে যাবেন কেন, এই হল প্রচলিত যুক্তি। কিন্তু এ বারের লোকসভা ভোটে সেই প্রচলিত তত্ত্ব ভেঙে দিচ্ছে কংগ্রেস এবং বিজেপি, দুই সর্বভারতীয় দলই। বিজেপি যেমন অমৃতসরে প্রার্থী করেছে রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলিকে, তেমনই এ রাজ্যের হুগলি আসনে প্রার্থী হয়েছেন চন্দন মিত্র। আবার কংগ্রেস পঞ্জাবের আনন্দপুর সাহিব কেন্দ্র থেকে প্রাথর্ীর্ করেছে অম্বিকা সোনিকে। তা হলে এ রাজ্যে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ব্যতিক্রম হলেন কেন, প্রশ্ন উঠছে দলের ভিতরে-বাইরে।
দলের তালিকা ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরে প্রদীপবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, প্রার্থী হতে তাঁর আপত্তি ছিল না। দলের সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী তথা কংগ্রেস হাইকমান্ড তাঁকে যে দায়িত্ব দেবেন, তিনি তা পালন করতে বাধ্য। সনিয়া আপাতত তাঁকে রাজ্যে প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান করেছেন। তাই সেই দায়িত্বই পালন করছেন প্রদীপবাবু। এখানে তাঁর সরে দাঁড়ানোর কোনও প্রশ্ন নেই বলেই জানিয়েছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
রাজ্যসভায় এখনও প্রায় সাড়ে তিন বছর বাকি আছে প্রদীপবাবুর। তা হলে এখন কেন আর লোকসভায় দাঁড়াতে যাবেন, এই প্রশ্ন তুলে তিনি প্রাথমিক ভাবে প্রার্থী হতে আপত্তি প্রকাশ করেছিলেন বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। কিন্তু পঞ্জাব ও মধ্যপ্রদেশ থেকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত কংগ্রেস এবং বিজেপি-র দুই নেতা-নেত্রী অম্বিকা ও চন্দনবাবু, দু’জনেরই মেয়াদ ফুরোতে এখনও আড়াই বছর বাকি। দলের স্বার্থে তাঁরা লোকসভায় প্রার্থী হয়েছেন। তা হলে প্রদীপবাবুর ক্ষেত্রে তেমন হল না কেন? প্রদীপবাবু শনিবার বলেছেন, “বিজেপি-র কথা বলতে পারব না। আমার প্রার্থী হতে রাজি না-হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছিলাম, আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে, পালন করব।” কংগ্রেসের হাইকম্যান্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করার সাধ্য কারওরই নেই বলে প্রদীপবাবুর যুক্তি। প্রসঙ্গত, প্রথমে আপত্তি করেও পরে রাহুল গাঁধীর এ রাজ্যেই প্রার্থী হতে রাজি হয়েছেন মানস ভুঁইয়া, আব্দুল মান্নানেরা। প্রথম সারির কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে তালিকায় নাম নেই শুধু প্রদীপবাবুর।
প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশের আরও বক্তব্য, প্রদেশ সভাপতি থেকে শুরু করে প্রথম সারির সব নেতাই নিজেরা প্রার্থী হয়ে যাওয়ায় রাজ্যে দলের প্রচারের দায়িত্ব নেওয়ার মতো তেমন কেউ আর নেই। এই পরিস্থিতির কথাও হাইকম্যান্ডকে মাথায় রাখতে হয়েছে। কংগ্রেসের এক রাজ্য নেতার কথায়, “রাজ্যে পরিচিত মুখদের ভোটে নামানোর যুক্তি মেনে নিয়েও প্রচারের দিকটা খেয়াল রাখতে হতো। হাইকম্যান্ড তাই প্রদীপদা’কে সেই দায়িত্ব দিয়েছে।”