লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে বাম কর্মীদের উপরে শাসক দলের সন্ত্রাস বন্ধ করতে এ বার স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হচ্ছে রাজ্য বামফ্রন্ট। তিন বছরে এই প্রথম মমতার কাছে দাবিপত্র নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য বামফ্রন্ট। নতুন সরকার আসার পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বারকয়েক আলোচনা হয়েছিল বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের। তার পরে বামেদের নানা গণ সংগঠন বা সিপিএমের একাধিক জেলা কমিটির তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবিপত্র দেওয়ার চেষ্টা হলেও মমতা কোনও বারই সময় দেননি। এ বার শাসক দলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ নিয়ে রাজ্য বামফ্রন্ট তাঁর কাছে দরবার করতে চাইলে মুখ্যমন্ত্রী কী অবস্থান নেবেন, প্রশ্ন থাকছেই।
বামফ্রন্টের বৈঠকে মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “আগে একাধিক বার রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছি। তাতে ফল না হওয়ায় এ বার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সরাসরি আবেদন করতে চাই।” বিমানবাবু জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী যখন সময় দেবেন, তখনই তাঁরা যাবেন। অতীতের দৃষ্টান্ত টেনে তিনি জানান, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলে বাম কর্মীদের উপরে সন্ত্রাস বন্ধের জন্য তাঁরা তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই গিয়েছিলেন। তবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বামেদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে চাননি। তাঁর মন্তব্য, “এমনিতেই ওঁদের কোনও বিষয় নেই। জনভিত্তি নেই। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই ওঁরা এ কাজ করছেন।”
লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ে এক দিকে যেমন বামেরা রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, অন্য দিকে আবার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বাম কর্মী-সমর্থকেরা তৃণমূলের হাতে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ফ্রন্ট বৈঠকে এ দিন সিপিএম, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই সব দলের নেতারাই এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। শরিক নেতারা জানান, সব থেকে বেশি আক্রমণ হচ্ছে কোচবিহার জেলায়। ঘর-বাড়ি, ফসল জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মারধর করা হচ্ছে। শরিক নেতারা বলেন, নিচু তলার কর্মীদের বাঁচানোই এখন ফ্রন্টের লক্ষ্য হওয়া দরকার।
আক্রমণের পরে আক্রান্তদের পাশে নেতারা দাঁড়াতে যাচ্ছেন না কেন, তা নিয়ে নিচু তলায় অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। আবার পিঠ বাঁচাতে বাম শিবির ছেড়ে অনেকে বিজেপি-তে যাচ্ছেন। এই প্রসঙ্গ তুলেছিলেন কিছু শরিক নেতা। বিমানবাবু ব্যাখ্যা দেন, আক্রান্তদের কাছে যেতে তাঁদের কোনও আপত্তিই নেই। কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় নেতারা ঘুরে চলে আসার পরে কর্মী-সমর্থকদের উপরে আরও আক্রমণ হয়েছে। শরিক নেতারাও এই যুক্তি মেনে নেন। ঠিক হয়, বামফ্রন্টের রাজ্য নেতাদের নিয়ে উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণবঙ্গের জন্য তিনটি পৃথক প্রতিনিধিদল গড়ে তোলা হবে। জেলার নেতারা পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্ট দিলে ওই প্রতিনিধিদলই ঘটনাস্থলে যাবে। বিমানবাবুর কথায়, “হাড়োয়ায় আক্রান্তেরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিল। আর ভাঙড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না।” কিন্তু এ বার এ ধরনের প্রতিটি ঘটনায় যাওয়া ও জেলা স্তরে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্রন্ট।