সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইকে শক্তিশালী করতে সব বামপন্থী দলকেই পাশে চাইছে আলিমুদ্দিন। কেন্দ্রে বিজেপির ক্ষমতায় আসা এবং এ রাজ্যে ক্রমশ তাদের বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ধর্মনিরপেক্ষ মঞ্চকে প্রসারিত করার চেষ্টা চালাচ্ছিল সিপিএম। বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় জেহাদি-যোগের কথা প্রকাশ্যে আসার পরে আরও প্রমাদ গুনছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসুরা। হিন্দু হোক বা মুসলিম, যে কোনও ধরনের মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধেই যে এখন সর্বশক্তি নিয়ে নামতে হবে, বুঝতে পারছেন তাঁরা। সেই লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে তৎপরতা।
চলতি মাসেই পরপর কয়েকটি কর্মসূচিতে বামফ্রন্টের ভিতরের ও বাইরের বাম দলগুলির যৌথ সমাবেশ ঘটতে চলেছে। পুজোর মুখেই বামফ্রন্টের বৈঠক করে বিমানবাবুরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের গোড়ায় সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী একটি কনভেনশন হবে। সেই আসরে যাতে ছোট-বড় সব বাম দলকে পাশে পাওয়া যায়, তার জন্য নিজেই যোগাযোগ শুরু করেছেন বিমানবাবু। এর আগে কলকাতায় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী মিছিলেও বামফ্রন্টের বাইরের কিছু বাম দলকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তখনও বাছবিচার করে কিছু বাম দলকে ডাকা হয়নি। এ বার ফ্রন্টের কিছু শরিক দল এবং বাইরে অসীম চট্টোপাধ্যায়ের মতো বাম নেতারা দাবি তোলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাইলে সব বাম দলকেই ডাকতে হবে। সেই মতোই সোম ও মঙ্গলবার বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবু নিজেই যোগাযোগ করেছেন পিডিএসের মতো বাম দলের সঙ্গেও, যারা সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী মিছিলে বাদ পড়েছিল!
ঠিক হয়েছে, আগামী ১৭ অক্টোবর এসইউসি, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, পিডিএস, অসীমবাবু এবং সন্তোষ রানার দল-সহ বামপন্থী নানা দলকে নিয়ে একটি প্রস্তুতি বৈঠক হবে। সেখানেই চূড়ান্ত হবে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কনভেনশনের নির্ঘণ্ট। তবে নকশালপন্থী কিছু দলের সঙ্গে একত্র উপস্থিতি নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুর কিছু আপত্তি আছে। শেষ পর্যন্ত এই সব দলকে নিয়ে সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী কনভেনশন হলে বুদ্ধবাবু সেখানে যান কি না, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে বাম শিবিরেই!
তার আগে ১০ অক্টোবর মৌলালি যুব কেন্দ্রে পিডিএসের প্রয়াত নেতা সৈফুদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভাতেও একই ভাবে বৃহত্তর বাম সমাবেশ ঘটবে। বিমানবাবুর নিজেরই সেই স্মরণসভায় যাওয়ার কথা। সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ সফির মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের সকলকেই স্মরণসভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীর পূততুণ্ড। তৃণমূলের তরফে দলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা।
সিপিআই নেতা ভূপেশ গুপ্তের জন্মশতবর্ষ শুরু হচ্ছে ২০ অক্টোবর থেকে। সেই উপলক্ষে সিপিআইয়ের নেতারা তৎপর হয়েছেন সর্বভারতীয় বাম নেতৃত্বকে কলকাতায় এনে এমন সমাবেশ ঘটাতে, যেখানে বৃহত্তর বাম ঐক্যের চেহারা ধরা পড়তে পারে। ফ্রন্ট শরিক ও বাইরের বাম দলগুলিকে নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠকের দিনই (১৭ তারিখ) অবশ্য সিপিএমের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানও রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, বিমানবাবুই হবেন এ বারের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর বক্তা। তবে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটকে কলকাতায় কোনও অনুষ্ঠানে হাজির করানোর চেষ্টাও জারি আছে।