লক্ষ্য বেসরকারি সংস্থার হাত ধরে রক্ষণাবেক্ষণ

স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো কাজে লাগাতে উদ্যোগ

স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের খরচ তোলার জন্য এ বার তার পড়ে থাকা পরিকাঠামো সদ্ব্যবহার করতে বেসরকারি সংস্থার হাত ধরতে চলেছে রাজ্য। যাতে তাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে (পিপিপি মডেল) সামিল হয়ে উসুল করা যায় স্টেডিয়ামগুলির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:২৮
Share:

স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের খরচ তোলার জন্য এ বার তার পড়ে থাকা পরিকাঠামো সদ্ব্যবহার করতে বেসরকারি সংস্থার হাত ধরতে চলেছে রাজ্য। যাতে তাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে (পিপিপি মডেল) সামিল হয়ে উসুল করা যায় স্টেডিয়ামগুলির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। চেষ্টা করা যায় স্টেডিয়াম পরিচালনায় মুনাফার মুখ দেখার। যাতে বাজেটে সেই খাতে তুলে রাখা বরাদ্দ ব্যবহার করা যায় রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও ভাল খেলোয়াড় তুলে আনার উপযুক্ত ক্রীড়া পরিকাঠামো গড়ার কাজে।

Advertisement

এই পরিকল্পনার একেবারে প্রথম ধাপে তিনটি স্টেডিয়ামকে বেছে নিয়েছে ক্রীড়া দফতর। রবীন্দ্র সরোবর, নেতাজি ইন্ডোর এবং যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, আপাদমস্তক পেশাদারি ঢঙে এই তিন স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো ব্যবহার করতে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সামিল হতে চায় তারা। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে উপদেষ্টা সংস্থা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। এই কাজের জন্য রাজ্যের খাতায় নথিভুক্ত কেপিএমজি, পিডব্লিউসি, আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং-সহ মোট ন’টি সংস্থার মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়া হবে। তাই তাদের কাছে দরপত্র চেয়েছে ক্রীড়া দফতর। সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, তার জন্য শেষ দিন ধার্য করা হয়েছে ২১ এপ্রিল। সপ্তাহ তিনেক আগে দফতরে ডাকা হয়েছে প্রি-বিড বৈঠকও।

আর্থিক টানাপড়েনে জেরবার রাজ্য নিত্যকার খরচ জোগাতেই হিমসিম। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই পরিস্থিতিতে বাজেটে ক্রীড়া দফতরের জন্য যে-টাকা বরাদ্দ রয়েছে, তা সিন্ধুতে বিন্দুর মতো। কারণ, ১০০ কোটির সামান্য বেশি ওই বরাদ্দে স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সামলে নতুন করে খেলার পরিকাঠামো তৈরি বা তার উন্নয়ন বেশ শক্ত। তাই অন্তত স্টেডিয়ামগুলির রক্ষণাবেক্ষণের টাকা যদি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তুলে আনা যায়, তবে সমস্যার কিছুটা সুরাহা হতে পারে বলে রাজ্যের অভিমত। বিশেষত যেখানে কলকাতায় কিংবা শহরতলিতে ওই ধরনের পরিকাঠামোর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, কাজের দুনিয়ায় চাপ যে-ভাবে বাড়ছে, তাতে বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছে মানুষ। আর সেই চাহিদা আঁচ করে জিম কিংবা যোগব্যায়াম কেন্দ্র গজিয়ে উঠছে শহরের আনাচে-কানাচে। জিমে কসরত করার জন্য এখন মাসে ৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকা ফেলতেও রাজি হয়ে যাচ্ছেন অনেক শহরবাসী। কিন্তু চাহিদা যে-পরিমাণে রয়েছে, জোগান এখনও সে-তুলনায় নগণ্য।

একই কথা প্রযোজ্য সুইমিং পুলের ক্ষেত্রেও। সেখানে ছোটদের ভর্তির খরচ গড়ে ১০০০-১,২০০ টাকা। বড়দের ক্ষেত্রে ২,০০০ টাকার মতো। শহরের একটি বহুল পরিচিত সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে আসেন প্রায় ৪০০ জন। ফলে তাঁদের কাছ থেকে মাথাপিছু আয় ১,৫০০ টাকা ধরলেও, ফি-মাসে কর্তৃপক্ষের রোজগার ৬ লক্ষ টাকা। সেখানে ২৫ বাই সাড়ে ১২ ফুটের একটি পুল রক্ষণাবেক্ষণের খরচ প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকার কাছাকাছি। ফলে ট্রেনার-সহ আরও আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়েও তাদের মুনাফা থাকে যথেষ্ট।

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, জিম কিংবা সুইমিং পুলের এই অঙ্ক মাথায় রেখেই এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য। কারণ তারা মনে করছে, জিম বা সুইমিং পুলের মতো করে এ বার তিন স্টেডিয়ামের বিপুল সরঞ্জাম ও পরিকাঠামোর দরজাও যদি খুলে দেওয়া যায়, তা হলে সাধারণ মানুষের সুবিধা। আবার লাভ সরকারেরও। অন্তত রক্ষণাবেক্ষণের খরচটুকু উঠে আসবে সেখান থেকে।

এমনিতে স্টেডিয়ামগুলির পরিকাঠামো সারা বছর একই ভাবে ব্যবহৃত হয় না। একটা বড় সময় জুড়ে স্রেফ পড়ে থেকে ধুলো খায়। তাই এ বার থেকে তার বদলে কী ভাবে তাকে অর্থকরী করে তোলা সম্ভব, সেই পথ খুঁজতেই উপদেষ্টা সংস্থার পরামর্শ চাইবে রাজ্য। শুধু তা-ই নয়। প্রথম দফায় হাতে নেওয়া ৩টি স্টেডিয়ামে আসন সংখ্যাও যথেষ্ট বেশি। ফলে বাণিজ্যিক ভাবে তা ভাড়া দেওয়া যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হতে পারে।

উল্লেখ্য, নেতাজি ইন্ডোর যে রাজ্য আগে কখনও ভাড়া দেয়নি, তা নয়। তবে তা দিয়েছে মাঝে-মধ্যে। ইচ্ছেমতো দরে। মেজাজ-মর্জি অনুযায়ী। পেশাদারিত্বের কোনও ছোঁয়া সেখানে ছিল না। বরং সে দিক থেকে সরকারি পরিকাঠামোর সফল বাণিজ্যিক ব্যবহারের ভাল উদাহরণ মিলনমেলা প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রদর্শনীর জন্য যা ভাড়া দিয়ে আয়ের পথ তৈরি করেছে শিল্প দফতর। এ বার স্টেডিয়ামের পরিকাঠামোকে সে ভাবে ব্যবহার করতে চায় ক্রীড়া দফতরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement