সাত্তোর

সিআইডি-র চার্জশিটে ধোঁয়াশা, ফেরালেন বিচারক

পাড়ুইয়ের বধূকে নির্যাতনের মামলায় দু’মাসের মধ্যে চার্জশিট দিয়েও নিম্ন আদালতে ধাক্কা খেল সিআইডি। বৃহস্পতিবার ওই চার্জশিটের বেশ কিছু ফাঁকফোকর নিয়ে প্রশ্ন তুলে তদন্তকারী অফিসারের কৈফিয়ত চাইলেন সিউড়ির মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়। যে কৈফিয়ত দিতে পারলে তবেই চার্জশিটটি আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, নচেত নয়। সিউড়ি আদালতের সরকারি আইনজীবী কুন্তল চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “চার্জশিটে কিছু বিষয়ে ধোঁয়াশা দেখতে পেয়েছেন বিচারক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০৩:২২
Share:

পাড়ুইয়ের বধূকে নির্যাতনের মামলায় দু’মাসের মধ্যে চার্জশিট দিয়েও নিম্ন আদালতে ধাক্কা খেল সিআইডি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ওই চার্জশিটের বেশ কিছু ফাঁকফোকর নিয়ে প্রশ্ন তুলে তদন্তকারী অফিসারের কৈফিয়ত চাইলেন সিউড়ির মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়। যে কৈফিয়ত দিতে পারলে তবেই চার্জশিটটি আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, নচেত নয়। সিউড়ি আদালতের সরকারি আইনজীবী কুন্তল চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “চার্জশিটে কিছু বিষয়ে ধোঁয়াশা দেখতে পেয়েছেন বিচারক। সেগুলি পরিষ্কার করে বোঝার পরেই সিদ্ধান্ত নেবেন।” মঙ্গলবার ফের মামলার শুনানি। সে দিন তদন্তকারী অফিসার ও অভিযোগকারীকে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ দিনই সিআইডি তদন্তের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে সেই দায়িত্ব কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দেওয়ার আবেদন হাইকোর্টে জমা করেন নির্যাতিতা। তাঁর অভিযোগ, “পুলিশ শুরু থেকেই মামলা প্রত্যাহারের জন্য ভয় দেখাচ্ছে। আজ হাইকোর্টে আসার পথেও ওরা ভয় দেখিয়েছে।” তাঁর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজির দাবি, “রাজ্য সরকারের তদন্তকারী সংস্থা নির্দিষ্ট কয়েক জন ব্যক্তিকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।” চার্জশিট নিয়ে সিউড়ি আদালতের অসন্তোষেও তাঁদের বক্তব্যের প্রমাণ রয়েছে বলে বধূর পরিবার মনে করছে।

Advertisement

গত ১৭ জানুয়ারি সাত্তোরের এক বিজেপি সমর্থককে খুঁজতে বর্ধমানের বুদবুদ থানার কলমডাঙা গ্রামে তাঁর কাকিমার বাপের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়েছিল পাড়ুই থানার পুলিশ। ওই কর্মীকে না পেয়ে তাঁর কাকিমাকেই পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ ও তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী অকথ্য অত্যাচার চালান বলে অভিযোগ। এই নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হয়ে যাওয়ায় রাজ্য সরকার সিআইডি-কে তদন্তের ভার দেয়। সোমবার বিকেলে সিউড়ি কোর্ট অফিসে সিআইডি চার্জশিট জমা দিয়েছিল। আদালত তা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করবে কি না, এ দিন ছিল তারই শুনানি। কুন্তলবাবু জানান, ওই ঘটনায় স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের (এসওজি) ওসি কার্তিকমোহন ঘোষ, দুই কনস্টেবল দীপক বাউড়ি ও কাশীনাথ দাস, ইলামবাজার থানার মহিলা কনস্টেবল আলপনা লোহার জড়িত বলে চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে। অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও জামিনঅযোগ্য ধারা দেওয়া হয়নি। এ দিন নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি, দায়ের হওয়া দু’টি পৃথক অভিযোগ এবং ঘটনার অভিঘাতের প্রসঙ্গ তুলে চার্জশিটের বেশ কিছু অসম্পূর্ণতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ম্যাজিস্ট্রেট।

কী রকম অসম্পূর্ণতা? ঘটনার পরেই নির্যাতিতার স্বামী পাড়ুই থানায় লিখিত অভিযোগে ছয় তৃণমূল কর্মী এবং ‘কিছু পুলিশকর্মী’ জড়িত বলে জানিয়েছিলেন। দিন দুই পরে বধূর বাপের বাড়ির তরফে বুদবুদ থানায় আবার পৃথক একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। তাতে এসডিপিও (বোলপুর), সিআই (বোলপুর), ওসি এসওজি, তৃণমূল কর্মী শেখ আজগর-সহ কয়েক জনের নাম ছিল। অথচ সিআইডি চার্জশিটে অভিযুক্তদের মধ্যে এক মাত্র কার্তিকমোহন ঘোষ ছাড়া আর কারও নাম রাখেনি। বুদবুদ ও পাড়ুই থানায় দায়ের হওয়া অন্য অভিযুক্তদের ভূমিকা ঠিক কী ছিল, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানানোও হয়নি।

আরও একটি বিষয়ে বিচারক এবং সরকারি আইনজীবী, দু’জনেই তাঁদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। তা হল, চার্জশিটে যে চার জনের নাম রয়েছে, তাঁদের ৪১ (এ) ধারায় ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা সন্তুষ্ট বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি, অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে কী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। নির্যাতিতার মতে, “সিআইডি তৃণমূলের নির্দেশ মেনে কাজ করছে। সেই কারণেই অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মী ও পুলিশকর্মীদের ওরা গ্রেফতার করেনি।” সিআইডি-র তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement