শেষ পর্যায়। চলছে রাষ্ট্রপতি ভবন চত্বরে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র
কেউ বাড়িতে ময়রা ডেকে তৈরি করাচ্ছেন লাড্ডু, কেউ আবার ছুটছেন মিষ্টির দোকানে বরাত দিতে। এলসিডি টিভি জোগাড় করতে দোকানে-দোকানে ঢুঁ মারছেন কিছু নেতা। নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ ঘিরে জেলায় জেলায় বিজেপি শিবিরে এখন এমনই সাজো সাজো রব।
মধ্য কলকাতার ৬, মুরলীধর সেন রোডে রাজ্য বিজেপি-র সদর দফতরেও উৎসবের প্রস্তুতি তুঙ্গে। শনিবার থেকে কমলা আলোয় মুড়ে ফেলা হয়েছে দফতর। রবিবার সকাল থেকে কলকাতার নানা এলাকা তো বটেই, বহু জেলার কর্মীরাও দফতর থেকে মোদীর প্রমাণ সাইজের কাট-আউট নিয়ে গেলেন। দফতরের সামনে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিটি সাজানো হয়েছে। রাস্তায় বাঁধা হয়েছে প্যান্ডেল। আজ, সোমবার সকাল থেকে দলের নেতা-কর্মীরা এবং সাধারণ মানুষ শ্যামাপ্রসাদের মূর্তিতে মালা দেবেন। মিষ্টিমুখেরও আয়োজন রয়েছে। রাজ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি, পদাধিকারী, জনসংঘের প্রাক্তন নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান দেখাতে রাস্তায় থাকছে জায়ান্ট স্ক্রিন। জায়ান্ট স্ক্রিনে শপথগ্রহণ দেখানোর উদ্যোগে পিছিয়ে নেই বিভিন্ন জেলার বিজেপি নেতৃত্বও। উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়ি-সহ সব ক’টি শহরেই এই ব্যবস্থা থাকছে। সঙ্গে কোথাও যজ্ঞ, কোথাও মিষ্টি বিলি, কোথাও আবার চা-চক্র।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাঁকুড়ায় বিজেপি-র সহ সভাপতি মুরালীলাল শর্মার বাড়িতে তৈরি হচ্ছে আড়াই কুইন্টাল মতিচূরের লাড্ডু।
মালদহের ইংরেজবাজার পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডেই জায়ান্ট স্ক্রিন রাখছে বিজেপি। মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহরে কয়েকটি মোড়ে জায়ান্ট স্ক্রিন এবং বিভিন্ন এলাকায় এলসিডি টিভি থাকছে। মোদীর মঙ্গল কামনায় রবিবার জেলা কার্যালয়ে যজ্ঞও করা হয়েছে বলে জানান দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়। বাঁকুড়া শহরে নানা জায়গায় টিভি বসানোর জন্য রবিবার দিনভর দৌড়ে বেড়ালেন বিজেপি-র জেলা সম্পাদক নীলাদ্রিশেখর দানা। দলের জেলা সহ-সভাপতি মুরারিলাল শর্মা আবার বাড়িতেই ময়রা ডেকে লাড্ডু তৈরি করাচ্ছেন। তিনি বলেন, “মোতিচুরের লাড্ডু মোদীজির খুব প্রিয়। তাই ফল বেরোনোর পরেই ঠিক করি, শপথগ্রহণের দিন বাঁকুড়ার মানুষের মধ্যে এই লাড্ডু বিলি করব।”
লাড্ডু পাকানো হচ্ছে বীরভূমের দুবরাজপুরেও। শপথগ্রহণের সময়ে শহরের বাসস্ট্যান্ডে মিষ্টি বিলির ব্যবস্থা করেছেন দুর্গাপুরের বিজেপি নেতারা। তখন আবার সেখানে দলের কর্মীরা শাঁখ বাজাবেন। হাওড়ার নানা জায়গাতেও লাল পাড়-সাদা শাড়ি পরে শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি দেবেন দলের মহিলা কর্মীরা। হুগলির চুঁচুড়ায় ঘড়ির মোড়ে দিনভর অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা সেরে ফেলেছে বিজেপি।
কিন্তু, যেখান থেকে এ বার ভোটে জিতে সাড়া ফেলে দিয়েছেন বিজেপি-র বাবুল সুপ্রিয়, সেই আসানসোল আশ্চর্যরকম চুপচাপ। কোথাও উৎসবের প্রস্তুতি নেই। বিজেপি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকারকে রবিবার ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, “আমি তো ভাই দিল্লির পথে!” দিল্লি কেন? তাঁর জবাব, “রাজধানীতে থেকে মোদীজির শপথগ্রহণ উৎসবের আঁচ নিতে চাই। তাই ভলভো ভাড়া করে ব্লক সভাপতিদের নিয়ে দিল্লি রওনা হয়েছি।” নেতারাই যখন দিল্লিতে, তখন এলাকায় উৎসব করবেন কে!