ওঁরা কলা বেচার লোক। সে রথ হোক বা পয়লা বৈশাখ ছুতো পেলেই হল।
আপাতত ভোট শিয়রে, নববর্ষ দুয়ারে। অতএব কেউ কার্ড ছাপিয়ে বিলোচ্ছেন। কেউ ক্যালেন্ডার। কেউ গান গাইছেন। মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ছে কারও ভয়েস মেসেজ শুভ নববর্ষ। ভোটার শুনছেন ভোটটা আমায় দেবেন প্লিজ...।
ভোট নিয়ে বহরমপুরের মানুষ কতটা অধীর, সে অন্য কথা। মঙ্গলবার নববর্ষের সকালে তৃণমূলের গায়ক প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেন নেমে পড়ছেন প্রভাতফেরিতে। রবীন্দ্রসদন লাগোয়া সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন ময়দান থেকে বহরমপুর শহরের বিভিন্ন প্রান্ত মিলিয়ে প্রায় আট কিলোমিটার ঘুরবে সেই শোভাযাত্রা। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী শহরে নেই। তাঁর হয়ে দলের এক কাউন্সিলর নববর্ষের কার্ড ছাপিয়ে ফেলছেন।
কার্ড-ক্যালেন্ডার ছাপানোয় কম যাচ্ছেন না সর্বহারারাও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মহম্মদ সেলিম কার্ড তৈরি করিয়েছেন। নিজে তিনি যাচ্ছেন বাংলাদেশ সীমান্তে করণদিঘিতে দুই বাংলার বাসিন্দাদের মেলায়, কমরেডরা কার্ড বিলি করছেন। যাদবপুরে সুজন চক্রবর্তীও বেরিয়ে পড়ছেন গ্রিটিংস কার্ড হাতে। দুর্গাপুরে লাল পলাশে কার্ড রাঙিয়ে সিপিএম বলছে ‘ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন’। শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থী তীর্থঙ্কর রায়ও নিজের নাম লেখা ক্যালেন্ডার হাতে সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে চলেছেন ভোরে গঙ্গার ধারে। তাজা অক্সিজেন দরকার। কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী জলুবাবু (সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়) নববর্ষের দিনটা আর বাড়ি থেকে বেরোতে চাইছেন না। কিন্তু তাঁর দলেরই তারকা প্রার্থী নিমু ভৌমিক জানিয়ে দিয়েছেন, “প্রচারে বেরিয়ে এলাকার মানুষের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করব।” বালুরঘাটে কংগ্রেসের ওমপ্রকাশ মিশ্রেরও তেমনই ছক। উত্তর দিনাজপুরে তো আবার কংগ্রেসের সাংস্কৃতিক মঞ্চের তরফে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে ‘অরাজনৈতিক’ হোর্ডিংও লাগানো হয়েছে। বীরভূম কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী সৈয়দ সিরাজ জিম্মি রামপুরহাটে বের করছেন ট্যাবলো। চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ে বিজেপির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আবৃত্তি করবেন দলের সাংবাদিক প্রার্থী চন্দন মিত্র। মালবাজারের মাইক ব্যবসায়ী মদন দাস জানাচ্ছেন, “পয়লা বৈশাখের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিডি চাইছে। বেশ কয়েকটি সিডি কিনেছি।”
যাঁদের অত লোকলস্কর নেই, তাঁরা আবার দ্বারস্থ হচ্ছেন প্রযুক্তির। কৃষ্ণনগরের সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা যেমন শুভেচ্ছা সারবেন ফেসবুকে। ইটাহারে বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরীর হয়ে সেই ফেসবুকেই ‘শুভ নববর্ষ’ করবে বিজেপি-র ‘আইটি সেল’। বারাসতে সাতসকালেই মোবাইলে পৌঁছে যাচ্ছে সিংহ। সেটির মালিক মোর্তাজা হোসেন। আগের রাত থেকেই ভোটারদের মোবাইলে ছুটছে বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের ভয়েস মেসেজ। হুগলিতে কংগ্রেসের প্রীতম ঘোষও একই রাস্তা নিয়েছেন।
অতিথিদের কথা অবশ্য আলাদা।
বৈশাখের পয়লা রোদেই যেমন চোখ ধাঁধিয়ে দিতে রোড-শো নিয়ে বাঁকুড়ায় ফিরছেন মুনমুন সেন। শ্রীরামপুরের রাস্তায় কী গাইবেন, রাত থেকেই গুনগুন করছেন বাপ্পি লাহিড়ী।
আর, বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ বলছেন, “ভোটে জিতলে সেই দিনই নতুন শাড়ি পড়ে পয়লা বৈশাখ পালন করব।”