লিফলেট ছাপিয়ে তৃণমূলের হয়ে ভোট-প্রচার চিকিৎসক সংগঠনের

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১৩
Share:

এই ভাবেই প্রচার লিফলেটে। —নিজস্ব চিত্র।

সংগঠনের নেতা থেকে সাধারণ সদস্য, বেশির ভাগই সরকারি ডাক্তার। সেই সংগঠনই শাসক দলের নেতাদের ছবি ও প্রতীক চিহ্ন আঁকা লিফলেট ছাপিয়ে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীদের জেতানোর আবেদন জানাচ্ছে। এতে ‘সার্ভিস রুল’ ভঙ্গ হচ্ছে বলে রাজ্যপালের কাছে চিঠি দিলেন চিকিৎসকদের একাংশ। স্বাস্থ্য দফতরও বিষয়টির উপর নজর রাখছে।

Advertisement

নির্বাচনের মুখে চিকিৎসকদের সংগঠন ‘প্রগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর (পিডিএ) উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শাখার এমন প্রচার নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেও। এই মুহূর্তে পিডিএ-র সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার, যার সংখ্যাগরিষ্ঠই সরকারি ডাক্তার। সংগঠনের প্রধান কার্যনির্বাহী পদগুলিতে রয়েছেন সরকারি ডাক্তারেরা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শাখার সভাপতি, সচিব ও কোষাধ্যক্ষের পদেও রয়েছেন তিন সরকারি ডাক্তার। এমন একটি সংগঠন কোনও নির্দিষ্ট দলের প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করলে তার সদস্য সরকারি চিকিৎসকরা ‘সার্ভিস রুল’ ভঙ্গ করছেন, এমনই অভিযোগ আনল বামপন্থী সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স।’ এ ব্যাপারে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে বামপন্থী সংগঠনটি। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী এ ব্যাপারে বলেন, “আপাত ভাবে মনে হচ্ছে বিষয়টি ঠিক হয়নি। আমরা নজর রাখছি। তবে কেউ আমাদের কাছে এখনও অভিযোগ জানায়নি।”

পিডিএ থেকে প্রচারিত ওই লিফলেটে রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তৃণমূল সরকারের সাফল্যের নানা খতিয়ানের সঙ্গে, উত্তর ২৪ পরগনার পাঁচ কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থীদের জেতানোর আবেদন করা হয়েছে। লিফলেটে লেখা হয়েছে, “সমস্ত সংবেদনশীল জনগণের কাছে আবেদন জানাই, আসন্ন ২০১৪ সালের ১৬তম লোকসভা নির্বাচনে এই জেলার তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়যুক্ত করে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নূতন ভারত গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে আনুন এবং কেন্দ্রীয় বঞ্চনার থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে জোড়াফুল চিহ্নে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের ভোট দিন।”

Advertisement

অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স রাজ্যপালের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে দাবি করেছে, সরকারি কর্মীরা সংগঠন নিশ্চয়ই করতে পারেন কিন্তু ‘ওয়েস্টবেঙ্গল গর্ভমেন্ট সার্ভেন্টস কনডাক্ট রুলস ১৯৫৯’-এর ২৬ (২) ধারানুযায়ী, কোনও সরকারি কর্মী কোনও নির্বাচন প্রার্থীর হয়ে প্রচার করতে পারেন না বা নিজের প্রভাব ব্যবহার করতে পারেন না। পিডিএ-র বহু সদস্য ও নেতা সরকারি ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও সংগঠনগত ভাবে তাঁরা সেটাই করেছেন। অতএব ওই সরকারি ডাক্তারেরা সার্ভিস রুল ভঙ্গ করেছে বলা ধরা হবে। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, পিডিএ-র লিফলেটে তৃণমূলের প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে যা আইনবিরুদ্ধ। পিডিএ-র সাধারণ সম্পাদক শান্তনু সেন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “পিডিএ-তে অনেক বেসরকারি ডাক্তারও রয়েছেন। সংগঠনগত ভাবে যদি তাঁরা কোনও প্রচার চালান, তা হলে সংগঠনের সরকারি চিকিৎসকেরা তাতে অংশ নিয়ে সার্ভিস রুল-বিরোধী কাজ করেছে বলে কখনওই ধরা হবে না।” সংগঠনের উত্তর ২৪ পরগনা শাখা কমিটির সচিব ডিপি পারেখ প্রথমে দাবি করেন, “এই লিফলেট সংগঠনের সরকারি ডাক্তাররা ছাপাননি। বেসরকারি ডাক্তাররা ছাপিয়েছেন, ওঁরাই বিলি করেছেন।’’ কিন্তু লিফলেটের কোথাও তো লেখা হয়নি যে শুধু সংগঠনের বেসরকারি চিকিৎসকেরাই এর সঙ্গে জড়িত? তাঁর উত্তর, “লিফলেট ছাপার পর সংগঠনের রাজ্যনেতারা দেখেই ছাড়পত্র দেন। ওঁরা বলেছিলেন, এতে কোনও ক্ষতি হবে না।”

মৃত আমানতকারীর বাড়িতে দুই প্রার্থী

সারদা-সহ তিনটি অর্থলগ্নি সংস্থায় আমানতকারী ক্যানিংয়ের সুশান্ত সর্দারের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন জয়নগর কেন্দ্রের আরএসপি প্রার্থী সুভাষ নস্কর এবং এসইউসি প্রার্থী তরুণ মণ্ডল। শনিবার সকালে দু’জনেই পরানিখেকো গ্রামে সুশান্তবাবুর বাড়িতে যান। মৃতের মেয়ে মধুমিতার পড়াশোনা এবং বিয়ের দায়িত্ব নেবেন বলে জানিয়েছেন তরুণবাবু। শুক্রবার সকালে সুশান্তবাবুর ঝুলন্ত দেহ মেলে। তাঁর স্ত্রী ছায়াদেবী অভিযোগে জানান, গত বছর সারদা থেকে টাকা ফেরত পাওয়ার আগেই সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অবসাদে ভুগছিলেন। তার জেরেই আত্মঘাতী হন। তরুণবাবু বলেন, “এই ঘটনার দায় রাজ্য সরকার এড়াতে পারে না।” সুভাষবাবুর দাবি, “মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্যকে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement