হাঁস-ফাঁস। ভোটের আগে চৌরঙ্গি কেন্দ্রে আধাসেনার টহল। শুক্রবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।
সারদা-কাণ্ডের ছায়ায় আজ, শনিবার উপনির্বাচন রাজ্যের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে। আপাতদৃষ্টিতে মাত্র দু’টি কেন্দ্রের উপনির্বাচন হলেও রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক আবহ মাথায় রাখলে এই ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম। লোকসভা ভোটে বিপুল সাফল্যের কয়েক মাসের মধ্যে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের জেরে তাদের জনপ্রিয়তা ধাক্কা খায়নি, প্রমাণ করতে মরিয়া শাসক দল। সেই জন্যই আজ নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার দিকে বিশেষ নজর থাকবে সব মহলের। অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করার জন্য কমিশনের উপরে লাগাতার চাপ রেখে চলেছে বিরোধীরা।
খাস কলকাতার চৌরঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রের ২২২টি এবং উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের ২৮৫টি বুথে আজ সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এই প্রথম রাজ্যের কোনও উপনির্বাচন হচ্ছে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রেখে। চার মাস আগে লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও তাদের নিষ্ক্রিয় রেখে যথেচ্ছ ভোট লুঠের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশন এবং তাদের পর্যবেক্ষকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। যার জেরে কমিশনের উপরে অনেকটাই আস্থা হারিয়েছে বিরোধীরা। এই অতীত এবং এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই বিরোধীদের আজ নজর থাকছে কমিশনের দিকে।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) সুনীল গুপ্ত শুক্রবার জানিয়েছেন, প্রত্যেক বুথে কোথাও আধা সেকশন, কোথাও পুরো এক সেকশন কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। এ ছাড়াও প্রতি বুথে থাকবে মাইক্রো অবজার্ভার। প্রত্যেক সেক্টরে এক জন করে সেক্টর ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। তাঁর সঙ্গেও কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। এ ছাড়াও থাকছে কুইক রেসপন্স টিম, ফ্লাইং স্কোয়াড, মোবাইল ট্রান্সমিশন ভ্যান। প্রতি বুথে ওয়েব কাস্টিং, ডিজিটাল ক্যামেরা বা ভিডিও ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকবে।
কমিশনের আশ্বাস সত্ত্বেও বিরোধীরা অবশ্য আশঙ্কায় আছে। তাদের বক্তব্য, সারদা কেলেঙ্কারিতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর নাম জড়িয়ে গিয়ে প্রবল বিড়ম্বনায় পড়েছে শাসক দল। এমতাবস্থায় উপনির্বাচনের ফল এ দিক-ও দিক হলে এক দিকে যেমন তৃণমূলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনই লোকসভা ভোটে তাদের সাফল্য কতটা ‘খাঁটি’ ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে যাবে। তার সঙ্গেই তৃণমূলের ঘাড়ের উপরে রয়েছে বিজেপি-র বিপদ। তাই ‘অঘটন’ ঠেকাতে পেশি বলের উপরেই শাসক দল ভরসা করবে বলে আশঙ্কা করছে বিরোধীরা। চৌরঙ্গির মধ্যে যেমন রিপন স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, কলিন স্ট্রিট, তালতলা, ইলিয়ট রোডের মতো এলাকায় অশান্তির আশঙ্কা করছে তারা। বিরোধীদের উদ্বেগ এখানে তৃণমূল কাউন্সিলর তথা বিধায়ক ইকবাল আহমেদের বাহিনীকে নিয়ে! তেমনই বসিরহাট উদ্ধারের (লোকসভার ফলে তৃণমূল প্রায় ৩২ হাজার ভোটে পিছিয়ে বিজেপি-র কাছে) দায়িত্বে আছেন উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তৃণমূলের অন্দরের খবর, প্রায় ৭% ভোট নিজেদের দিকে ‘সুইং’ করানোর গুরুদায়িত্ব চেপেছে তাঁর কাঁধে! নির্বাচনী বিধির কারণে এখন বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের সীমানার মধ্যে থাকতে না পারলেও ঠিক তার আশেপাশেই অবস্থান করছেন জ্যোতিপ্রিয়ের সৈনিকেরা। দেখা যাচ্ছে বিস্তর বহিরাগত মুখও।
স্বভাবতই বিরোধীরা চাপ রাখছে কমিশনের উপরে। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এ রাজ্যে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ যেমন বলেছেন, “লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসিয়ে রেখে অবাধে ভোট লুঠ করেছিল তৃণমূল। কমিশনকেই এ বার প্রমাণ করতে হবে, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট করাতে তারা সক্ষম!” সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেবের কথায়, “কমিশনের উপরে ভরসা রেখে আগের বার আমরা ঠকেছি! ভোট শেষে যাওয়ার সময়ে পর্যবেক্ষক বলে গিয়েছিলেন, তাঁর দাওয়াই কাজ করেনি! এ বার কী কাজ করে কমিশন, দেখা যাক!” চৌরঙ্গিতে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীরও বক্তব্য, “তৃণমূলের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। কমিশন মানুষের অবাধে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে পারলে ওদের কপালে দুঃখ আছে!”
চাপের মুখে শাসক দলও উপনির্বাচনের দিকে তাকিয়ে। তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেছেন, “এই দু’টো উপনির্বাচনেই মানুষ কুৎসার জবাব দেবেন। ভাল ভাবে আমরা জিতলে প্রমাণ হয়ে যাবে পরিকল্পনামাফিক কুৎসার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে!”