উত্তরবঙ্গ উত্সবের উদ্বোধনের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রোশন গিরি। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাহাড় সফর এবং তাঁর অনুষ্ঠানে বিমল গুরুঙ্গ থাকবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরের সময় বিমল গুরুঙ্গ পশুপতিনাথের পুজো দিতে কাঠমাণ্ডুতে যাবেন বলেছিলেন। সে কারণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা না-ও হতে পারে বলে নিজেই জানিয়েছিলেন। তবে মঙ্গলবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে উত্তরবঙ্গ উত্সবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে রোশন গিরি জানিয়ে দিলেন বুধবার পাহাড়ে পুলিশের পুরস্কার বিলির অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন গুরুঙ্গ। তা ছাড়া ২৩ জানুয়ারি পাহাড়ের অনুষ্ঠানে রোশন গিরি এবং জিটিএ-র অন্য সদস্যরাও থাকবেন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের রাস্তায় না গিয়ে সদ্ভাব রেখেই তাঁরা যে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিচ্ছেন, তা এ দিন রোশনের কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে। সে কারণেই কাঠমাণ্ডুর কর্মসূচি কিছুটা বদলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠান মঞ্চে থাকার বিষয়টি ঠিক হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এ দিন উত্তরবঙ্গ উত্সব উদ্বোধনের পর পাহাড়ে রওনা হন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর নেমে আসেন জিটিএ সদস্যরাও। মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে রোশন বলেন, “জিটিএ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। সেই হিসাবেই তাকে কাজ করতে দেওয়া দরকার। কিন্তু সেই ভাবে চলছে না। তথ্য সংস্কৃতি দফতরের মতো অনেক দফতর হস্তান্তর হয়নি। পূর্ত, খাদ্য এবং সরবরাহ দফতর, আবগারির মতো জিটিএ-র দফতরগুলি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। এ সব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জিটিএ-র বৈঠক হতে পারে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে বসে কথা বলব।” বিভিন্ন দফতর হস্তান্তরের পাশাপাশি জিটিএ-র জন্য আলাদা ভাবে স্কুল সার্ভিস কমিশন, কলেজ সার্ভিস কমিশন, রিজিওনাল পেনশন ডাইরেক্টরেট তৈরির বিষয়গুলিও রয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রেরও একাধিক প্রতিষ্ঠান এখনও জিটিএ-র অধীনে আসেনি। তা নিয়েও দাবিদাওয়া রয়েছে জিটিএ-র প্রতিনিধিদের। রোশন জানান, উত্তরবঙ্গ উত্সবে জিটিএ’কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাই তাঁরা এসেছেন। রোশন ছাড়াও এ দিন উত্তরবঙ্গ উত্সবের উদ্বোধন মঞ্চে ছিলেন জিটিএ সদস্য রমেশ আলে এবং দার্জিলিঙের মোর্চার বিধায়ক তিলক দেওয়ানরা।
লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে মোর্চার সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বাড়ে। তৃণমূলের তরফে দার্জিলিং লোকসভা আসনে ভাইচুং ভুটিয়াকে প্রার্থী করা হয়। মোর্চার সমর্থনে বিজেপির প্রার্থী হন সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। বিজেপি প্রার্থী জেতার পর মোর্চা নেতৃত্বর সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভাল হয়। তা ছাড়া বর্তমানে মোর্চার একটি প্রতিনিধি দল দিল্লিতে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে উদ্যোগী। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপির বিদ্বেষ চলছেই। এই পরিস্থিতি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুঙ্গরা একই মঞ্চে থাকলে অন্য বার্তা যাবে কি না, তা নিয়ে বিস্তর চিন্তা ভাবনা চলছিল। এমনকী, পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রী যে দিন পৌঁছবেন, তার পর দিন গুরুঙ্গ নেপালে যাবেন বলে জানিয়ে দেন।
রোশন বলেন, “পুলিশের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন বিমল গুরুঙ্গ। বিভিন্ন দফতর হস্তান্তেরর মতো সমস্যা নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হবে।” আজ, দার্জিলিঙে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিমল গুরুঙ্গের কথা হবে বলেও তিনি জানান। জিটিএ-র সমস্যা নিয়ে মোর্চা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক দাবি করে আসছে। এ মাসের শেষে সেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জিটিএ সদস্যরা।