পরিবহণমন্ত্রীর উদ্বিগ্ন পরিজন। শুক্রবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পরে মদন মিত্রকে মন্ত্রিসভাকে থেকে সরানো হবে না বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার নবান্নে মমতা বলেন, “মদনের সৌজন্যবোধ এতটাই যে ও যাওয়ার আগে আমাকে পদত্যাগপত্র লিখে দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেটা গ্রহণ করব না। ও থাকবে। ও অনুপস্থিত থাকলে ওর কাজ আমি দেখব।” যাঁরা মদনকে গ্রেফতার করেছে তাঁদের পদত্যাগের দাবি তুলে মমতা বলেন, “ও (যদি) অন্যায় করত, তা হলে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতাম।” নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী যে প্রসঙ্গে বলেননি, সে-ই ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের মন্ত্রিত্বও আপাতত হাতছাড়া হচ্ছে না মদনের।
গ্রেফতার হওয়ার পরেই মদনকে মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিতে বলা হবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। নবান্নে মদনের গ্রেফতারের খবর এসে পৌঁছনোর পরেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করলেও, মন্ত্রিসভায় মদনের অবস্থান কী হবে তা স্পষ্ট করেননি। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, বিষয়টি নিয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেবে সরকার। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেন।
মদনকে সিবিআই গ্রেফতার করার পরে তাঁকে কেন মন্ত্রিসভায় রাখা হবে সেই প্রশ্ন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের অনেকের। কিন্তু এ ব্যাপারে আইন কী বলছে? লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ আইনজীবী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “অপরাধী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত ওঁর (মদন মিত্র) মন্ত্রী থাকায় আইনগত কোনও বাধা নেই। তবে আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করলে মন্ত্রীকে ইস্তফা দিতেই হবে।” কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, “দুর্নীতির মামলায় অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ার পরেই জয়ললিতাকে পদত্যাগ করতে হয়। তবে যখন মামলা চলছে, তখন তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্ব চালিয়ে গিয়েছেন। একই ভাবে মদন যতদিন না দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেন, ততদিন তিনি মন্ত্রী থাকতে পারেন। এটাই দেশের আইন।”
সিজিও থেকে বেরোচ্ছেন মদন মিত্রের দুই ছেলে। ছবি: সুমন বল্লভ।
মদনের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ‘বন্ধু’ কংগ্রেস নেতা অরুণাভর সংযোজন: “তবে আমি মনে করি, নীতিগত কারণে ওঁর (মদন) ইস্তফা দেওয়া উচিত। গ্রেফতার না হওয়ায়, স্রেফ দুর্নীতিতে নাম জড়ানোতেই মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন, এমন অনেক নজির রয়েছে।” প্রয়াত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী মাধব রাও সিন্ধিয়ার প্রসঙ্গ টেনে অরুণাভ বলেন, “ওঁর আমলে রাশিয়া থেকে বিমান কেনা হয়েছিল। ওই ধরনের একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে। তাতে কেউ মারা যায়নি। তার পরেও পদত্যাগপত্র দেন মাধওরাও।”
তৃণমূল-অন্দরের খবর, সারদা-কাণ্ডে সিবিআই গ্রেফতার করলে তাঁর মন্ত্রিত্ব আদৌ থাকবে কি না, তা নিয়ে মদন নিজেও সংশয়ে ছিলেন। সিবিআইয়ের কাছে যাওয়ার আগে তিনি এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। সে জন্যই সিবিআইয়ের কাছে তিনি এক দিন সময়ও চেয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মমতার সঙ্গে কথাই হয়নি মদনের। তার পরেই পদত্যাগপত্র লিখে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেন পরিবহণমন্ত্রী। দিনের শেষে দেখা গেল, মুখ্যমন্ত্রী মদন মিত্রের সে-ই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলেন না।
মদন-ঘনিষ্ঠদের একাংশও মনে করেন, পরিবহণমন্ত্রী তাঁর পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে ভাল করবেন। একাধিক অনুগামীর কথায়, “মানুষের কাছে দাদার একটা ‘হিরো ইমেজ’ আছে। আগে থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দাদা সেই ভাবমূর্তিই বজায় রাখতে চেয়েছেন।”