মদনে বিধিভঙ্গ কেন, জেলকে চিঠি সিবিআইয়ের

পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের ক্ষেত্রে কারাবিধি মেনে চলা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলল সিবিআই। শুক্রবার আলিপুরে বিশেষ আদালতে সিবিআই বলেছে, নিয়মের বাইরে গিয়ে বাড়তি সুবিধে পাচ্ছেন মন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে তারা। ক’দিন আগেই খানিকটা একই ধরনের অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছিলেন সারদা মামলায় ধৃত সাংসদ কুণাল ঘোষ। মদন মিত্র তখন এসএসকেএম হাসপাতালে ছিলেন। কুণাল আদালতে বলেছিলেন, “তিনি তো হেটেলে রয়েছেন, ফোন করছেন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১০
Share:

পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের ক্ষেত্রে কারাবিধি মেনে চলা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলল সিবিআই। শুক্রবার আলিপুরে বিশেষ আদালতে সিবিআই বলেছে, নিয়মের বাইরে গিয়ে বাড়তি সুবিধে পাচ্ছেন মন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে তারা।

Advertisement

ক’দিন আগেই খানিকটা একই ধরনের অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছিলেন সারদা মামলায় ধৃত সাংসদ কুণাল ঘোষ। মদন মিত্র তখন এসএসকেএম হাসপাতালে ছিলেন। কুণাল আদালতে বলেছিলেন, “তিনি তো হেটেলে রয়েছেন, ফোন করছেন! মন্ত্রীর জন্য এ রকম ব্যবস্থা করা হলেও বাকিদের জন্য অন্য রকম ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” বিচারক তাঁকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানাতে বলেছিলেন। ২৪ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারের মাধ্যমে কুণাল এই লিখিত অভিযোগ আদালতে পাঠান।

কুণাল মন্ত্রীকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে হাসপাতালে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। এ দিন সিবিআই দাবি করল, মন্ত্রীকে জেলের ভিতরে-বাইরে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তদন্তকারীদের অভিযোগ, একই মামলায় অন্য বিচারাধীন বন্দিদের জন্য পুলিশ যা করছে, পরিবহণমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তা করা হচ্ছে না। প্রিজন ভ্যানের বদলে পুলিশের এসইউভি-তে আদালতে আনা হচ্ছে মন্ত্রীকে। তাঁকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ একই মামলার অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ কথা বলতে চাইলেই কখনও হল্লাপুলিশ এনে, কখনও বা বলপ্রয়োগ করে তাঁকে আটকানো হচ্ছে। কুণালবাবুও আগে আদালতে বলেছিলেন, “কাউকে পুলিশ খাতির করছে। রাস্তা আটকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি কথা বলতে গেলে মারছে।” এ দিনও আদালত থেকে বেরনোর সময়ে সমর্থকদের উদ্দেশে মন্ত্রী স্লোগান দেন, “বন্দেমাতরম, মমতা ব্যানার্জি জিন্দাবাদ।” সঙ্গে সঙ্গে ওখানে দাঁড়ানো তৃণমূল সমর্থকেরা মদনের নামে স্লোগান দিতে শুরু করে দেন। পুলিশকর্মীরা বাধা দেননি। অথচ এ দিনও কুণালের জন্য যথারীতি হল্লা-পুলিশ তৈরি ছিল। তবে কুণাল এ দিন আর কোনও বোমা ফাটাননি। সাংবাদিকদের ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ বলেই ক্ষান্ত থেকেছেন।

Advertisement

আদালত অবশ্য এমনিতেই পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে ডিভিশন-ওয়ান বা প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছে। ফলে আম-বন্দিদের থেকে কিছু বাড়তি সুবিধে মন্ত্রীর প্রাপ্য। কিন্তু সিবিআইয়ের অভিযোগ, তালিকার বাইরে গিয়েও মন্ত্রীকে বেশ কিছু সুবিধে দেওয়া হচ্ছে। তদন্তকারী সংস্থার এক কর্তা বলেন, “জেলের মধ্যে বহাল তবিয়তে রয়েছেন মদনবাবু। তাঁর বিরুদ্ধে জেলে বসে মোবাইল ব্যবহার করার অভিযোগও আমরা পেয়েছি। মন্ত্রীর শাগরেদরা যখন-তখন জেলে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করছেন। মন্ত্রীর ইচ্ছেপূরণের জন্য সব সময় লোক রয়েছে।” এ দিন আদালতেও সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত অভিযোগ করেন, মন্ত্রীর ক্ষেত্রে কারাবিধি মানা হচ্ছে না।

কারা দফতরের কর্তারা যদিও এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কারা দফতরের এক অফিসার শুধু বলেন, “সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযোগ করা অর্থহীন। সিবিআইয়ের অভিযোগ থাকলে তারা সুপ্রিম কোর্টকে জানাক। আমরা অবশ্যই উত্তর দেব।” তবে সূত্রের খবর, মন্ত্রীর আর্জি মানতে মানতে হিমশিম খাচ্ছেন কারা-কর্তারাও। এক কর্তার কথায়, “মন্ত্রীর খাবার নিয়ে আসা আত্মীয়-বন্ধুরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। তাঁরা রেজিস্টারে সইও করতে চাইছেন না। কারারক্ষী ইউনিয়নের নেতারাও নানা আব্দার করছেন। আমরা পড়েছি ফাঁপরে।” সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধী দলের নেতারাও। সারদায় গ্রেফতার হওয়া অন্য সকলে প্রিজন ভ্যানে চড়ে আদালতে গেলেও পরিবহণমন্ত্রীকে কেন আলাদা গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর বক্তব্য, “মদনবাবু বিশেষ সুবিধা ভোগ করছেন, যার অধিকার তাঁর নেই। কলকাতা পুলিশের কমিশনারকে বলতে হবে, এর রহস্য কী?” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “পরিবহণ মন্ত্রী ইস্তফা দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী গ্রহণ করেননি। সেই মন্ত্রী আদালতে গেলে বিশেষ পরিবহণের ব্যবস্থা হবে না, তা কখনও হতে পারে!” প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের প্রশ্ন, “অভিযুক্ত মন্ত্রীকে জেলে বিশেষ সুবিধা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত অপরাধীকে কী বার্তা দিচ্ছেন?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement