বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে মদ খেয়ে প্রচারে যাওয়া এবং মন্দিরে ঢোকার অভিযোগ নস্যাৎ করে দিল পুলিশ-প্রশাসন।
তৃণমূল সরাসরি ওই অভিযোগ দায়ের না করলেও আসানসোলে এই ঘটনার পিছনে তাদেরই হাত রয়েছে বলে বিজেপি-র সন্দেহ। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছিল তৃণমূল। যে কারণে চওড়া হেসে বাবুল বলছেন, “এটা আমার বড় জয়। যারা এই চক্রান্ত করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দু’কোটি টাকার মানহানির মামলা করছি।”
গত ৩০ মার্চ তারিখে ডামরা এলাকায় প্রচারে যান আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। ১ এপ্রিল ‘সিটিজেন্স ফোরাম’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার সঞ্জয় সিংহ আসানসোল দক্ষিণ থানায় অভিযোগ করেন, ডামরায় প্রচারের সময়ে বাবুল মদ্যপান করেছিলেন। ওই অবস্থায় তিনি মন্দিরেও ঢোকেন, যা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে। দিন কয়েক পরে আসানসোল পুরসভার চেয়ারম্যান, তৃণমূল নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি ‘পূর্ণ তদন্ত’ দাবি করে আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা রিটার্নিং অফিসার অমিত দত্তকে চিঠি দেন। তিনি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সোমবার অমিতবাবু বলেন, “আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারের দফতর থেকে আমার কাছে তদন্তের রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে মদ্যপান করে প্রচারের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার কোনও সত্যতা নেই।” গত কয়েক দিন ধরেই আসানসোলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা প্রচারে বারবার বিষয়টি তুলেছেন। দলের প্রার্থী দোলা সেন নির্বাচন কমিশনে নালিশ করার হুমকিও দিয়েছেন। গোড়াতেই বাবুল তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ব্যক্তিগত কুৎসা ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, তিনি মদ্যপান করেন না। রিটার্নিং অফিসারের কাছে চিঠি দিয়ে ‘অপপ্রচার’-এর বিহিতও চান। প্রশাসনের বক্তব্য শোনার পরে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমি তো আগেই বলেছিলাম, আমি কোনও অন্যায় আচরণ করি না। যাঁরা আমার বিরুদ্ধে কুৎসা করেছেন, এই ঘটনা তাঁদেরই কালিমালিপ্ত করেছে।”
পুলিশ-প্রশাসন ‘ক্লিনচিট’ দেওয়ায় বর্ধমান জেলা তৃণমূলের যে মুখ পুড়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। পরস্পরবিরোধী মন্তব্যও শোনা যাচ্ছে। যেমন, জিতেন্দ্র তিওয়ারির বক্তব্য, “আমি মনে করি, এই তদন্ত সঠিক পদ্ধতি মেনে হয়নি। পুলিশ রিপোর্ট আদালতে পেশ করা হয়। অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে পুলিশ রিপোর্ট পেশ করল কী করে? আমরা ফের তদন্তের দাবি জানাব।” অমিতবাবু অবশ্য জানিয়ে দেন, “নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট আমার কাছেই জমা করার কথা। পুলিশ এ ক্ষেত্রে কোনও ভুল করেনি।”
জিতেন্দ্র তিওয়ারির আরও অভিযোগ, “বাবুলের মদ্যপানের প্রমাণ লোপাট করতে সাহায্য করা হয়েছে। তদন্তে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন আসলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাজ করছে।” তৃণমূল প্রার্থী আবার বলেন, “আমরা তো বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে অভিযোগ করিনি! করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এর মধ্যে আমরা কোথা থেকে আসছি?” বাবুলের জনপ্রিয়তা দেখে তৃণমূল কি ভয় পেয়ে গিয়েছে? দোলার দাবি, “আরে না না, গরমে উনি মাঝে-মাঝে অসংলগ্ন আচরণ করছেন। মানুষ দেখছে। এ সব তৃণমূলের কাছে কোনও ব্যাপার নয়।”