সংশয় ছিল সোমবার পর্যন্ত। মঙ্গলবার তা কাটিয়ে দিলেন টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের ‘ডিসটিংগুইশ্ড প্রফেসর’, পদার্থবিদ সব্যসাচী ভট্টাচার্য নিজেই। আচার্য-রাজ্যপালকে সরকারি ভাবে জানিয়ে দিলেন, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব তিনি নেবেন না।
গত শনিবার রাজভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব নিতে অনীহার কথা আচার্য তথা রাজ্যপালকে জানান সব্যসাচীবাবু। রাজ্যপাল তাঁকে এই ব্যাপারে আরও একটু ভাবনাচিন্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সব্যসাচীবাবু এ দিন তাঁর সিদ্ধান্তের কথা রাজ্যপালকে জানিয়ে দিয়েছেন বলে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর।
কিন্তু সব্যসাচীবাবু দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করলেন কেন?
ওই পদার্থবিদের ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, তাঁকে যে প্রেসিডেন্সির উপাচার্য হিসেবে বেছে নেওয়া হচ্ছে বা হতে চলেছে, এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। তাঁর সম্মতি ছাড়াই প্রেসিডেন্সির প্রথম স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে সব্যসাচীবাবুর নাম জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে।
পদার্থবিদের ঘনিষ্ঠ মহলের ওই সূত্রেই জানানো হয়, উপাচার্য-পদের জন্য সব্যসাচীবাবু নিজে আবেদন করেননি। উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য গড়া সার্চ কমিটির কাছে অন্য কেউ তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন বলে উচ্চশিক্ষা মহলের খবর। শেষ পর্যন্ত সার্চ কমিটি তিনটি নামের যে-বাছাই তালিকা তৈরি করে, তার প্রথমেই সব্যসাচীবাবুর নাম ছিল। তালিকার তিন জনের মধ্যে তাঁকেই প্রেসিডেন্সির উপাচার্য হিসেবে বেছে নেন রাজ্যপাল। সব্যসাচীবাবুকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন, এমন এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, “কোনও দায়িত্ব নিতে রাজি হয়ে থাকলে কিছুতেই পিছিয়ে আসার মানুষ নন উনি।” নাম ঘোষণার আগে সব্যসাচীবাবুর সম্মতি নেওয়া হয়নি বলেই মনে করেন ওই শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন ও প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত অনেক প্রবীণ শিক্ষকই জানাচ্ছেন, প্রার্থীর সঙ্গে একেবারেই আলোচনা না-করে তাঁর নাম বেছে নেওয়া বা তাঁকে দায়িত্ব দেওয়ার ঘটনা বিরল। এ ক্ষেত্রে কী করে এমনটা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, রাজ্যপালের কাছ থেকে সরকারি দফতরে নাম আসার পরে কারও সঙ্গে আলাদা ভাবে যোগাযোগ করার প্রশ্নই ওঠে না। যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন থাকে, সার্চ কমিটিরই তা বলার কথা। সার্চ কমিটি এবং রাজভবন পেরিয়ে নাম উচ্চশিক্ষা দফতরে পৌঁছলে সেটিকেই চূড়ান্ত ধরে নেওয়া হয়। সেটাই রীতি।
প্রেসিডেন্সির বর্তমান উপাচার্য মালবিকা সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৫ মে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর কার্যকাল শেষ হওয়ার পরে রাজ্য সরকার অক্টোবর পর্যন্ত মালবিকাদেবীর মেয়াদ বাড়াতে চাইলেও রাজ্যপাল রাজি হননি। উচ্চশিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের একাংশের ধারণা, ১৫ মে-র মধ্যে যদি স্থায়ী উপাচার্য বাছাই ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না-হয়, তা হলে সরকারের পক্ষে মুখরক্ষা করা কঠিন হবে বলেই এই ব্যস্ততা।
যাত্রা শুরুর পর থেকে এ-পর্যন্ত দু’জন অস্থায়ী উপাচার্য পেয়েছে প্রেসিডেন্সি। মালবিকাদেবীও অস্থায়ী ভাবে ওই দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম স্থায়ী উপাচার্য পাওয়ার পথে আবার এখন এই জটিলতা। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সার্চ কমিটি সব্যসাচীবাবু ছাড়াও যে-দু’জনের নাম দিয়েছিল, তার মধ্যে দ্বিতীয় নামটি বোস ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষিকার এবং তৃতীয়টি বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের এক শিক্ষকের।
সব্যসাচীবাবু প্রেসিডেন্সির উপাচার্য হতে রাজি না-হওয়ায় এখন ওই দু’জনের মধ্যে কাউকে পদটির জন্য বেছে নিতে পারেন রাজ্যপাল। আর তিনি যদি ওই দু’জনের কাউকেই বেছে না-নেন, তা হলে উপাচার্য পদের জন্য সার্চ কমিটিকে ফের আবেদন চাইতে হবে বলে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। তবে মালবিকাদেবীর কার্যকাল ফের না-বাড়ালে স্থায়ী উপাচার্য বাছাই ও নিয়োগের প্রক্রিয়া ১৫ মে-র মধ্যেই শেষ করতে হবে।