সিদ্ধার্থনাথ সিংহকে বরণ করছেন স্থানীয়রা। শনিবার কৃষ্ণগঞ্জের চৌগাছা কুঠিরপাড়ায়। ছবি:সুদীপ ভট্টাচার্য
শাসকদলের রোষের ভয় ভেঙে বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহকে ঘিরে ভিড় জমাল কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার মানুষ। কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিদ্ধার্থনাথকে দেখে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ভিড় জমালেন এলাকার বৃদ্ধ, মহিলারাও। স্থানীয় নেতাদের দাবি, এত দিন বিজেপি কর্মীদের কাছে শাসক দলের ভয়ে মিটিং-মিছিলে যাওয়া ছিল রীতিমতো চ্যালেঞ্জের কাজ। আজ যে ভাবে মানুষ ভয় অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রীয় নেতার কনভয়কে ঘিরে ভিড় জমিয়েছেন, তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছেন, তাতে অবাকই হয়েছেন জেলার নেতারা।
এই মনোভাব ধরতে পেরে সিদ্ধার্থনাথও কর্মীদের নিরাপত্তার অশ্বাস দিলেন। এ দিন বিভিন্ন অঞ্চল কমিটির বুথ স্তরের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বারবার বলেন, “ভয় পাবেন না। এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হবে। কয়েক দিনের মধ্যেই একশো কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে। সব বুথেই জওয়ানরা থাকবেন। রাজ্য পুলিশ বুথের দু’শো মিটারের মধ্যে ঢুকতে পারবে না।” তাঁর এই আশ্বাস শুনে প্রতি বারই হাততালি দিয়ে ওঠেন দলের কর্মীরা। যা দেখে এক জেলা নেতা বলেন, “উনি সমস্যাটা ধরে ফেলেছেন।”
এ দিন সাড়ে ১২টায় কৃষ্ণনগরে সাংবাদিক সম্মেলন করার পরে তিনটি গাড়ির কনভয় নিয়ে রওনা হন কৃষ্ণগঞ্জের দিকে। চৌগাছা কুঠিরপাড়া এলাকায় কৃষ্ণনগর-মাজদিয়া রাজ্য সড়কের উপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে সংবর্ধনা দেন বিজেপি কর্মীরা। কৃষ্ণগঞ্জে একটি দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন। ল্যাপটপে বিধানসভা এলাকায় বুথ ভিত্তিক দলের অবস্থাও খতিয়ে দেখেন।
প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক সুশীল বিশ্বাসের মেয়ে সুনয়না বিশ্বাস ঘোষ এসে সিদ্ধার্থনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করায় বিজেপি নেতারা বাড়তি বল পান। তৃণমূল তাঁকে প্রার্থী না করার পর থেকেই সুনয়নাদেবীর বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে কানাঘুষো চলছিল। এদিন সিদ্ধার্থনাথের সঙ্গে দেখা করার পর সুনয়নাদেবী বলেন, “ফোনে বিজেপির সদস্য হয়েছি। ২ ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণগঞ্জে রাহুল সিংহের সভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দেব।” এর ফলে সুশীলবাবুর অনুগামীদের একটা বড় অংশ বিজেপিতে আসবে, মনে করছেন বিজেপি নেতারা।
এ দিন সিদ্ধার্থনাথ সিংহ একেবারে নিচু তলার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাংগঠনিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন। সীমাম্ত-সংলগ্ন গোবিন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাদিপুর থেকে স্বর্ণখালি বাজার, সর্বত্র তিনি কখনও কর্মী, কখনও মানুষের কাছ থেকে বিজেপির অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বারবার জানতে চান, সিপিএম না তৃণমূল কোন দল থেকে বেশি মানুষ বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে, কেন দিচ্ছে। স্থানীয় নেতারা বলেন, সিপিএমের ভোট টানার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন সিদ্ধার্থনাথ।
এ দিন সিদ্ধার্থনাথ কর্মী বৈঠক করেন কৃষ্ণগঞ্জ, গাজনা, তারকনাথপুর, বগুলা স্টেশনপাড়া ও বাদকুল্লাতে। সময় যত বেড়েছে, তাঁকে ঘিরে উন্মাদনাও বেড়েছে। নানা জায়গায় চেয়ারের উপরে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখতে হয়েছে। তাঁর সঙ্গে হাত মেলাতে রীতিমতো হুড়োহুড়ি লেগে যায়। ইছামতি নদীর উপরে ব্রিজ না হওয়ার মতো নানা বিষয়ে তাঁর কাছে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।