ভোট সাঙ্গ হলেও রাজনৈতিক হানাহানি শেষ হয়নি। ক্যানিং, হাড়োয়া, নন্দীগ্রাম, নানা এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন রাজনৈতিক কর্মী, সমর্থকরা। কোথাও প্রার্থীদের এজেন্ট হওয়ার জন্য মারধর, লুঠপাট করা হয়েছে। কোথাও নির্দিষ্ট কোনও দলকে ভোট দেওয়ার জন্য ‘শাস্তি’ দেওয়া হয়েছে সাধারণ ভোটারকে। অধিকাংশ ঘটনায় অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে।
হুমকি, শাসানি সত্ত্বেও বুথ থেকে বেরোননি বাম এজেন্টরা এই ‘অপরাধে’ মঙ্গলবার রাতে ক্যানিংয়ের জীবনতলা থানার ঘুটিয়ারি শরিফের শ্রীনগরে বাম কর্মীদের বাড়িতে ও কারখানায় ঢুকে হামলা চাালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রুস্তম মোল্লা নামে এক সিপিএম সমর্থকের এমব্রয়ডারি কারখানায় ঢুকে দশ-বারোটি মেশিন ভেঙে ফেলা হয়। স্থানীয় বাম সমর্থকদের ঢুকে মারধর, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুঠপাট করা হয়। তৃণমূলের সমর্থকদের মারে মোসলেম মণ্ডল, রমজান সর্দার জখম হন। মোসলেমের দু’টি আঙুল ভেঙে গিয়েছে। তাঁর হাতের কব্জির নীচেও আঘাত লেগেছে।
বুধবার সকালে আক্রান্তদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের আরএসপি প্রার্থী সুভাষ নস্কর ও বামফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল। আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন সুভাষবাবু। পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দুই তৃণমূল সমর্থক আবদুল্লা শেখ ও নুর মহম্মদ খাঁকে শ্রীনগর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও ক্যানিং ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি শওকত মোল্লা অভিযোগ অস্বীকার করে ওই পরিবারের বিরুদ্ধেই ভোটের দিন অশান্তির পাল্টা অভিযোগ করেছেন। বামেদের এজেন্ট হওয়ায় বাসন্তীর চুনাখালির অবিনাশ বৈরাগীর বাড়িতে মঙ্গলবার রাতে তৃণমূল হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তাঁর গরু, ছাগল-সহ বাড়ির সব কিছু লুঠ হয়েছে।
আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপি সমর্থকরাও। মঙ্গলবার গভীর রাতে দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুর থানার পাথরবেড়িয়ায় বিজেপি সমর্থকদের উপরে হামলা ও নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ হয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পাথরবেড়িয়া এলাকায় বিজেপির নিবার্চনী এজেন্ট হয়েছিলেন হয়েছিলেন গৌতম ধাড়া। নির্বাচনের আগে থেকেই শাসক দলের শাসানি চলছিল। মঙ্গলবার গৌতম-সহ পাঁচ বিজেপি সমর্থককে রাস্তায় ফেলে মারা হয়। রাতেই হামলা চলে বিজেপির কার্যালয়েও। ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস বলেন, “বিজেপি সমর্থকদের মারধর করা হচ্ছে। গণনাকেন্দ্রে এজেন্ট না হওয়ার জন্যও শাসানি দিচ্ছে শাসক দল। পুলিশ নির্বিকার।”
নির্বাচনের দিন জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের মগরাহাট (পূর্ব) বিধানসভার মুলটিতে বাবুসোনা নামে এক বিজেপি এজেন্টকে ছুরি দিয়ে ফালা ফালা করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ওই দিন আরও জনা কুড়ি বিজেপি সমর্থককে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। ওই ঘটনাতেও এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। উল্টে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য শাসানি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিজেপির সম্পাদক দেবতোষ আচার্য।
উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার ব্রাহ্মণচকের ঘটনায় চারজন সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করল পুলিশ। এই নিয়ে মোট ১৬ জন ধরা পড়ল। ভোটের দিন সকালে ওই গ্রামে বেশ কিছু সিপিএম কর্মী-সমর্থকের উপরে তৃণমূলের লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সংঘর্ষে জখম হয় ২২ জন। এই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক উষারানি মণ্ডল অবশ্য এখনও অধরা।
মঙ্গলবার রাতে হাড়োয়ারই লেবুতলা গ্রামে তৃণমূলের উপরে হামলার অভিযোগে পাঁচ সিপিএম সমর্থককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার ধৃতদের বসিরহাট আদালতে তোলা হলে বিচারক ব্রাহ্মণচকের ঘটনায় ধৃতদের ১৪ দিন এবং বাকিদের সাত দিন জেলহাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
তবে হাড়োয়া, সন্দেশখালিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা কমার লক্ষণ নেই। সিপিএমকে ভোট দেওয়ার ‘অপরাধে’ এবং ওই দলের এজেন্ট হওয়ায় মঙ্গলবার রাতে সন্দেশখালির জেলিয়াখালির পাখিরালয় গ্রামে সিপিএমের সৌমেন মণ্ডলকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। একটি দোকানে ভাঙচুর করা হয়। কানমারি দাসপাড়ায় বিজেপি-তৃণমল সর্ংঘষের ১০ জন আহত হয়েছে। ওই রাতেই সন্দেশখালির বেড়মজুর গ্রামে এক ব্যক্তির ওষুধের দোকানে দুষ্কৃতীরা আগুন লাগিয়ে দেয়।
সিপিএমের হয়ে প্রচার করায় ও ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলে নন্দীগ্রামের বিরুলিয়ায় এক সিপিএম সমর্থকের দোকান ভাঙচুর ও বেশ কয়েকজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে নন্দীগ্রামের পশ্চিম বিরুলিয়া গ্রামের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। তৃণমূল সমর্থকদের হামলায় চার সিপিএম সমর্থক আহত হয়েছে বলে অভিযোগ। আবার বুধবার বিকেলে বিরুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সিপিএম প্রধান শশাঙ্ক বেরাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকেই। পূর্ব মেদিনীপুরের এসপি সুকেশকুমার জৈন বলেন, “নন্দীগ্রামে সিপিএম সমর্থকদের মারধর ও
দোকান ভাঙচুরের বিষয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” মঙ্গলবার রাতে খেজুরির টিকাশি অঞ্চলের উত্তর কলমদান গ্রামে এক সিপিএম সমর্থককে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। জখমের নাম মহাদেব দাস। এ বিষয়ে সিপিএমের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।