বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর রাহুল সিংহের সঙ্গে দেবিকা মুখোপাধ্যায়, অঞ্জনা বসু, দেবরাজ রায়। রবিবার বিজেপির দফতরে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
লক্ষ্য ২০১৬। ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তা মসৃণ করতে হাতে সময় থাকতেই ডালপালা ছড়াতে শুরু করেছে বিজেপি। চেনা রাজনৈতিক মুখ আছে এবং থাকবে। কিন্তু সমাজের সর্ব স্তরের মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চেনা ছকের বাইরে শিল্পী-কলাকুশলী মুখের দিকে ক্রমাগত ঝুঁকছে বিজেপি।
গত বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং নিতিন গডকড়ীর উপস্থিতিতে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। সেই তালিকায় নবতম সংযোজন অভিনয় জগতের দেবরাজ রায়, দেবিকা মুখোপাধ্যায়, চৈতালী হাজরা, শিপ্রা দে, মধুমিতা চক্রবর্তী, অনির্বাণ চক্রবর্তী, প্রদীপ দে, মনিকা দেবনাথ, ডি মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন ফুটবলার হাবিবুর রহমান, প্রাক্তন আমলা তপন মণ্ডল। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের উপস্থিতিতে রবিবার এঁরা দলে যোগ দিয়েছেন। ছিলেন অভিনেত্রী অঞ্জনা বসুও। যিনি কিছু দিন আগেই দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি-তে যোগদান করেছেন।
ঠিক এ ভাবেই ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যের বিদ্বজ্জন, শিল্পী, কলাকুশলীদের একাংশ তৃণমূলে যোগ দিয়ে রাজ্যে ‘পরিবর্তনে’র প্রেক্ষাপট রচনায় ভূমিকা নিয়েছিলেন। এখন আবার বিখ্যাতদের ঢল নেমেছে বিজেপি-তে। যা দেখে অনেকেই মনে করছেন, এ-ও ২০১৬-র আগে আর এক পরিবর্তনের ইঙ্গিত। বস্তুত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিখ্যাতদের দলে টানার জন্য টলিউড এবং টেলিউডকে সোপান হিসাবে ব্যবহার করেছেন। এখন সেই খেলাতেই তাঁকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টায় নেমেছে বিজেপি।
অঞ্জনা এ দিন জানান, তিনি ছাত্রী-জীবন থেকে বরাবর রাজনীতির সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব রেখেই চলেছেন। রাজনীতিকে তিনি ভয়ই পান। কিন্তু বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের অরাজক অবস্থা তাঁকে রাজনীতিতে আসতে প্রণোদিত করেছে। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাবনা তাঁকে টেনে এনেছে বিজেপি-তে। অঞ্জনার কথায়, “আমি কখনও কোনও রাজনৈতিক দলকে ১০ টাকা চাঁদাও দিইনি। কলেজে ইউনিয়নের দিদিরা চাঁদা নিতে এলে আমি অন্য ক্লাসে পালাতাম! ভাবতাম, রাজনীতি বুঝি না। তার সঙ্গে কোনও সম্পর্কই রাখব না। কিন্তু এখন দেখছি, ঘরে বসে থাকলে চলবে না। রাজনীতি বুঝতেই হবে।”
এর পরে তাঁর ব্যাখ্যা, “বিজেপি-র প্রতি কেন টলিউডের ঝোঁক বাড়ছে, তা নিশ্চয়ই মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব চেয়ে ভাল বলতে পারবেন! তৃণমূল আমলে গুন্ডামি যে জায়গায় পৌঁছেছে, পুলিশকে যে ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে আর ঘরে থাকা চলে না।” অঞ্জনার বক্তব্য, বামেদের ৩৪ বছরের অপশাসনের পরিবর্তন করতে অনেক আশা নিয়ে মানুষ মমতাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। যে দিন মমতা রাজভবনে শপথ নিয়ে জনপ্লাবনে ভেসে মহাকরণে পৌঁছেছিলেন, সে দিন দারুণ লেগেছিল অঞ্জনারও। তিনি ভেবেছিলেন, এত মানুষ সঙ্গে থাকায় নিশ্চয়ই মমতা অতুল কীর্তি রাখবেন। কিন্তু এক-দেড় বছরের মধ্যেই তিনি বুঝেছেন, কী ভুল করেছেন। এখন অবশ্য তাঁর আশা, “রাজ্যে ফের নতুন ফুল ফুটবে। তবে এ বার ঘাস ফুল নয়, পদ্ম ফুল!”
অঞ্জনাদের বিজেপি-তে যোগ দিতে দেখে উৎসাহিত রূপাও। সদ্য মোদীর দলে যোগ দেওয়া অভিনেত্রীর কথায়, “আমি আরও অনেককে বিজেপি-তে নিয়ে আসার চেষ্টা করব। যাঁদের অনেক রকম ভাবনাচিন্তা আছে, কাজপাগল এমন মানুষদের নিয়ে আসতে চাই। যাঁরা অন্য দলে আছেন, ভাল কাজ করতে চান কিন্তু পারছেন না, তাঁদেরও বলব বিজেপি-তে আসুন!” বিভিন্ন ক্ষেত্রের সৃষ্টিশীল মানুষের সমাহার বিজেপি ঘটাতে পারবে বলেই রূপা আশাবাদী।
বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি দলের রাজ্য নেতৃত্বকে পরামর্শ দিয়েছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে নামীদামি ব্যক্তিত্বকে নিজেদের সঙ্গে সামিল করতে হবে। সেইমতোই কাজ করছেন রাহুলবাবুরা। তবে তারকা-নির্ভর এই রাজনীতি নিয়ে বিজেপি-র মধ্যে সামান্য হলেও দ্বিমত আছে। রাজ্যের এক নেতার কথায়, “শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অন্যত্রও দলটা যেন বড্ড সেলিব্রিটি কেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে! এতে কি সত্যিই খুব কাজ হয়?”
দল হিসাবে বিজেপি অবশ্য কলাকুশলীদের নিয়েই কাজ এগোতে চাইছে। কলাকুশলীদের নিয়ে গঠিত বিজেপি-র ‘শতদলে চলচ্চিত্র মঞ্চ গান’ আজ, সোমবার টালিগঞ্জে কিশোরকুমারের মূর্তি থেকে উত্তমকুমারের মূর্তি পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। ওই সংগঠনের অভিযোগ, তৃণমূল জমানায় টলিউডে শাসক দলের অনুশাসন এঁটে বসেছে। কেবল তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ কলাকুশলীরা কাজ পাচ্ছেন। অন্যেরা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই বৈষম্যের প্রতিবাদেই ওই পদযাত্রা। রাহুলবাবু বলেন, “কলাকুশলীদের মধ্যে বিভাজন করে আসল প্রতিভা চেপে রাখছে সরকার। আমরা মেধার স্বীকৃতি চাই। গুণের কদর চাই। তাই শতদল পথে নামবে।”