মিছিলের জবাবে পাল্টা মিছিল! আরও মিছিল। সঙ্গে ভোট ভাগাভাগির অঙ্ক! বর্ধমানের বিস্ফোরণ-কাণ্ড উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতির ময়দানে।
মৌলবাদী কাজকর্ম এবং তার সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বর্ধমানে মিছিল করেছিল জেলা সিপিএম। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বর্ধমানে তৃণমূল পাল্টা মিছিল করেছে ‘সিপিএম-বিজেপি অশুভ আঁতাঁতে’র প্রতিবাদে! বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, তাদের সঙ্গে সিপিএমকে এক বন্ধনীতে দেখিয়ে তৃণমূলের এমন কর্মসূচির মধ্যে আসলে সংখ্যালঘু মন জয় করার চেষ্টাই স্পষ্ট! বিজেপি-ও আবার জানিয়েছে, খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তভার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে
আজ, বৃহস্পতিবার বর্ধমান-সহ গোটা রাজ্যে বিক্ষোভ মিছিল করবে তারা। বর্ধমানের মিছিলে থাকার কথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের। কলকাতায় একটি মিছিল হবে কলেজ স্কোয়ার থেকে।
মিছিল-পাল্টা মিছিলের সঙ্গে সঙ্গেই টানাপড়েন শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র ভূমিকা নিয়ে। বিজেপির দাবি, রাজ্য সরকার অবিলম্বে ঘটনার তদন্তভার এনআইএ-র হাতে তুলে দিক। একই দাবি সিপিএমেরও। আর তৃণমূলের বক্তব্য, রাজ্য প্রশাসনই সত্য উদঘাটনের জন্য উপযুক্ত। ঘটনা হল, এনআইএ এখনও পর্যন্ত অপেক্ষা করার নীতিই নিয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী, রাজ্যের সম্মতি ছাড়াও তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার এক্তিয়ার তাদের রয়েছে। এই বিষয়টিকেই যে যার মতো করে ব্যাখ্যা করছে রাজনৈতিক দলগুলি। তৃণমূলের ছাত্র-নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা যেমন দাবি করেছেন, “এনআইএ-র স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তদন্ত করার এক্তিয়ার রয়েছে। তা তারা করেনি মানে জেলা পুলিশ নিশ্চয়ই ভাল কাজ করছে!” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এই জায়গা থেকেই তৃণমূল-বিজেপি’র গড়াপেটার অভিযোগ তুলেছেন।
সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবুর প্রশ্ন, বিজেপি যখন কেন্দ্রীয় তদন্তের দাবি করছে, তখন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদীর সরকার এনআইএ-কে দিয়ে তদন্ত করাচ্ছে না কেন? স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এনআইএ-র তদন্তভার নেওয়ার এক্তিয়ার থাকলেও তারা এখনও তা না নেওয়ায় বিস্মিত সূর্যবাবু বুধবার আসানসোলে বলেছেন, “এই তদন্তের বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারউভয়েই গড়িমসি করছে। এর ফলে প্রমাণ লোপাট হয়ে যাচ্ছে! তৃণমূল ও বিজেপি এই তদন্ত নিয়ে গড়াপেটা খেলছে! আমরা দাবি তুলেছি, অবিলম্বে এই তদন্তের ভার এনআইএ-কে দেওয়া হোক।” বিজেপির তরফে রাহুলবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে তদন্তভার তুলে না দিলে পুজোর ছুটির পর আদালত খুললেই আইনি পথে যাওয়া হতে পারে।
ঘটনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগসূত্র ও তার অভিঘাতের প্রসঙ্গ টেনে সূর্যবাবুর আরও বক্তব্য, “এর সঙ্গে রাজ্যের নিরাপত্তা, প্রতিবেশী দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িয়ে। অথচ প্রকৃত তথ্য গোপনের চেষ্টা চলছে। রাজ্যের লুকোবার কী আছে বুঝছি না!” প্রায় একই বক্তব্য বিজেপিরও।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অবশ্য দাবি করেছেন, রাজ্য সরকারের লুকোনোর কিছু নেই। রাজ্য পুলিশ এবং প্রশাসন সঠিক ব্যবস্থাই নিয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন তিনি। বর্ধমানের টাউন হল থেকে রাজবাটী পর্যন্ত তৃণমূলের মিছিলের পরে এ দিন মুকুলবাবু বলেন, “আমাদের নির্দিষ্ট কিছু কর্মসূচি ছিল না। কিন্তু মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন, অপ্রাসঙ্গিক কিছু রাজনৈতিক দল কুৎসা রটাচ্ছে! সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আড়ালে লড়াই করতে হচ্ছে!” তবে ‘অপ্রাসঙ্গিক কিছু দলে’র কর্মসূচির পাল্টা মিছিল কেন তাঁদের করতে হল, সেই ব্যাখ্যা এ দিন মেলেনি! মুকুলবাবু বরং বলেছেন, “মহাষ্টমীর দিন বোমা বিস্ফোরণের একটা ঘটনা ঘটেছে। সেটা নিয়ে পুলিশ কি গুজব ছড়াবে, না নিয়ন্ত্রণ করবে? রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসন সঠিক ব্যবস্থাই নিয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে। তদন্ত চলছে।” তাঁর আরও মন্তব্য, “সিপিএম-বিজেপি’র কাছ থেকে কি আমাদের দেশপ্রেম শিখতে হবে? রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে অনেকেই বাংলার ক্ষতি করতে চাইবে। জাগ্রত জনগণ তার মোকাবিলা করবে!”
বিজেপির আবার পাল্টা অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে গিয়ে রাজ্য ও দেশের বিপদ ডেকে আনছে তৃণমূলই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন সাফ বলেছেন, তৃণমূলের তোষামোদের রাজনীতির ফলেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি অংশ এই রাজ্যকে ব্যবহার করছে। তাঁর মতে, সাধারণ মুসলিমদের অধিকাংশই ভাল মানুষ। কিন্তু সংখ্যালঘুদের মধ্যে ৩-৪%’এর কিছু কাজকর্মের জন্য সামগ্রিক ভাবে দেশের মুসলিম সমাজ সম্পর্কে ভিন্ন বার্তা যাচ্ছে। তৃণমূল এই ক্রিয়াকলাপকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। সাধারণ সংখ্যালঘুদের থেকে তৃণমূলকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়ে মুসলিমদের কাছে রাহুলবাবুর আবেদন, “আপনাদের সমাজে যে গুটিকয় মানুষ দেশ-বিরোধী কাজকর্মে যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করতে রাষ্ট্রকে সাহায্য করুন।”