দলে গণতন্ত্র নেই, এই অভিযোগ তুলেই সিপিএম ছেড়েছেন অসংখ্য কর্মী। সকলেই বলেছেন, গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নামে নেতৃত্বের ফরমান চাপিয়ে দেওয়া হয়। বারেবারে ওঠা এই অভিযোগের মোকাবিলায় এ বার সিপিএমের রাজ্য কমিটিতেই প্রস্তাব এল, সম্মেলনে নতুন কমিটি তৈরির সময় ভোটাভুটির পদ্ধতি মেনে চলা হোক।
দলের শীর্ষে কেন্দ্রীয় কমিটি বা নিচু তলায় লোকাল কমিটি, ভোটের মাধ্যমে তার সদস্য বেছে নেওয়ার সংস্থান সিপিএমের গঠনতন্ত্রে থাকলেও সম্মেলনের সময় গোষ্ঠী-বিবাদ এড়াতে দলের নেতৃত্ব প্রায় কখনওই ভোটাভুটি করতে দেন না। আগাম আলোচনার ভিত্তিতে নেতৃত্বের পছন্দের নামের প্যানেলই ‘সর্বসম্মতি’তে পাশ করানো হয়। এই রেওয়াজের মধ্যেই গলদ থাকছে বলে এ বার সরব হলেন দলের একাংশ। শুক্রবার আলিমুদ্দিনে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষ দিনে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তরবঙ্গের কয়েক জন নেতা প্রস্তাব দিয়েছেন, আসন্ন সম্মেলনে এই রেওয়াজ পাল্টানো হোক। তাঁদের প্রস্তাব, কোনও জেলা কমিটি হয়তো তৈরি হবে ৮০ জনের। সেখানে প্রয়োজনে ৯০-৯৫ জনের প্যানেল পেশ করা হোক। তার মধ্যে থেকে ৮০ জনকে বাছতে গেলে ভোটাভুটি করতেই হবে। তাতে দলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে ভুল ধারণা কাটাতে সুবিধা হবে।
দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের সামনে এমন প্রস্তাব উঠলেও তিনি নিজে বা রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, কেউই জবাবি ভাষণে মতামত দেননি। তবে দলের মহিলা সংগঠনের এক রাজ্য নেত্রী, দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের দুই জেলা সম্পাদক এমন প্রস্তাবে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এমন করতে গিয়ে সম্মেলন কক্ষে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে তার পরিণতি আরও খারাপ হবে! তাই ভেবেচিন্তেই এগোতে হবে।
কমিটি গঠনের পদ্ধতি নিয়ে মন্তব্য না করলেও বিমানবাবু এ দিন জবাবি বক্তৃতায় বলেছেন, বিভিন্ন কমিটির মাথায় যাঁদের তিন বারের মেয়াদ হয়ে গিয়েছে, তাঁদের সরতে হবে। তিন বারের বেশি সম্পাদক পদে থাকা যাবে না বলে গত পার্টি কংগ্রেসেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে তিন-চতুর্থাংশ সদস্যের সমর্থন নিয়ে ফের পদে ফেরা যাবে, এমন ধারাও গঠনতন্ত্রে রাখা হয়েছে। সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, বিমানবাবু বোঝাতে চেয়েছেন, ব্যতিক্রমের পথে যাওয়ার চেষ্টা কেউ না করলেই ভাল।
রাজ্য কমিটির বৈঠকে দু’দিন ধরে গণসংগঠন ও দলীয় সংগঠনের হাল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, গণসংগঠনগুলির মধ্যে কৃষক সভার অবস্থাই বেশি বেহাল। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “তরুণ প্রজন্মকে গুরুত্ব দিয়ে সব গণসংগঠনেই এখন সক্রিয়তা বাড়াতে হবে।” কারাট বৈঠকে বলেছেন, এ রাজ্যেও ক্ষেতমজুরদের জন্য পৃথক সংগঠন গড়া উচিত। তবে আসন্ন সম্মেলনেই বিশদে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।