বর্ষার খামখেয়ালে চাষির হাসি উধাও

যখন-তখন ঝমঝমিয়ে হাজির বৃষ্টি। আপাতদৃষ্টিতে ঘাটতি মিটেছে বর্ষার। কিন্তু সেটা শুধু খাতায়-কলমে। তাই খেতের খিদে মিটছে না। হাসিও নেই চাষির মুখে। মরসুমের মাঝামাঝি এসে বর্ষা কিছুটা সক্রিয় হয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। আবহবিজ্ঞানের খাতায় তার ঘাটতি ২০ শতাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৮
Share:

যখন-তখন ঝমঝমিয়ে হাজির বৃষ্টি। আপাতদৃষ্টিতে ঘাটতি মিটেছে বর্ষার। কিন্তু সেটা শুধু খাতায়-কলমে। তাই খেতের খিদে মিটছে না। হাসিও নেই চাষির মুখে।

Advertisement

মরসুমের মাঝামাঝি এসে বর্ষা কিছুটা সক্রিয় হয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। আবহবিজ্ঞানের খাতায় তার ঘাটতি ২০ শতাংশ। যেটা স্বাভাবিক বলেই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু বর্ষার ছন্দটাই যে উধাও! সেই ছন্দে ঐকতান নেই। আছে তুঘলকি খামখেয়াল। কোথাও ঝমঝমিয়ে বর্ষণ। কোথাও আবার বর্ষা মুখ ঘুরিয়ে থাকায় মাঠঘাট খটখটে। সেই জন্যই খরিফ চাষে সমস্যা হচ্ছে বলে কৃষি দফতর সূত্রের খবর। উত্তরবঙ্গেও বর্ষার দশা বেহাল। সেখানেও খরিফ চাষ মার খেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দক্ষিণবঙ্গে এ বার বর্ষার মতিগতি এমন অদ্ভুত হয়ে উঠল কেন?

Advertisement

আবহবিজ্ঞানীদের বক্তব্য, বর্ষায় বিস্তীর্ণ এলাকায় বৃষ্টির জন্য দরকার জোরালো নিম্নচাপ। চলতি মরসুমে বঙ্গোপসাগরে কয়েকটি ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ তৈরি হলেও তাদের জোর তেমন ছিল না। ফলে বৃষ্টিও সর্বত্র সমান হয়নি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, জোরালো নিম্নচাপ হলে বিরাট এলাকা জুড়ে ছোট ছোট মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়। পরে সেগুলো জোড়া লেগে গড়ে ওঠে বড় মেঘপুঞ্জ। তা থেকেই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বৃষ্টি হয়। কিন্তু এ বার নিম্নচাপ কমজোরি বলে ছোট ছোট মেঘপুঞ্জ থেকে স্থানীয় ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। “দক্ষিণ কলকাতায় ঝেঁপে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু ধর্মতলা শুকনো খটখটে! এটা এ বার প্রায়ই ঘটছে,” বলছেন গোকুলবাবু। ছোট মেঘপুঞ্জ বৃষ্টি ঝরানোর পরেই বেরিয়ে আসছে নীল আকাশ। এতই নীল, যেন অকালে হাজির শরৎ!

বর্ষার এমন মতিগতি বদলের ফলেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে কৃষিকর্তাদের একাংশের অভিমত। তাঁরা জানান, সরকারি হিসেবে ১৫ অগস্ট আমন ধানের চারা রোয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু আরও ১৫ দিন বাড়িয়ে অগস্টের শেষ পর্যন্ত চারা রোয়া হয়। চলতি বছরে ৪২ লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে কৃষি দফতর। গত বছরের তুলনায় যা ৭০ হাজার হেক্টর বেশি। অথচ রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য শুক্রবার বলেন, “এ-পর্যন্ত ৪৩.৬% জমিতে ধান রোয়া হয়েছে।”

দক্ষিণবঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঘাটতি-বর্ষার জন্য চাষের কাজে সমস্যা হচ্ছে। এক কৃষি-আবহবিদ জানান, আমন চাষের ক্ষেত্রে জুলাইয়ের বৃষ্টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। জুলাইয়ে যে-জেলায় ভাল বৃষ্টি হয়েছে, সেখানে খরিফ চাষ ভাল হবে। কিন্তু অনেক জেলা গত মাসে তেমন বৃষ্টি পায়নি বর্ষার খামখেয়ালের জন্যই। বর্ষার তুঘলকিপনা থেকে রেহাই পাচ্ছে না উত্তরবঙ্গও। কৃষি দফতরের একাংশের মতে, ছন্দছাড়া বর্ষার জন্য কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলাতেও চাষ মার খেতে পারে।

বর্ষণে ঘাটতি সত্ত্বেও এখনই পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা করছেন না কৃষিসচিব সুব্রত বিশ্বাস। তিনি বলেন, “দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টিপাত মোটামুটি স্বাভাবিক। পরিস্থিতিও স্বাভাবিক।” সুব্রতবাবু জানান, ১৫ অগস্ট খরিফ চাষের প্রথম মূল্যায়ন করবেন তাঁরা। দ্বিতীয় মূল্যায়ন হবে ৩১ অগস্ট। ৭ সেপ্টেম্বর তৃতীয় মূল্যায়নের পরে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। “৭ সেপ্টেম্বরের পরেও যদি অবস্থা খারাপ হয়, বিকল্প চাষের কথা ভাবা হবে,” বলছেন কৃষিসচিব।

সরকারি মতে, ধান রোয়ার জন্য আরও এক মাস সময় আছে। কৃষিকর্তাদের বক্তব্য, শেষ পর্বে বর্ষার মেজাজ দরাজ হয়ে উঠলে খরিফ চাষের পরিস্থিতি ভাল হতেই পারে। কিন্তু হাওয়া অফিস কি বৃষ্টির আশা দিতে পারছে? আবহবিজ্ঞানীরা জানান, উত্তরবঙ্গে এখনই ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে এ দিনই বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। সেটি জোর বাড়িয়ে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। “সম্ভাব্য ওই নিম্নচাপের প্রভাবে অগস্টের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গে ভাল বৃষ্টি হতে পারে,” পূর্বাভাস গোকুলবাবুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement