এখানে কাঁটালতায় একটি ফুলের দোলা। ওখানে বসন্ত, হাজার ফুলের মেলা!
গীতিকারের রাখা ফুলের জায়গায় যদি গাড়ি বসানো যায়, তা হলেই ব্যাপারটা বেশ পরিষ্কার! এ দিকে কষ্টেসৃষ্টে একটি নতুন গাড়ি। ও’দিকে থরে থরে নয়া গাড়ি! বাহন-নীতি থেকেই বোঝা যাচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে সিপিএম এবং বিজেপি-র অবস্থার ফারাক!
গাড়ি বদলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। তাঁর পুরনো বাহনের বদলে এসেছে একই ব্র্যান্ডের নতুন এসইউভি। পুরনো বেচে নতুন নেওয়ার সময় রাজ্য সম্পাদকের গাড়ির চেনা নম্বরের শেষ চার সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। দলের সর্বক্ষণের কর্মী, আলিমুদ্দিনের সর্ব ক্ষণের বাসিন্দা বিমানবাবুর নিজের গাড়ি কেনার প্রশ্ন অবশ্যই ওঠে না। গোটাটাই হয়েছে দলীয় ব্যবস্থাপনায়। যেমন হয়ে থাকে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বাকি সদস্যদের কারও কিন্তু বাহন-বদল ঘটেনি। এ দিকে যখন শুধু রাজ্য সম্পাদকের জন্য নয়া গাড়ি, বিজেপি তখন কী করছে? দলের সব জেলা সভাপতিকে নতুন গাড়ি দিয়েছে তারা। সঙ্গে চালক এবং নির্দিষ্ট কোটার তেল-খরচের ব্যবস্থা। জেলায় জেলায় বিজেপি এখনও সেই জায়গায় পৌঁছয়নি, যাতে নিজেরাই এত ব্যবস্থা করে ফেলতে পারে। তাই এগিয়ে এসেছে রাজ্য বিজেপি। তাদের ভাণ্ডারের সহায় আবার কেন্দ্রীয় বিজেপি। যারা এখন কেন্দ্রের শাসক দল। তাদের নীতি একটাই। জেলায় জেলায় যেখানে দরকার, পৌঁছে যেতে হবে। তবেই না রাজ্য রাজনীতিতে জমি মিলবে! অতএব, নাও গাড়ি এবং দৌড়োও!
বিজেপি-র এক রাজ্য নেতার কথায়, “দল থেকে আমাদের বলে দেওয়া হয়েছে, মানুষের কাছে প্রকৃত বিকল্প হয়ে উঠতে যা করণীয়, করতে হবে। খরচ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। যা দরকার, দলকে জানালে তারা বুঝে নেবে।” সংগঠন তৈরি এবং আন্দোলনের রূপরেখা গড়ে তোলার জন্য সম্প্রতি এক গুচ্ছ কমিটি গড়েছে রাজ্য বিজেপি। এই সব কমিটির নেতৃত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরাও ভাঁড়ার নিয়ে চাপমুক্ত।
এক কালে চাপ ছিল না সিপিএমেরও। যে জেলার যেমন ট্যাঁকের জোর, তারা তেমন ব্যবস্থা করে নিত। এখন সে দিন নেই। জমানো তহবিল অহেতুক খরচ করাও কোনও কাজের কথা নয়। চাপে পড়েই তাই কৃচ্ছতার মধ্যে দিয়ে চলতে হচ্ছে। গোটা রাজ্য নেতৃত্বকে নতুন গাড়ি দেওয়া এখন সম্ভব নয়। রাজ্য সম্পাদকের জন্যই আপাতত নতুন ব্যবস্থা হয়েছে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “পুরনো গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেশি। বিমানদার জন্য পুুরনো গাড়ি বদলে কম টাকায় নতুন গাড়ি নেওয়া হয়েছে।” চির কালই রাজ্যের এ প্রান্ত থেকে ও’প্রান্ত ছুটে বেড়াতে ভালবাসেন বিমানবাবু। এসইউভি-ই তাঁর জন্য উপযুক্ত। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অবশ্য সরকারি এবং বুলেটপ্রুফ অ্যাম্বাসাডর থেকে বেরোননি। সুজন চক্রবর্তীর মতো কিছু জেলা সম্পাদকও অ্যাম্বাসাডরে আছেন। আবার রবীন দেবের মতো কেউ কেউ অনেক আগে থেকেই এসইউভি-তে।
তৃণমূলে অবশ্য গাড়ি নিয়ে কোনও চাপই নেই! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কলকাতায় ছোট হ্যাচ-ব্যাকে চাপলেও প্রায় এমন হেন দেশি-বিদেশি গাড়ি নেই, যা শাসক দলের সাংসদ-বিধায়কদের গাড়িশালে নেই! প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও নামী ব্র্যান্ডের এসইউভি ব্যবহার করেন। তবে এঁদের সকলের থেকেই বিজেপি-র উত্থান অবিশ্বাস্য দ্রুততায়! ছুটে বেড়ানোর সুবিধার্থেই বিজেপি-র জেলা সভাপতিরা এসইউভি চাপছেন। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্য বলছেন, “সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ আসবেন বলে শিলিগুড়িতে আমাদের একটা বৈঠক ডাকা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বৈঠকটা শিলিগুড়িতে হয়নি। কিন্তু আমাদের জন্য হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে যা ব্যবস্থাপনা হয়েছিল, তাতেই বুঝেছিলাম এখানে ব্যাপারগুলো বাম দলের মতো নয়!” বাম দলগুলি সাধারণত আশেপাশের এলাকা থেকে সভায় লোক আনতে ম্যাটাডর বা মিনি ট্রাক জাতীয় গাড়ি ভাড়া নেয়। তাতে কম খরচে বেশি লোক আনা যায়। ব্রিগেডের মতো বড় কিছু হলে অন্য কথা। বিজেপি নেতাদের একাংশ বলছেন, তাঁদের নজর গোড়া থেকেই বাসের দিকে। তাতে খরচ একটু বেশি লাগে লাগুক কিন্তু কর্মী-সমর্থকেরা একটু আরাম তো পাবেন!
বিমানবাবুর নতুন গাড়ি অবশ্য সিপিএমের অন্দরেই অন্য একটি প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। সামনেই দলের সম্মেলন। তার আগেই নতুন বাহন মানে কি রাজ্য সম্পাদক পদে ফের বিমানবাবুরই আবাহনের ইঙ্গিত? দলের রাজ্য নেতৃত্ব সূত্রে বলা হচ্ছে, ওটা রাজ্য সম্পাদকের কোটা। ব্যক্তির নয়। তবু জল্পনা তাতে থামছে না। নতুন সম্পাদক এসেই কি নতুন বাহন পেতে পারতেন না, বলছেন কেউ কেউ! গাড়িই তাঁদের ভাবাচ্ছে! এ পাশে শঙ্কা, চিন্তার দিন ও পাশে সময় ভাবনা-বিহীন। বামে-রামে বাহনের বহরই তফাত বলে দিচ্ছে!