বিহারের কিসানগঞ্জে গণ্ডগোলের জেরে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ডে আটকে পড়ে একাধিক বাস। মঙ্গলবার অভিজিত্ পালের তোলা ছবি।
দুই গোষ্ঠীর গণ্ডগোলকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিহারের কিসানগঞ্জ এলাকা। জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধ হওয়ায় বহু বাস, ট্রেন আটকে পড়ে। চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। কয়েক জায়গায় রাস্তায় ট্রাক ও বাইকে আগুন লাগানো হয়। এনবিএসটিসি-র দু’টি বাসেও ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে প্রায় চার ঘণ্টা পরে অবরোধ ওঠে। কিসানগঞ্জে প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি হয়। বিকেলে এলাকায় কার্ফু জারি করা হয়। গাড়ি চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ির সঙ্গে বাসে বা ট্রেনে দুই দিনাজপুর, মালদহ-সহ দক্ষিণবঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিসানগঞ্জের উপর দিয়েই যেতে হয়। ওই শহরেই গোলমালে পরিবহণ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে। কিসানগঞ্জের জেলাশাসক অনিমেষ কুমার পরাশর বলেন, “দুপুর ১টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য কার্ফু জারি করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে।”
ইসলামপুরের আলুয়াবাড়ি রোড স্টেশনে আড়াই ঘণ্টা ধরে আটকে পড়ে বালুরঘাটগামী শিলিগুড়ি-বালুরঘাট ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। কিসানগঞ্জে আটকে পড়ে শিলিগুড়িগামী ক্যাপিটাল এক্সপ্রেসও। ডাউন রাজধানী এক্সপ্রেসও কিছু ক্ষণের জন্য আলুয়াবাড়ি স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে। হাটোয়ারে দাড়িয়ে পড়ে নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেস। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম অরুণ কুমার শর্মা জানান, চার ঘণ্টা রেল লাইনে অবরোধ ছিল। কয়েকটি ট্রেন আটকে পড়ে। এতে ট্রেনগুলির সময়সূচির পরিবর্তন হয়। তবে অবরোধ ওঠার দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা হয়েছে।
ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের যাত্রী অতীন্দ্র গুপ্ত বলেন, “দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে স্টেশন বসে থাকতে হয়েছে। বাইরে থেকে গোলমালের খবরও পাচ্ছিলাম। খুব উদ্বেগে কেটেছে ওই সময়টা।” ইসলামপুরের বাসিন্দা মহম্মদ রশিদ ব্যক্তিগত কাজে ওই ট্রেনেই ডালখোলা যাচ্ছিলেন। অবরোধে আটকে পড়ে তিনি বলেন, “কেউ ঠিক মতো জানাতে পারছিলেন না কখন ট্রেন ছাড়বে। দেরি হওয়ায় খুব ক্ষতি হয়ে গেল।”
জাতীয় সড়ক অবরোধের জেরে এনবিএসটিসি-র ৭টি বাস আটকে পড়ে। মালদহ ও জলপাইগুড়িগামী দু’টি বাসে ভাঙচুরও করা হয়। গোলমালের পরেই ইসলামপুরের পুর বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী-সহ ঢুকিয়ে রাখা হয় রায়গঞ্জ, মালদহ, করদহ, রাঁচি, বুনিয়াদপুরগামী ১২টি বাস। তিন ঘণ্টা বাসগুলি সেখানে ছিল। পরে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও মালবাজার ডিপোতে ৪টি বাস ফেরত পাঠানো হয়। যাত্রীদের বাকি ৮টি বাসে তুলে গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
কুশুমুন্ডির বাসিন্দা, বহরমপুরের একটি কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র জ্যোতিষ রায় জানান, ইসলামপুর স্ট্যান্ডে থাকার সময়ে একের পর এক গোলমালের খবর পাচ্ছিলেন তাঁরা। পুজোর ছুটির পর ফেরার পথে এমন দুর্ভোগ, আতঙ্কে পড়তে হবে বলে ভাবতে পারেননি।