চোরাপথে সীমাম্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকে ধর্ষিতা হলেন বাংলাদেশের বাসিন্দা দুই বোন। যে নৌকোয় করে তাঁদের আনা হয়েছিল, সেই নৌকোর মাঝি ও তার এক শাগরেদই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন ওই দুই তরুণী।
পুলিশ জানায়, বছর আঠারো-কুড়ির দুই বোনের বাড়ি চট্টগ্রামে। শনিবার সন্ধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার খেদাপাড়া সীমান্ত দিয়ে তাঁদের আনা হয়েছিল এ পারে। অভিযোগ, নদীর ধারেই ধর্ষণ করা হয় দু’জনকে। বিধ্বস্ত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিএসএফ। রবিবার তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। আপাতত একটি হোমে রাখা হয়েছে দু’জনকে। বনগাঁর এসডিপিও রূপান্তর সেনগুপ্ত বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে অভিযুক্তেরা বাংলাদেশি। কী ভাবে তাদের খোঁজ মিলতে পারে, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।”
সম্প্রতি এই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক ধর্ষণ, নারী নিগ্রহের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন। মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সীমান্ত এলাকায় সমস্যার ধরন আলাদা। একাধিক নারী পাচার চক্র সক্রিয় এই সব এলাকায়। কাজের লোভ দেখিয়ে তারা প্রায়ই চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে মেয়েদের এ দেশে নিয়ে এসে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেয়। অনুপ্রবেশকারী মহিলাদের উপরে নানা অত্যাচারের ঘটনা ঘটে বলে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিএসএফের জওয়ানদের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশি মহিলাদের নিগ্রহের অভিযোগ আছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটনা থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায় না। গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে ওই মহিলারাও মুখ খোলেন না। এ ধরনের সমস্যার মোকাবিলা কী ভাবে সম্ভব, তা ভাবাচ্ছে জেলার পুলিশ কর্তাদেরও। শনিবারের ঘটনায় বাংলাদেশের ওই দুই বোন আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের খপ্পরে পড়তে চলেছিল বলেই তাঁদের অনুমান।
পুলিশকে দুই বোন জানিয়েছেন, তাঁদের বাবা নেই। মা অসুস্থ। এক কাকা মুম্বইয়ের বিউটি পার্লারে কাজের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মুম্বইয়ে তাঁদের এক আত্মীয়ও রয়েছেন। কাকার প্রস্তাবে রাজি যান দু’জন। সীমান্ত পেরিয়ে মুম্বই যাওয়ার বন্দোবস্ত ওই কাকাই করে দেন। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ দুই বোন বাংলাদেশের দৌলতপুর সীমান্তে আসেন। এ পারে আসার জন্য একটি নৌকায় উঠিয়ে দিয়ে চলে যায় দালালেরা। এ পারে এসে কার সঙ্গে দেখা করতে হবে, তা নিয়ে অবশ্য বিশেষ কিছু জানতেন না দু’জন। তরুণীরা জানান, নৌকায় মাঝি ও তার শাগরেদ এক যুবক ছিল। ইছামতীর পাড়ে খেদাপাড়া সীমান্তে নেমে তাঁদের সঙ্গে খানিক দূর পর্যন্ত এগোয় ওই দু’জন। অভিযোগ, সেখানে খোলা মাঠে দুই বোনকে ধর্ষণ করে মাঝি ও তার শাগরেদ পালায় বাংলাদেশের দিকে।
সন্ধ্যায় কাঁটাতারের গেট খুলে ভিতরে টহল দিতে গিয়ে দুইবোনকে পড়ে থাকতে দেখেন বিএসএফ জওয়ানেরা। তাঁদের গায়ে কাদা মাখা ছিল। জামাকাপড় ছেঁড়া। দু’জনকে ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে রেখে দু’জনের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। রবিবার সকালে তাঁদের গাইঘাটা পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিএসএফ।