বিমানের বক্তৃতার মাঝে ফের বৈঠক ছাড়লেন বুদ্ধদেব

বেশ কিছু জেলার নেতৃত্ব চান, আর ঘরে বসে জল মাপা নয়। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি জঙ্গি আন্দোলনে যাওয়ার সবুজ সঙ্কেত দিক আলিমুদ্দিন। কিন্তু নিচু তলায় সংগঠনের হাল বিচার করে এখনই পুরোপুরি সংঘাতের রাস্তায় যেতে রাজি নন বিমান বসু। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই দলের রাজ্য সম্পাদকের ভাষণের মাঝে ফের রাজ্য কমিটির বৈঠক ছেড়ে উঠে গেলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৮
Share:

বেশ কিছু জেলার নেতৃত্ব চান, আর ঘরে বসে জল মাপা নয়। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি জঙ্গি আন্দোলনে যাওয়ার সবুজ সঙ্কেত দিক আলিমুদ্দিন। কিন্তু নিচু তলায় সংগঠনের হাল বিচার করে এখনই পুরোপুরি সংঘাতের রাস্তায় যেতে রাজি নন বিমান বসু। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই দলের রাজ্য সম্পাদকের ভাষণের মাঝে ফের রাজ্য কমিটির বৈঠক ছেড়ে উঠে গেলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য! এক বছরের ব্যবধানে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার।

Advertisement

নির্বাচনী বিপর্যয়ের জেরে সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে একাধিক বার তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে স্বয়ং বুদ্ধবাবুকে। কিন্তু সেই সময় বৈঠক ছেড়ে যাননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। যে দু’বার তাঁকে উঠে যেতে দেখলেন দলের রাজ্য কমিটির সদস্যেরা, দু’বারই বৈঠকে তখন বক্তৃতা করছিলেন রাজ্য সম্পাদক! দলের আসন্ন সম্মেলন-পর্বের আগে বুধবারের ঘটনা বুদ্ধ-বিমানের সমীকরণ নিয়ে দলের মধ্যে ফের জল্পনা উস্কে দিয়েছে। আর বিভ্রান্তি কাটাতে না পেরে দলের মধ্যেই বিরাগভাজন হয়েছেন বিমানবাবু।

আলিমুদ্দিনে এ দিন রাজ্য কমিটির বৈঠকের মূল আলোচ্য ছিল সিপিএমের আসন্ন সম্মেলন। আগামী বছর মার্চে রাজ্য সম্মেলন হবে এবং সেই উপলক্ষে ব্রিগেড সমাবেশের জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেও তার নির্ঘণ্ট জানাতে পারেননি বিমানবাবু। যদিও বৈঠকে তাঁর প্রারম্ভিক ভাষণই ছিল প্রায় সওয়া এক ঘণ্টার! সেই ভাষণেই বিমানবাবু জানান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, নারী নিগ্রহ, সাম্প্রদায়িকতার মতো বিষয়ে আগামী ২-১০ সেপ্টেম্বর রাজ্য জুড়ে প্রচার চালাবে বামফ্রন্ট। তার পরে ১১ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর হবে প্রত্যক্ষ আন্দোলন। এই ‘প্রত্যক্ষ আন্দোলন’ মানে কী, লম্বা ভাষণেও তা স্পষ্ট করতে না-পারায় বৈঠকে সরব হন একাধিক জেলার নেতা। আর জবাবি বক্তৃতায় বিমানবাবু শুরু করেন পাঁচের দশকের ট্রামভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনের কাহিনি দিয়ে! সিপিএম সূত্রের খবর, তখনই চার তলার সভাকক্ষ ছেড়ে নীচে নেমে যান বুদ্ধবাবু। যদিও রাত অবধি তিনি আলিমুদ্দিনেই ছিলেন।

Advertisement

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুই শ্রমিক নেতা, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের দুই জেলা সম্পাদক, আরও দুই জেলার দুই বর্ষীয়ান নেতা এ দিন বৈঠকে বলেন, প্রত্যক্ষ আন্দোলন বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, মানুষকে জানানো দরকার। নয়তো গোটা বিষয়ে মানুষকে আকর্ষণ করা মুশকিল। দলের বৈঠকেই যদি প্রত্যক্ষ আন্দোলনের ব্যাখ্যা দেওয়া না হয়, বাইরে তা হলে কী বলা হবে? দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক প্রাক্তন সাংসদ জানতে চান, সত্যিকারের প্রত্যক্ষ আন্দোলন হচ্ছে কোথায়? সারদা-কাণ্ডে এত কিছু হচ্ছে অথচ সিপিএম এখনও ঘরে বসে! শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জেলে যাওয়ার পরে কি সিপিএমের ঘুম ভাঙবে? ভোটারেরা তত দিন বসে থাকবেন কেন? উত্তরবঙ্গের এক জেলা সম্পাদক বলেন, এনসেফ্যালাইটিস থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বজনপোষণ এত হাতিয়ার আছে। তাঁদের অনুমোদন দিলে তাঁরা রাস্তায় নেমে জঙ্গি আন্দোলন করবেন। বর্ধমানে নানা প্রকল্পে মজুরি বকেয়া আছে ২৭১ কোটি টাকা। তা নিয়েও জোরদার আন্দোলন করা যায়।

বিমানবাবুর জবাবি বক্তৃতা শুরুর সময়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই প্রাক্তন সাংসদ বৈঠকে ছিলেন না। রাজ্য সম্পাদক মন্তব্য করেন, ভারী ভারী কথা বলে তার পরে উত্তর শোনার ধৈর্য অনেকের নেই! তিনি সচরাচর বড় বক্তৃতা করেন না। এ বার কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে একটু সময় লেগে গিয়েছে বলেই বা এত অধৈর্যের কী আছে! রাজ্য সম্পাদকের এমন সব মন্তব্যের সময়েই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান বুদ্ধবাবু। তার পরে বিমানবাবু আরও যা বলেন, তার নির্যাস: সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাওয়ার মতো সাংগঠনিক পরিস্থিতি এখনও আসেনি। যাঁরা ভাবছেন এক লাফে গাছে ওঠা যাবে, তাঁরা ভুল করছেন!

এ সব বিতর্কের মধ্যেই এ দিনের রাজ্য কমিটিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অক্টোবরের শেষ দিক থেকে নিচু তলার সম্মেলন শুরু হবে। আগের বার বহু শাখা কমিটির সম্মেলন হয়নি। এ বার তা একেবারেই হচ্ছে না। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “সন্ত্রাসের আবহ এবং লোকাভাব বা কোথাও কোথাও নিষ্ক্রিয়তার কারণে শাখা কমিটিগুলি সংশ্লিষ্ট লোকাল কমিটির বিশেষ অধিবেশনে অংশ নেবে।” সম্মেলনের এই প্রক্রিয়া জানাতে গিয়েই বিমানবাবু এ দিন হঠাৎ ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তিন বারের সম্পাদকেরা আর পদে থাকতে পারবেন না ঠিকই। কিন্তু তিন বার মানে তিন বারের পূর্ণ মেয়াদ। যা বিমানবাবুর ক্ষেত্রে এখনও হয়নি!

তাই এই কথায় কোনও ইঙ্গিত আছে কি না, খটকা লেগেছে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement