ক’দিন আগেই জেঠিমা সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন ‘থ্রি-ফোর পাশ, বুদ্ধি নেই’। সেই জেঠিমা মমতাবালার নামই এ বার নিজেদের কমিটিতে ঢুকিয়ে ‘সহ-প্রধান উপদেষ্টা’ হিসেবে ঘোষণা করলেন তৃণমূলের মতুয়া বিধায়ক মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের ছেলে সুব্রত।
বনগাঁর সাংসদ তথা মতুয়া সঙ্ঘাধিপতি কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুর পরে ক্ষমতার রাশ কার হাতে যাবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে ঠাকুরবাড়ি। কপিলকৃষ্ণের স্ত্রী ১৫১ জনের একটি কমিটি গঠন করেছেন। আবার কপিলের ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণের তরফে সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের ২৫১ জনের পৃথক কমিটি গড়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়িতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত ঠাকুর জানান, তাঁদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে মমতাদেবীকে সহ প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে। একই পদ দেওয়া হয়েছে তাঁর মা ছবি ঠাকুরকেও।
ঘটনা হল, এর আগে কখনও মতুয়াদের কমিটিতে ওই পদ ছিল না। হঠাৎ নতুন পদ কেন? সুব্রতর দাবি, “এই পদের প্রয়োজন আছে। অতীতে যাঁরা মতুয়া মহাসঙ্ঘ পরিচালনা করেছেন, তাঁরা সঠিক ভাবে চালাতে পারেননি বলেই আগে ওই পদ তৈরি করা হয়নি।’’ মমতাবালা নিজে অন্য কমিটি গড়া সত্ত্বেও তাঁকে এই পদে বসানো হল কেন? সুব্রতর ব্যাখ্যা, “বাড়ির বয়স্ক মানুষ হিসাবে সম্মান জানাতেই ওই পদে জেঠিমাকে নেওয়া হয়েছে।” যা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছেন মমতাবালা নিজেই। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এত দিন তো আমার কোনও সম্মান ছিল না! হঠাৎ কেন আমাকে না জানিয়ে সম্মান দেখানো হচ্ছে, জানি না।”
মতুয়াদেরই একাংশ অবশ্য বিশ্বাস করছেন না যে শুধুই সম্মান জানাতে মমতাবালাকে এই পদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মতে, এ হেন সিদ্ধান্তের পিছনে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। রাজনৈতিক ও আর্থিক ক্ষমতার দখল নিয়ে দুই শরিকের কোন্দল যে মতুয়াভক্তদের একটা বড় অংশ ভাল চোখে দেখছেন না, তা সুব্রতদের কাছে পরিষ্কার। আবার এমন একটা অংশ রয়েছে, যাঁরা দুই শরিকের কারও প্রতিই অনুগত নয়। দুইয়ে মিলিয়ে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে যে ফাটল ধরছে তাতে তৃণমূল-সহ সব রাজনৈতিক দলই আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। তৃণমূল ইতিমধ্যে ঠাকুরবাড়ির দুই তরফ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেও শুরু করেছে।
অথচ কপিলকৃষ্ণের শূন্য আসনে তৃণমূলের টিকিট পেতে আগ্রহী মমতাবালা এবং সুব্রত দু’জনেই। কিন্তু নানা ঘটনায় তাঁরা বুঝতে পারছেন, ঠাকুর পরিবারের বাইরে থেকেও কেউ টিকিট পেতে পারেন। বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ গোবিন্দ নস্করের নাম হঠাৎই উঠে এসেছে আলোচনায়। মতুয়াদের একাংশের ধারণা, এই পরিস্থিতিতে সুব্রতরা মতুয়াভক্ত ও তৃণমূল নেতৃত্বকে বার্তা দিতে চাইছেন যে, তাঁরা মমতাদেবীকে সঙ্গে নিয়েই চলতে চান। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, তারা এখন ওই দুই শরিকের কোন্দলে জড়াতে চাইছে না। জেলা তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতার কথায়, ঠাকুর পরিবারের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা কমছে।
মমতাবালা অবশ্য সুব্রতদের পাতা ‘ফাঁদে’ পা দিতে চাইছেন না। কেননা তিনি ভাল করেই জানেন, সুব্রতদের কমিটিতে নাম ঢোকা মানে তাঁর নিজের গড়া কমিটি অর্থহীন হয়ে যায়। তাই বিষয়টি জানা মাত্রই তিনি বলেন, “যাঁদের কাছে মতুয়া ভক্তদের কোনও সম্মান নেই তাঁদের কাছ থেকে ওই পদ পাওয়াকে আমি অসম্মান বলেই মনে করছি।” তিনি জানান, তাঁরা যে ১৫১ জনের কমিটি গড়েছেন, শীঘ্রই ভক্তরা তাদের মধ্যে থেকে কার্যকরী কমিটি তৈরি করবেন। সুব্রতও তাঁদের পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করে ফেলেছেন। তিনি জানান, আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ঠাকুরবাড়ির নাটমন্দিরে মতুয়াভক্তেরা নানা দাবিতে অনশন শুরু করবেন। প্রধান দাবি হবে পূর্ববঙ্গ থেকে এদেশে আসা হিন্দু, মতুয়া, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ উদ্বাস্তুদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দান, ২০০৩ সালের নাগরিক আইন সংশোধন।