আগে ছিল জোড়া ফুল। লোকসভা ভোটের পরে তার উপরে যোগ হয়েছে আরও এক ফুল! ভোটে বিপর্যয়ের পরে আগামী দিনে রাজ্যে জোড়া ফুল ও পদ্মফুলের শক্তির মোকাবিলায় কী করণীয়, রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জানতে চাইছে সিপিএমের জেলা কমিটিগুলি।
জেলা স্তরে লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের প্রাথমিক বিশ্লেষণ করে জেলা কমিটিগুলির রিপোর্ট এসে পৌঁছেছে আলিমুদ্দিনে। বিজেপি-ঝড়েই যে রাজ্যের সর্বত্র বামেদের বেহাল দশা, মেনে নেওয়া হয়েছে প্রায় সব জেলার রিপোর্টেই। রাজ্যের ৪২টি আসনেই এ বার বামেদের ভোট কমেছে। তার মধ্যে বেশ কিছু আসনে বিজেপি ভাল ভোট টেনে না নিলে বামেরা তৃণমূলকে টপকে যেতে পারত বলে ফলাফলের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে। জেলা নেতৃত্বের বক্তব্য, ভোটে ভরাডুবির পরে বাম কর্মী-সমর্থকেরা মনোবল হারিয়েছেন। লাগাতার আক্রমণ চালাচ্ছে তৃণমূল। পিঠ বাঁচানোর জন্য বহু নিচু তলার কর্মী-সমর্থক গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাচ্ছেন। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল এবং কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি জোড়া বিপদের সঙ্গে এঁটে ওঠার পথ খুঁজছেন সিপিএম-সহ বাম নেতৃত্ব।
লোকসভায় ভরাডুবির ময়না তদন্ত করতে জেলা কমিটিগুলির এই প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে নিয়েই আগামী ২-৩ জুন বৈঠকে বসছে সিপিএমের রাজ্য কমিটি। বিজেপি-প্রসঙ্গ সেখানে অবধারিত ভাবেই উঠতে চলেছে। কিছু জেলার রিপোর্টে মত দেওয়া হয়েছে, লোকসভা ভোটের প্রচারে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যত ধারালো আক্রমণ করা হয়েছে, বিজেপি সম্পর্কে তেমন করা হয়নি। বিজেপির ভোট বাড়বে ধরে নেওয়া হলেও তারা যে বাম ভোটেই ভাগ বসাবে, এটা হিসাবের মধ্যেই ছিল না। কিছু জেলা কমিটি আবার বলেছে, প্রচারে নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপির বিরুদ্ধে বলা হয়েছিল যথেষ্টই। কিন্তু বিজেপিকে ঠেকাতে মানুষ বামেদের বদলে তৃণমূলের উপরে ভরসা করেছেন। সব বাম দলই এখন আশঙ্কা করছেন, তাঁদের আন্দোলন যত ম্রিয়মান হবে, বিরোধী পরিসর ততই দখল করবে বিজেপি।
বিজেপির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে সরব থাকা সত্ত্বেও মানুষ কেন তাঁদের বিশ্বাস করলেন না, আলিমুদ্দিনকেও সেটা ভাবাচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা আর উমানাথ ও রাজ্য নেতা অমিতাভ বসুর স্মরণসভায় বুধবার সূর্যকান্ত মিশ্রের কথাতেই তার ইঙ্গিত ধরা পড়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সূর্যবাবু এ দিনই পরামর্শ দিয়েছেন, বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও কর্মীদের ময়দানে নামতে হবে। ভবিষ্যতের বিপদ আঁচ করে বাম শিবির থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ জোটের দাবিও উঠছে। এক বাম নেতার কথায়, “এখন আমাদের উচিত, রাজ্যে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ জোট গড়ার ডাক দেওয়া।” ভোটের ফলের নিরিখে রাজ্যে এখন মুখোমুখি শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি। সেই জায়গা থেকেই জোট গড়ার ‘বাস্তবতা’ দেখছে বাম শিবিরের একাংশ।
স্মরণসভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু লোকসভা ভোটের ফল সম্পর্কে বলেন, “এই অবস্থা অতীতে কখনও হয়নি। এখন নিজের স্বার্থ না দেখে পার্টির স্বার্থ দেখতে হবে।” বিমানবাবু বলেন, “বাংলার রাজনীতিতে এখন টার্নিং পয়েন্ট। বেশি করে শ্রমজীবী মানুষকে সংগঠিত করার কর্মসূচি নিতে হবে।”