স্কুলে ঢুকতে না পেরে গাড়িতে উঠছেন তপন ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র
হাইকোর্ট তাঁকে স্কুলে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। সেই নির্দেশ-সহ বুধবার পুলিশি প্রহরা নিয়ে স্কুলে গেলেও ছাত্র-বিক্ষোভের জেরে স্কুলে ঢুকতে পারলেন না গড়বেতার সিপিএম নেতা তপন ঘোষ।
গড়বেতার মঙ্গলাপোতা হাইস্কুলে এ দিনের বিক্ষোভের পিছনে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য তপনবাবু অবশ্য তৃণমূলের ‘ইন্ধন’ দেখতে পাচ্ছেন! তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূলই ছাত্রদের দিয়ে এ দিন বিক্ষোভ করিয়েছে। ওদের নেতারা চান না, আমি স্কুলে যাই!” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষের দাবি, “ঘটনার কথা শুনেছি। ছাত্ররাই মনে করছে, উনি (তপনবাবু) স্কুলে গিয়ে ফের অশান্তি সৃষ্টি করবেন! তাই বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তৃণমূলকে দোষারোপ করে কী লাভ?”
এক সময় ছোট আঙারিয়া মামলায় নাম জড়িয়েছিল এই সিপিএম নেতার। ২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি গড়বেতার ছোট আঙারিয়া গ্রামে বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণে বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় সিপিএম নেতা তপন ঘোষ, সুকুর আলি-সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। প্রথমে রাজ্য পুলিশ তদন্ত করলেও পরে হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। বাম-জমানায় ছোট আঙারিয়া মামলায় জেলা আদালত থেকে বেকসুর খালাস পান তিনি। তখন তাঁকে ‘দলের সম্পদ’ বলে অভিহিত করেছিলেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজ্যে পালাবদলের পর অবশ্য নতুন প্রাণ পায় গড়বেতা এলাকার এই মামলা। নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলাতেও তপনবাবুর নাম জড়ায়। ওই মামলায় দীর্ঘদিন ধরে ‘ফেরার’ থাকার পরে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে মাস কয়েক জেল হেফাজতে ছিলেন। পরে সমস্ত
মামলা থেকে জামিন মেলার পর স্কুলে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেন মঙ্গলাপোতা হাইস্কুলের শিক্ষক তপনবাবু।
নিরাপত্তা চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সিপিএমের এই শিক্ষক-নেতা। গত সেপ্টেম্বরে হাইকোর্ট তপনবাবুকে স্কুলে যাওয়ার জন্য পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। বুধবার তপনবাবু বলেন, “আগেও বেশ কয়েকবার আমাকে স্কুলে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। যতবারই স্কুলকে জানিয়েছি কাজে যোগ দিতে যাব, ততবার স্কুল ছুটি দেওয়া হয়েছে। বুধবার পরীক্ষা ছিল। তাই স্কুল-কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করতে পারেননি।” এ দিন প্রথমে গড়বেতা থানায় গিয়ে ওসি হীরক বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করেন তপনবাবু। নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদনপত্র জমা দেন। সেই মতো তাঁকে স্কুলে যাওয়ার জন্য পুলিশি প্রহরাও দেওয়া হয়। স্কুলে পৌঁছে তপনবাবু দেখেন, গেটে ছাত্র-বিক্ষোভ চলছে। ফলে, স্কুল গেটের সামনে থেকেই ফিরে আসতে হয় তাঁকে। তপনবাবুর অভিযোগ, “তৃণমূলই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে পুলিশেরও যোগসাজশ রয়েছে।” ছাত্র-বিক্ষোভ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিভাস মাইতি। আর তৃণমূল নেতা প্রদ্যোত্বাবুর মন্তব্য, “কেউই চায় না এলাকায় অশান্তি হোক। শুনেছি বিক্ষোভরত ছাত্রদের হাতে প্ল্যাকার্ডও ছিল। কেউ যদি ছাত্র-বিক্ষোভের জেরে স্কুলে ঢুকতে না পারেন সেখানে তৃণমূল কী করবে!”