পুলিশ রাখতে পরীক্ষা স্থগিত স্কুলে

ক্লাসঘরের দখল নিয়েছে উর্দিধারী পুলিশ। তাই পিছিয়ে দেওয়া হল স্কুলের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছ’টি পরীক্ষা। একসময়ে রাজ্যের মাওবাদী অধ্যুষিত জেলাগুলিতে এমন অভিযোগ উঠলেও, এ বার ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি শহরে। ভোট বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি সভা। তাই জেলায় আনা হয়েছে বাড়তি পুলিশ। আর তাদের জন্য জায়গা ছাড়তে হওয়ায় সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেল জলপাইগুড়ির ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউশনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২১
Share:

স্কুলের দখল নিয়েছে পুলিশ। বাইরেই জমা করা রয়েছে বেঞ্চ।

ক্লাসঘরের দখল নিয়েছে উর্দিধারী পুলিশ। তাই পিছিয়ে দেওয়া হল স্কুলের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছ’টি পরীক্ষা। একসময়ে রাজ্যের মাওবাদী অধ্যুষিত জেলাগুলিতে এমন অভিযোগ উঠলেও, এ বার ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি শহরে।

Advertisement

ভোট বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি সভা। তাই জেলায় আনা হয়েছে বাড়তি পুলিশ। আর তাদের জন্য জায়গা ছাড়তে হওয়ায় সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেল জলপাইগুড়ির ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউশনে। অন্যান্য সরকারি ভবন থাকতে যে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে, সেখানেই কেন স্কুলে পুলিশ রাখার ব্যবস্থা করা হল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

সোমবার ক্লাসে নোটিশ দিয়ে মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণি মিলিয়ে মোট ছ’টি বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। আগামী ৫ ডিসেম্বরের পর থেকে ফের পরীক্ষাগুলি নেওয়া হবে বলে স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে। তবে ঘটনাটি নিয়ে জেলা পুলিশ কর্তারা মুখ খোলেননি। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “ওই বিষয়ে কোনও কথা বলব না।” তবে পুলিশ থাকার জন্য বার্ষিক পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনা শুনে অবাক হয়েছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) স্বপন সামন্তও। তিনি বলেন, “এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। ঠিক কী হয়েছে সেটা জানতে হবে।”

Advertisement

বর্তমানে ফণীন্দ্রদেব স্কুলে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। সেই সঙ্গে চলছে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষাও। বেশ কয়েক মাস আগেই স্কুলের পরীক্ষাসূচি স্থির হয়ে গিয়েছিল। তখন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সফরের কথা কর্তৃপক্ষ জানতেন না। সপ্তাহখানেক আগে মুখ্যমন্ত্রীর চূড়ান্ত সফরসূচি জেলা প্রশাসনের হাতে আসে, তারপরেই শুরু হয় পুলিশের তত্‌পরতা। আজ, বুধবার জলপাইগুড়ি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি সভা রয়েছে। সেই সভায় যোগ দিতে মঙ্গলবার রাতেই জলপাইগুড়ি চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই সফরের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতেই বাড়তি পুলিশ বাহিনী শহরে নিয়ে আসা হয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধেতেই এই স্কুলে ঢুকে পড়েছে বাহিনী। স্কুলের চারটি ঘরে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। সেই ঘরগুলিতেই চলছিল সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা, সে কারণেই কোপ পড়েছে ওই পরীক্ষায়। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৮ নভেম্বর পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে সব পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দু’দিন ধরে চারশো পুলিশ কর্মীর থাকার ব্যবস্থা করতে গিয়ে সেই নির্ঘণ্ট বদলে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, প্রশাসনের চাপের মুখে পরেই স্কুল পরিচালন সমিতি ক্লাস ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

স্কুল পরিচালন সমিতি বাম সমর্থকদের দখলে রয়েছে। পরিচালন সমিতির সভাপতি স্বস্তিশোভন চক্রবর্তী বলেন, “সরকারি নির্দেশ আমরা মেনে চলতে বাধ্য। এর বেশি কিছু বলার নেই।” স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ধীরেন ঝম্পটি বলেন, “স্কুলে পুলিশ থাকবে। জায়গার অভাব। তাই দু’টি ক্লাসের পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হয়েছে। তবে মাধ্যমিকের টেস্ট সহ অন্য শ্রেণির পরীক্ষা চলবে।”

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ি পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে আনন্দ মডেল হাইস্কুল ও জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলেও পুলিশ ক্যাম্প করা হলেও সেখানে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়নি। ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউশনের পরিচালন সমিতির সভাপতি বলেন, “জেলা স্কুলে অনেক জায়গা। তাই ওঁরা ব্যবস্থা করে নিতে পেরেছে। আমাদের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়নি।”

এ বিষয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। জলপাইগুড়ির কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য এত পুলিশের দরকার হল যে স্কুলের পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়ে তাঁদের রাখার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।” এসএফআইর রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ দে বলেন, “চাপ সৃষ্টি করেই যে পুলিশের থাকার জন্য ক্লাসঘর নেওয়া হয়েছে সেটা স্পষ্ট। এমন ঘটনা জলপাইগুড়িতে আগে অন্তত হয়নি। শহরে সাতটি কলেজ রয়েছে, সেখানেও পুলিশ রাখা যেত।” প্রতিবাদে বুধবার জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে প্রদীপ জানিয়েছেন। বিজেপির জেলা সম্পাদক বাপি গোস্বামীর কটাক্ষ, “তৃণমূল জামানায় শিক্ষার গুরুত্ব কতটা, তা এই ঘটনাতেই বেশ বোঝা যাচ্ছে।”

স্কুলে পুলিশ বাহিনী রাখার বিষয়ে শাসক দলের জেলা নেতৃত্ব জানতেন না বলে দাবি করেছেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “স্কুলে কেন পুলিশ রাখা হবে, সেটা বুঝতে পারছি না। খোঁজ নেব।”

সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement